পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্য ] নষ্টচন্দ্র ¢ፃፃ অকারণে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে সেখান থেকে চলে এইখানে পেতে দিই, তুমি তাতেই ওর ভাত ঢেলে দিয়ে গেল । - দশটার সময় অনলের ভাত দেওয়া হ’লে একজন চাকর বৈঠকখানা থেকে তাকে ডেকে নিয়ে এল। খাবারের কাছে এসেই ধনিষ্ঠীর সঙ্গে ক্রীড়ারত গৌরীকে দেখেই অনলের মনে পড়ল,এই কাপড়-জাম পরে’ই সে গৌরীকে ছয়েছিল। এই কাপড়ে খেতে বসতে তার মনটা সঙ্কুচিত ও দ্বিধাম্বিত হয়ে উঠল, কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে হ’ল কলকাতায় কলেজে পড়বার সময় ইংরেজ অধ্যাপক ও মুসলমান প্রভৃত্তি ছত্রিশ-জাতের সহপাঠীদের সংস্পর্শ বিচার করে’ সে চলতে পারেনি ; বাড়ীতে এসে বসার পর থেকে তার হিন্দুয়ানি বিচার ও আচার-নিষ্ঠ। তাকে নিষ্কৰ্ম্মা দেখে পেয়ে বসেছিল বটে, কিঞ্চ এখন গৌরীকে কাছে রেখে লালন-পালন কবৃত্তে হ’লে সেই আচার-নিষ্ঠ৷ অনেক পানি শিথিল করে ফেলতেই হবে । তাই আজ সে মনের কিন্তু ভাব দমন করে’ গৌরীকে-ছোয়। কাপড়েই আসনে গিয়ে বসল। বড়েীহে হ’লে সে হয়ত কাপড় ছেড়েই খেতে বস্ত এবং আচাব-নিষ্ঠ শিথিল কবৃবাব যে কোনো আবশ্যকতা আছে,সে-কথাও তার মনে পড়ত না ; কিন্তু আজ পরের বাড়ীতে হিন্দুয়ানির আড়ম্বর কবৃন্তে সঙ্কোচ বোধ হওয়াতেই তার মনে আচার রক্ষাসম্বন্ধে অসুবিধার কথা উদয় হ’ল । অনলকে যখন খাবার জন্যে ডেকে আনা হ’ল, তখন ধনিষ্ঠার মনেও মনলের কাপড় ছাড়ার কথা একবার উদয় হয়েছিল ; কিন্তু তখনই ধনিষ্ঠার মনে পড়ল অনল প্রথম ষেদিন কাছারীর ফেরৎ তাঁকে পড়াতে এসেছিল এবং ধনিষ্ঠ অনলকে জল খেতে দিয়ে অনল কাপড় ছাড় বে কি না জিজ্ঞাস করেছিল ; সেদিন অনল বলেছিল কলকাতায় থেকে লেখাপড়া করবার সময় সে ব্রাহ্মণ্য-আচার রক্ষা করতে পারেনি। তাই ধনিষ্ঠা অনলকে আজ আর কাপড় ছাড় বার কথা জিজ্ঞাসাও করলে না। অনল খেতে বস্লে রাধুনী বামুন একথালা ভাত বেড়ে নিয়ে এসে ধনিষ্ঠাকে জিজ্ঞাসা করলে—ম, মেমদিদিমণির ভাত এনেছি, কোথায় দেবো ? ধনিষ্ঠা বললে—দাড়াও, আমি ওর আলাদা বাসন وه و س---A\C शृ७ ।। o - গৌরী ধনিষ্ঠার বাড়ীরও একটি বিষম সমস্ত হয়ে' উঠেছে। ধনিষ্ঠ। কাল থেকে ক্রমাগত ভাবছে, অনল ছুপুর বেলা কাছারী চলে’ গেলে গৌরীকে কোথায় রাখা যাবে ; গৌরীকে অবগু এই বাড়ীতেই এনে রাখতে হবে ; এই বাড়ীতে কোথায়-কোথায় তার গতিবিধি থাকৃতে পারবে, এবং কোথায় কোথায় বা তার প্রবেশ ও স্পশ নিষেধ করা হবে, কোন পাত্রে তাকে খেতে দেওয়া হবে এবং সেই পাত্রগুলি ধোয়া-মাজাই বা কেমন করে হবে, কে তার উচ্ছিষ্ট ছোবে, ইত্যাদি শতেকপ্রকার জটিল ও কঠিন প্রশ্ন ক্রমাগতই ধনিষ্ঠার মনের মধ্যে আন্দোলিত হচ্ছিল। গৌরীর থেল বার ও থাকবার জন্যে বৃহৎ বাড়ীর একটা অংশ স্বতন্ত্র করে দিতে পারা যত সহজে হয়েছিল, অন্য সমস্তাগুলির সমাধান তেমন সহজ হয়নি। ধনিষ্ঠা একবার ভাবলে, গৌরীর আহারের জন্য প্রত্যেকবার কলার পাতা কিম্বা মাটির বাসনের ব্যবস্থা করলে তার উচ্ছিষ্ট বাসন ধোয়া-মাজা ও তুলে রাখার দায় থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায় ; কিন্তু সেই-সব উচ্ছিষ্ট পাতাই বা তুলে ফেলবে কে ? গৌরী একে ছেলেমাস্থ্য, তায় মোমের পুতুলের মতন স্বন্দর, তার উপর সে স্নেহের পাত্রী, তাকে দিয়ে ঐ কৰ্ম্ম করানো চিন্তারও অতীত ; এমন স্নেহভাজনকে অবহেলিতের মতন মাটির বাসনেই বা খেতে দেওয়া যায় কেমন করে’ ? ভাব তে-ভাবতে ধনিষ্ঠার মনে হ’ল, চীনে মাটির বাসনে ত সাহেবের খেয়ে থাকে, এবং সেই বাসনেই খেতে তারা বেশী পছন্দ করে ; অতএব সাধারণ মাটির বাসনের বদলে গৌরীকে পোসিলেনের বাসন দেওয়া যেতে পারে। সেই-সব বাসন নিত্য ফেলে দেওয়াতে কিছু অপব্যয় হবে বটে, কিন্তু তার আর উপায় কি ? পোর্সিলেনের বাসন নিত্য ফেলে দেওয়াই যেন স্থির হ’ল, কিন্তু ফেলবে কে ? যে ফেলুবার জন্তে ছোবে, সেই ত সেগুলিকে মেজে ধুয়ে এক ঘরের এক পাশে রেখে দিতে পারে। এই মেচ্ছের উচ্ছিষ্ট ছুতে কোন হিন্দু চাকর-দাসী সহজে সম্মত হবে ? মুসলমান চাকর রাখলে সকল সমস্তার সমাধান হয় বটে,