পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] নলিনী কহিল, “তবে আমি উকুন তৈরি ক’রে দিই, আপনি সকাল-সকাল রাধুন—দুদিন খাননি !” . * এই বলিয়া সে বাড়ীর ভিতর হইতে একখানি খন্ত লইয়া আসিল ; এবং মাটি খুড়িয়া উপরে তিনদিকে তিনখানি ইট বসাইয়। অবিলম্বে একটি উচুন তৈরি করিয়া দিল । তা’র পর একখানি থালায় করিয়া চা’ল, ডাল, নে, তেল, দুটি লঙ্ক, চারিটি আলু, একটু হলুদের কড়া ও একঘড়ী জল আনিয়া দিল । রাধিবার জন্য একটি পিতলের ডেকু আনিয়া দিলে কানাইলাল বলিল,“একটা মেটে হাড়ি পেলে ভালো হয়। এসব আবার মাজা-ঘষা করতে ইবে-হ্যাঙ্গ’স আছে ।” নলিনী বলিল, “সে আমি ক’রে দেবে।” কানাই কহিল, “না। এমনি কত-কি করতে হবে । তুমি দেখ যদি একট। হাড়ি পাও।” নলিনী তখন বাড়ীর মধ্যে যাইয়৷ সিকার উপর টাঙানো যেসব হাড়ি নানাবিধ দ্রব্য উদরে লইয়া বিরাজ করিতেছিল, তাহার মধ্য হইতে একটি বাছিয়া বাজাইয়া লইয়া চলিয়া আসিল ; এবং চুল্লীতে আগুন ধরাইয়। দিল । বলিল, ভাতট চাপিয়ে দিন আমি মশলা বেটে আনি ৷” কানাই কহিল, “ডাল অfর রাধ ব না-আলু ভাতে দিলেই হবে ।” নলিনী বলিল, “শুধু আলু-ভাতে দিয়ে কি খাওয়া যায় ? ডালট। রাধুন—কতক্ষণ লাগবে !" কানাই কহিল, “কিচ্ছ, দরকার নেই। আলুভাতে দিয়েই বেশ খাওয়া হবে ।” নলিনী কিছু না বলিয়া বাড়ীর মধ্যে চলিয়া গেল ; এবং একখানি নেকৃড় আনিয়া ডালগুলি লইয়া একটি পটুলি বাধিল । বলিল, “ভাতের মধ্যে ছেড়ে দেবেন। আলু ভাতে আর ডা’লভাতে হবে, আর একটু দুধ এনে দেবে{ /* কানাই তখন ভাতের ইঁড়িতে নলিনীর নির্দেশমতো জল দিয়া চা’ল আলু এবং ডালের পুটুলিটি তাহাতে ছাড়িয়া দিল । নলিনী বাড়ীর মধ্যে চলিয়া গেল । কিছুক্ষণ বাদে সে ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, উকুনে বামুন-বাগদী . ‘ව8ළු জাল হ’ছ করিয়া জলিঙেছে ! ভাতের হাড়িটার দিকে - নিরীক্ষণু করিয়া সে কহিল, “করেছেন কি ? সব যে জলছে!—কাঠ-ক’খানা তুলে ফেলুন। কাঠিতে দুটো ভাত তুলে টিপে দেখুন ত—ভাত বোধ হয় হয়ে গেছে —গ’লে গেল যে !” কানাইলাল ভাত লইয়া টিপিয়া দেখিল । বলিল, “হ’ম্নে গেছে।” সে তাড়াতাড়ি বেড়ি দিয়া হঁাড়িট নামাইল। নলিনী কহিল, “নামিয়ে ফেললেন ? ফেন রইল যে, ' ফেনস্থদ্ধ ভাত খাবেন কি ক’রে ? হাড়িটা চুল্লীর উপর তুলে দিন। মুখে সরা চাপা দিয়ে মালসাটায় ফেন গেলে ফেলুন। বেড়িট শক্ত ক’রে ধরূবেন। দেখবেন যেন স’রে এসে ভীত-স্বদ্ধ গায়ে-পায়ে না পড়ে।” ভাতের ফেন গাল হইলে নলিনী উঠিয়া যাইয়া বাগান হইতে দুট। কাচা-লঙ্ক। তুলিয়া আনিল । বলিল, “কঁচিলঙ্কা না হ’লে ভাতে-পোড় খেয়ে স্বর্থ হয় না। থালাটায় ভাতগুলো ঢেলে ফেলুন। সরাতে আলু আর ডালভাতে মেখে নেবেন ।” কানাই বলিল, “থালাট। আর এটো করব না । সাম্নেই ত কলার পাতা রয়েছে, একথান কেটে নিলেই হবে । নলিনী হাসিয়া কহিল, “ও ! আপনি মোটেও গায়ে সেক-তাপ লাগাবেন না—অথচ রোধে খেতে চান !” কানাই বলিল, “সেই ত ভালো । পাতাট। ফে'লে দিলেই চুকে যাবে।” নলিনী তখন নিজেই একখান। পাত কাটিয়া আনিয়া দিল । তা’র পর সে যেমন-যেমন দেখাইয়া দিল, কানাই সেইরূপ করিয়া রাধিবার পাত্রগুলি ধুইয়া-মুছিয়া পরিষ্কার করিয়া রাখিয়া দিল । তা’র পর থাইতে বসিল । নলিনী কিছু দুধ ও একটু গুড় আনিয়া দিল । বলিল, . "দুধ বড় কম হ’ল । একটা গরু মোটে,—বাবার আবার দুবেল একটু-একটু জুধ নইলে খাওয়া হয় না।” কানাই কহিল, “দুধ না হ’লেও চলত। গরম-গরম ভাতে একটা ভাতে-পোড়া হ’লেই যথেষ্ট,—তাষ্ট দু-দুটে৷ হ’ল । আর চাই কি ?”