পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা - কারণ, ৰক্ষ্মীর ভাণ্ডার বৈকুণ্ঠে, যক্ষের ভাণ্ডার পাতালে । রামায়ণের গল্পের ধারার সঙ্গে এর যে একটা মিল দেখছি তার কারণ এ নয় যে,রামায়ণ থেকে গল্পটি অfহরণ করা। আসল কারণ, করিগুরুই আমার গল্পটিকে ধ্যানযোগে আগে থাকতে হরণ করেছেন। যদি বলে প্রমাণ কি ? প্রমাণ এই যে, স্বর্ণলঙ্ক। তার কালে এমন উচ্চ চুড়া নিয়ে প্রকাশমান ছিল কেউ তা মানবে না। এটাযে বর্তমাম কালেরই, হাজার জায়গায় তার হাজার প্রমাণ প্রত্যক্ষ হ’য়ে আছে । ধ্যানের সিদ্ধ কেটে মহাকবি ভাবীকালের সামগ্রীতে কি রকম কৌশলে হস্তক্ষেপ করতেন তার আর-একটি প্রেমাণ দেব | o কর্ষণ জীবী এবং আকর্ষণ-জীবী এই দুই জাতীয় সভ্যতার মধ্যে একটা বিষম দ্বন্দ্ব আছে এসম্বন্ধে বন্ধুমঙ্গলৈ আমি প্রায়ষ্ট আলাপ ক’রে থাকি। কৃষি-কাজ থেকে হরণের কাজে মানুষকে টেনে নিয়ে কলিযুগ কুষিপল্লীকে কেবলি উজাড় ক’রে দিচ্ছে । তা ছাড়া, শোষণজীবী সভ্যতার ক্ষুধ{-তুষ্ণা দ্বেষ-হিংসা বিলাস বিভ্রম স্বশিক্ষিত রাক্ষসেরই মতো । আমার মুখের এই বচনটি কবি তার রূপকের ঝুলিতে লুকিয়ে আত্মসাৎ করেছেন সেটা প্রণিধান করলেই বোঝা যায়। নব-দুৰ্ব্ব-দল-শ্বাম রামচন্দ্রের বক্ষ সংলগ্ন সীতাকে স্বর্ণপুরীর অধীশ্বর দশানন হরণ ক’রে নিয়েছিল সেটা কি সেকালের কথা, না একালের ? সেটা কি ত্রেতাযুগের ঋষির কথা, না আমার মতে। কলিযুগের কবির কথা ? তখনো কি সোনার খনির মালেকরা নব-দুৰ্ব্বাদলু-বিলাসী কৃষকদের ঝুটি ধ’রে টান দিয়েছিল । . আরো একটা কথ। মনে রাখতে হবে । কুৰী-যে দানবীয় লোভের টানেই আত্মবিশ্বত হচ্ছে ত্রেতাযুগে তারই বৃত্তাস্তুটি গ+ঢাকা দিয়ে বলবার জন্যেই সোনার মায়াযুগের বর্ণনা আছে । আজকের দিনের রাক্ষসের মায়ামৃগের লোভেই তো আজকের দিনের সীতা তার হাতে ধরা পড়ছে; নইলে গ্রামের পঞ্চবটচ্ছায়াশীতল কুটীর ছেড়ে চাষীর টিটাগড়ের চট কলে মরুতে আসবে কেন ? রক্তকরবী S్చలి বাল্মীকির পক্ষে এসমস্তই পরবর্তী কালের, অর্থাৎ পরস্ব । * . বারোয়ারীর প্রবীণ মণ্ডলীর কাছে একথ। ব’লে ভালো করলেম না। সীতাচরিত প্রভৃতি পুণ্যকথাসম্বন্ধে তারা আমাকে অশ্রদ্ধাবানু ব’লেই সন্দেহ করেন । এটা আমার, দোষ নয়, তাদেরও দোষ বলতে পারিনে, বিধাভ র্তাদের এই রকমই বুদ্ধি দিয়েছেন । বোধ করি সেটা আমার সঙ্গে বারে বারে কৌতুক করবার জন্তেই। পুণ্যশ্লোক বাল্মীকির প্রতি কলঙ্ক আরোপ করলুম বলে পুনৰ্ব্বার হয়তো তারা আমাকে এক-ঘরে করবার চেষ্টা করবেন। ভরসার কথা আমার দলের লোক আছেন, কৃত্তিবাস নামে আর এক বাঙালী কবি । এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে উঠল। আধুনিক সমস্ত। ব’লে কোনো পদার্থ নেই, মানুষের সব গুরুতর সমস্যাই চিরকালের। রত্নাকরের গল্পটার মধ্যে তারই প্রমাণ পাই। রত্নাকর গোড়ায় ছিলেন দস্থ্য, তারপরে দস্থ্যুবৃত্তি ছেড়ে ভক্ত হলেন রামের । অর্থাৎ ধর্ষণবিদ্যার প্রভাব এড়িয়ে কর্ষণবিদ্যায় যখন দীক্ষা নিলেন তখনই সুন্দরের আশীবর্বাদে তার বীণা বাজ ল। এই তত্ত্বট তখনকার দিনেও লোকের মনে জেগেছে । এককান্সে যিনি দস্থ্য ছিলেন তিনিই যখন কবি হ’লেন তখনই আরণ্যকদের হাতে স্বর্ণলঙ্কার পরাভবের বাণী তার কণ্ঠে এমন জোরের সঙ্গে বেঞ্জেছিল। হঠাৎ মনে হতে পারে রামায়ণটা রূপক কথা। বিশেষত যখন দেখি রামরাবণ দুই নামের দুই বিপরীত অর্থ । রাম হ’ল আরাম, শান্তি, রাবণ হ'ল চীৎকার, অশান্তি। একটিতে নবাকুরের মাধুৰ্য্য, পল্লবের মর্শ্বর, আর-একটিতে শান-বাধানে রাস্তার উপর দিয়ে দৈত্যরথের বীভৎস শৃঙ্গধ্বনি । কিন্তু তৎসত্ত্বেও রামায়ণ রূপক নয়, আমার রক্তকরবীর পালাটিও রূপকনাট্য নয় । রামায়ণ মুখ্যত মান্থযের সুখদুঃখবিরহমিলন ভালো-মন্দ নিয়ে বিরোধের কথা ; মানবের মহিমা উজ্জল ক’রে ধরবার জন্যেই চিত্রপটে দানবের পটভূমিক। এই বিরোধ একদিকে ব্যক্তিগত মানুষের, আরেক দিকে শ্রেণীগত মামুষের । রাম ও রাবণ একদিকে দুই মাছুষের ব্যক্তিগত রূপ, আরেক দিকে '