পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৬২ ব্যাখ্রভীতিপূর্ণ নির্জন পাৰ্ব্বত্য প্রদেশ ছাড়িবার কল্পনায় তিনি অত্যন্ত আনন্দ্বিত হইয়া উঠিয়াছেন। কত্রীর অমুমতি পাইয়া ময়না বাড়ীর বাহির হইয়া কেবল পথের উপর পা দিয়াছে, এমন সময় আবার গত রজনীর অনুরূপ ভীষণ গর্জনে ধেন আকাশ-পৃথিবী বিদীর্ণ হইয়া গেল। ময়নার দেহ নিঃস্পন্দ্ব হইল। ভয়ে, উৎকণ্ঠায় ও স্বামীর জন্ত উৎকট ভাবনায় যেন তাহার সমস্ত চৈতন্ত একসময়ের জন্য লুপ্ত হইয়া গেল। কতক্ষণ পরেই ভয়ানক গর্জনে মাটি কঁাপিতে লাগিল। ময়না বাড়ী যাইতে পারিল না। কিরণ র্তাহার শয়নকক্ষের একটা জানালা খুলিয়া ডাকাডাকি করিতেছিলেন, সেই ডাকেই ময়না ফিরিয়া চাহিল। না ফিরিয়া উপায় নাই । শিথিলচরণে কম্পিতবক্ষে ময়না ধীরে-ধীরে আসিয়া কিরণের ঘরের দরজায় দাড়াইল । কিরণ দ্বার মুক্ত করিয়া কছিলেন, “শীগগির ঘরে আয় । আজ আর বাড়ী যাবার নাম করিস্নে, এখুনি ত বাঘের পেটে গিয়েছিলি—” ময়না শুষ্কস্বরে কহিল, “বাঘ ত এত কাছে আসেনি ম, দূরের জঙ্গলে ডেকেছে।” কাছে আসিলে ময়নার এত চিন্তা, এত ভয় হুইত না । তাহার ভয় হইয়াছিল স্বামীর জন্ত । যদি সে এখনো বাড়ী না আসিয়া থাকে। কতক্ষণ পরে সেই ভয়ানক শব্দ থামিল। আবার চারিদিকে বনভূমির স্বাভাবিক নিস্তব্ধতা বিরাজ করিতে লাগিল । মন্থনা কহিল, “মা, আমি বাড়ী যাই, ভাত রাধ তে হবে ।" কিরণ এই মুখ মেয়েটাকে নিশ্চিভ মরণের মুখে সমর্পণ করিতে রাজি হইলেন না । কহিলেম, “কার জন্ত ভাত রাধ বি গিয়ে ? আজ রাত্রিটা চুপ ক’রে শুয়ে থাকৃ। ংশী যদি নাই-ই ফেরে, তা হ’লে তুই—” ময়না শিহরিয়া উঠিয় কহিল, "না মা, সে ত ব’লে গেছে সঙ্ক্যের পর আসবে।” কিরণ অর্থস্বচক মাথা নাড়িলেন। পাশের ঘর হইতে শ্ৰীশ কহিলেন, “ওগে, ওকে বুধিয়ে দাও, বংশী আজ রাত্রে ফিরূবে না। একটা গাছে চ’ড়ে-ট’ড়ে কোনোমতে রাতটা কাটাবে, সকালে বাড়ী প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩২ [ ২৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড আসবে। বাঘ বেকুলে ওরা ত ওইরকমই করে ।” তা’র পর ঈষৎ মৃদুস্বরে কহিলেন, “বাছাধন আজ বাঘের কবলেই পড়েছেন কি না, ভগবান জানেন।” কিরণ কহিলেন, “পাপের শাস্তি আর কি ! তিনদিন জরগায়ে সংসারের সকল কাজ করেছি, আত্মাটা দুঃখ পেয়েছ ত ! তা’র একট। অভিশাপ আছে ত ? ভগবান সব বিচার করেন।” বলিয়া শুইতে গেলেন । ময়নাকে কহিলেন, “সাবধান, যেন দরজা খুলে চলে যাসনে ৷” ময়না হতচৈতন্যের মতন এক-কোণে গুইয়া পড়িল । বংশী যে সন্ধ্যার সময় বাড়ী ফিরিয়াছে, সেবিষয়ে ময়নার কোনো সংশয় ছিল না। কেবল বাড়ী গিয়৷ স্বামীকে সচক্ষে দেখিবার ও তাহাকে রাধিয়া খাওয়াইবাব অত্যন্ত প্রলোভন ছিল । ঐশ ও কিরণের সমালোচনা ও শাসন তাহার ইচ্ছা-শক্তিকে যেন জড়ীভূত করিয়া দিল । ( २ ) সপ্তাহ অতীত হইয়াছে । বংশী আর ফিরিয়া আসে নাই। তা’র সঙ্গে আর কয়জন গারো কাঠ কাটিতে গিয়াছিল। তারা পরদিন সকালে ফিরিয়াছিল, বংশী তাদের সহিত ছিল না। ময়না তাদের কাছে গিয়া কাদিতে-কঁাদিতে অনেক প্রশ্ন করিল ; তাহার কহিল, সেইদিন সন্ধ্যাবেল বাড়ী ফিরিবার পথে তাহারা বাঘের ডাক শুনিয়া যে যেদিকে পারে ছুটিয়া পলাইয়াছিল ; সকালে অনেক বন ঘুরিয়া অনেক পথ হারাইয়া সবাই ভিন্ন-ভিন্ন পথে বাড়ী ফিরিয়াছে। ংশী কেন ফিরিল না, তা’র কারণ খুব সুস্পষ্ট ! ময়না আর সেই শূন্য গৃহে ফিরিঙ্গ না । কিরণের কাছে আসিয়। ধূলায় লুটাইয়া কঁদিতে লাগিল । শ্ৰীশচন্দ্র একদিন পত্নীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মেয়েটা খুব কাদছে নাকি ?” কিরণ মুখ বাকাইয়া কছিলেন, “এখন ত খুব কেঙ্গে খুন হচ্ছে, দুদিন বাদে আবার বিয়ে করবে না! ওরা আবার মাছুষ নাকি ? জন্তু!” “আমি ভাবছিলাম, এক কাজ করলে হয়—” কিরণ উৎস্থক হইয়া কহিলেন, “কি ?” ঐশ কহিলেন, "চাকর-বাকর পাওয়া ত বিষম কষ্ট !