পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] রবীন্দ্রনাথের বাণী 86: ষে বাণী ধ্বনিত হইয়া উঠিয়াছে, তাহা তিনি নিজেই একটি কথায় ব্যক্ত করিয়াছেন। “আমার কাব্য-রচনার একটি মাত্র পালা। সে-গানের নাম দেয় ঘাইতে পারে, সীমার মধ্যেই অসীমের সহিত মিলন-সাধনের পালা ৷” কথাটি ত একচ্ছত্রে হইয় গেল, কিন্তু এই পালাটি বুঝাইবার জন্ত রবীন্দ্রনাথকে অজস্র পুস্তক, অফুরন্ত গান, পুঞ্জ-পুঞ্জ কবিতা লিখিতে হইতেছে। এই ভাবটি প্রাণে nইয়া রবীন্দ্রনাথ যে সঙ্গীতটি রচনা করিয়াছেন তাহা এই – “সীমার মাঝে মসীম তুমি বাজাও আপন স্বর। আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুব।" সীমার ভিতর অসীমের আভাস কি করিয়া আসে, তাহা বুঝাইবার জন্ত তিনি কত গান, কত নাট্য, কত - কাব্য লিখিয়াছেন । “ক্ষুদ্রকে লইয়াই বুষ্টং, সীমাকে লইয়াই অসীম, প্রেমকে লষ্টয়াই মুক্তি। প্রেমের আলো যখন পাই, তখনি যেখানে মোখ মেলি সেখানেই দেখি সীমার মধ্যেও সীমা নাই ।” এই ষে সীমার ভিত্তর অসীমের আভাস লাভ ইহাই রবীন্দ্রনাথের সমুদায় গান ও কবিতার একটি মাত্র ধ্বনি । এই যে সীমার মধ্যে অসীমকে দেখ। তাঙ্গ রবীন্দ্রনাথের লেখা হইতে আমি একটু বুঝাইতে চেষ্টা করিব। ভগবান অসীম আমরা সসীম ও ক্ষুদ্র, আমরা যে-সকল বস্তু দিয়া পরিবেষ্টিত রহিয়াছি সবই সসীম এবং ক্ষুদ্ৰ—কিন্তু অনন্ত অসীম, কি করিয়া আমাদের অধিগম্য হইতে পারে? যে উপায়ে জনস্তের সাধন সম্ভব তাহ রবীন্দ্রনাথ উপলব্ধি করিয়াছেন এবং নানা-প্রকার আভাসে তাহা বুঝাইতেছেন। আমি এখানে তাহার ‘জীবনস্থতি’ হইতে উদ্ধৃত করি।-- “বাহিরের প্রকৃতিতে যেখানে নিয়মের ইন্দ্রজালে অসীম আপনাকে প্রকাশ করিতেছেন সেখানে সেই নিয়মের বাধাবাধির মধ্যে আমরা অসীমকে না দেখিতে পারি, কিন্তু যেখানে সৌন্দৰ্য্য ও প্রীতির সম্পর্কে হৃদয় একেবারে অব্যবহিতভাবে ক্ষুত্রের মধ্যেও সেই ভূমার স্পর্শ লাভ করে, সেখানে সেই প্রত্যন্ধবোধের কাছে কোনাে তর্ক খাটিৰে কি করিয়া ?” জগৎ রচনায় সৌন্দর্ঘ্য এবং প্রেমের পরিচয় স্থম্পষ্ট পাওয়া যায়—একথা কেহ অস্বীকার করিতে পারে না । রবীন্দ্রনাথ বলিতেছেন, এই সৌন্দর্ঘ্য এবং প্রেমের পথেই, আমরা প্রতি মুহূর্তে প্রতিক্ষণে অনন্তের সাড়া পাই—তা’র স্পর্শ পাই। যার সৌন্দৰ্য্য-বোধ নাই এবং প্রাণে প্রেম নাই অনস্তের পরিচয় তা’র পক্ষে পাওয়া অসম্ভব । কিন্তু এমন দুর্ভাগ্য নরকুলে বিরল ? ক্ষুদ্ৰাদপি ক্ষুদ্র তৃণের ভিতর এবং অতি তুচ্ছ ঘটনার ভিতর অনন্তের আভাস পাওয়া गृiग्रे | রবীন্দ্রনাথ পরিষ্কার বলিয়াছেন—যেমন "এই যে প্রকাশমান জগং, এ আর কিছু নয়, তার মৃত্যুহীন আনন্দই রূপ ধারণ ক’রে প্রকাশ পাচ্ছে।” “আনন্দই তার প্রকাশ, প্রকাশই তার আনন্দ । তিনি যদি প্রকাশেই আনন্দিত, তবে আমি আনন্দের জন্ত অপ্রকাশের সন্ধান করব। তার আনন্দের সঙ্গে যোগ না দিয়ে আমি কিছুতেই আনন্দিত হতে পারব না। এর সঙ্গে যেখানেই অপরের যোগ সম্পূর্ণ হবে, সেখানেই আমার মুক্তি হবে, সেইখানেই আমার আনন্দ হবে। বিশ্বের মধ্যে র্তার প্রকাশকে অবাধে উপলব্ধি করেই আমি মুক্ত হবো। ভববন্ধনু অর্থাৎ হওয়ার বন্ধন ছেদন করে মুক্তি নয়,হওয়াকেই বন্ধনস্বরূপ না করে মুক্তিস্বরূপ করাই হচ্ছে মুক্তি। কৰ্ম্মকে পরিত্যাগ করাই মুক্তি নয়—কৰ্ম্মকে আনন্দোম্ভব কৰ্ম্ম করাই মুক্তি। তিনি যেমন জানন্দ প্রকাশ করেছেন, তেমনি আনন্দ্বেই প্রকাশকে বরণ করা, তিনি যেমন আনন্মে কৰ্ম্ম করছেন তেমনি আনন্দেই কৰ্ম্মকে গ্রহণ করা --একেই বলে মুক্তি। কিছুই বর্জন না করে সমস্তকেই সত্যভাবে স্বীকার করে মুক্তি। সেই মুক্তি বৈরাগ্যের মুক্তি নয়—সেই মুক্তি প্রেমের মুক্তি, ত্যাগের মুক্তি নয়, যোগের মুক্তি। লয়ের মুক্তি নয়—প্রকাশের মুক্তি।” এই জগতের সকল বস্তু সম্ভোগ করিতে হইবে, বিশ্বস্রষ্টা সম্ভোগের জন্য স্বষ্টি করিয়াছেন, কিন্তু সম্ভোগের প্রকারভেদেই পাপ এবং পুণ্য। বর্তমান যুগে ইহার চেয়ে বড় কথা জার হইতে পারে না। মুক্তির বার্তা এমন