পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

. ১ম সংখ্যা ] হিন্দুর ধৰ্ম্মান্তর গ্রহণ সহিত ঔদ্বাহিক সম্বন্ধ স্থাপিত হইলে তাহাতে অগৌরবের কিছুই নাই, যদি উভয় পক্ষে আদানপ্রদান চলে। "শুদ্ধি অম্বষ্ঠান দ্বারা যাহাদিগকে হিন্দু করা হইতেছে, তাহাদের বিবাহ হিন্দুসমাজেই চলিবে । হিন্দু যেমন ইসলাম ধৰ্ম্মগ্রহণ করিয়া মুসলমান সমাজের সহিত পরিণয় স্বত্রে আবদ্ধ হয়, মুসলমান সেইরূপ স্বেচ্ছায় হিন্দুধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়া হিন্দুসমাজের সহিত পরিণয়স্থত্রে আবদ্ধ হইলে ক্ষতি কি ? স্কু স্ব ধৰ্ম্ম রক্ষা করিয়া বিবাহক্ষেত্রে মিলিত হইবার বাধাই বা কেন থাকিবে ? হিন্দু-গৌরব রাজপুত ললনাগণ স্বধৰ্ম্ম রক্ষা করিয়াই ত মোগল সম্রাটুগণের জননী হইয়াছিলেন”। বিভিন্ন খৃষ্টীয় ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের মধ্যে ধৰ্ম্মস্বাতন্ত্র্য রক্ষা করিয়! সৰ্ব্বদা এইরূপ বৈবাহিক আদানপ্রদান চলিয়া থাকে । অবগু এরূপ যৌন-মিলন কোন দেশেই খুব বেশী হয় না, কিন্তু ইহা হিন্দুর পক্ষে একান্ত নিষিদ্ধ না হইলে উভয়ধৰ্ম্মাবলম্বীর মধ্যে ধৰ্ম্মগত বিদ্বেষ অনেকটা প্রশমিত এবং ভারতীয় "নেশন’-গঠন অপেক্ষাকৃত সুকর হইত। ক্রমাগত এক পক্ষের ক্ষয়বশতঃ হিন্দুজাতির যে সংখ্যা হ্রাস ও শক্তিলোপ হইতেছে, তাহাও নিবারিত হইত । جمجمية হঙ্কত, কেহ-কেহ মনে করিবেন, এরূপ হিন্দুজাতি থাকিয়! ফল কি ? যদি খোল ও নলচে উভয়ই বদলাইতে হয়, তবে হিন্দুর হিন্দুত্বের কি অবশিষ্ট থাকিবে ? কিন্তু পূৰ্ব্বেষ্ট বলিয়াছি, হিন্দু ধৰ্ম্ম বলিতে অধিকাংশ হিন্দুর ধৰ্ম্মমত ও আচকু বুঝায়। খৃষ্টান ও মুসলমান উভয়েরই নিদিষ্ট ধৰ্ম্মবিশ্বাস (crood) আছে, হিন্দুর তাহ নাই ; বৌদ্ধ ও হিন্দুর জাতিগত সাদৃপ্ত না থাকিলেও ধৰ্ম্ম ও দর্শনগত সাদৃশ্য আছে। হিন্দুর এই মতাগত স্বাধীনতা উদারতা এবং তাহার অস্তমুখী সভ্যতাই হিন্দুধর্শ্বের বিশেষত্ব রক্ষা করিবে। জাতীয় ঐক্যের তিনটি প্রধান উপাদান ধৰ্ম্ম, আচার ও বংশ (race)। অধিকাংশ ভারতীয় হিন্দুমুসলমানের ংশগত ঐক্য আছে, কিন্তু বৈবাহিক বিনিময়ের অভাবপ্রযুক্ত জাতীয় মিলনের পক্ষে তাহ প্রবল নহে। অতএব উহাদের মধ্যে বৈবাহিক আদানপ্রদান স্থাপন করিতে হইবে । আচারগত পার্থক্য বিভেদ-রচনার সর্বাপেক্ষা অনুকূল। স্ব-স্ব অযৌক্তিক অনুষ্ঠানগুলি বর্জন করিয়া উভয় ধৰ্ম্মাবলম্বীকে আচার-ক্ষেত্রে মিলিত হইতে হইবে। তখন হিন্দুর ধৰ্ম্মমতের উদারতা ও আধ্যাত্মিক সভ্যতাই তাহার বিশিষ্টভ রক্ষা করিবে, এবং সেই বিশিষ্টতাই তাহার ধৰ্ম্মস্বাতন্ত্র্য বজায় রাখিবার পক্ষে যথেষ্ট হইবে, কিন্তু জাতীয়ত-গঠনের পরিপন্থী হইবে না। খৃষ্টধর্শের বিভিন্ন শাখাসমূহের মধ্যে পাঁচশত বৎসর পূৰ্ব্বেও রক্তগঙ্গা প্রবাহিত হইত, কিন্তু এখন ধৰ্ম্মস্বাতন্ত্র্যের অস্তিত্ব-সত্ত্বেও উহা তাহাদের মধ্যে কোন বিরোধস্বৰ্ষ্ট করে না, বিভিন্ন race এর মধ্যে বৈবাহিক আদানপ্রদান চলে, এবং সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান-সম্বন্ধে সমগ্র পাশ্চাত্য জগৎ সপুর্ণ একত্ব লাভ করিয়াছে। আমাদিগকেও হিন্দুধর্মের বৈশিষ্ট্য রক্ষা করিয়া সামাজিক ও বৈবাহিক ক্ষেত্রে অন্যান্য ধৰ্ম্মাবলম্বীর সহিত এক হক্টতে হইবে । কিন্তু এই আশা ফলবতী হইতে বহুবিলম্ব আছে। বর্তমানে এই আশা শশবিষাণবৎ স্বপ্নের বিষয়মাত্র। প্রতিপক্ষ বলিতে পারেন, হিন্দুধর্মের স্বাতন্ত্র্যরক্ষায় এমন কি প্রয়োজন আছে ? হিন্দুজাতি বিলুপ্ত হইয়া অন্য কোন জাতিতে পরিণত হইলে দোষ কি ? অবশ্য যেসকল হিন্দু ইসলাম কিম্বা খৃষ্টধৰ্ম্মকে শ্রেষ্ঠতর মনে করিয়া তাহা অবলম্বন করেন, তাহদের বিরুদ্ধে আমাদের বলিবার কিছুই নাই । ধৰ্ম্মসম্বন্ধে প্রতোকের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আছে, কারণ উহাই মানুষের পরম পরমার্থ। যদিওঁ অধিকাংশ লোকের ধৰ্ম্ম জন্মগজ, তথাপি প্রত্যেক ধৰ্ম্মেয় এমন কতকগুলি গুণ আছে, যাহা সেই ধৰ্ম্মকে তাহার অমুচবদিগের নিকট প্রিয়তম করিয়াছে। সেইসকল গুণদ্বারা আকৃষ্ট হইয়া কোন হিন্দু উক্ত ধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইতে চাহিলে অন্য কোন প্রকৃত হিন্দু তাহার বিপক্ষাচরণ করিবে না। কোন মুসলমান বা খৃষ্টান ঐরুপ হিন্দুধর্মের গুণে মুগ্ধ হইয়া হিন্দু হইতে চাহিলে অপর কোন প্রকৃত মুসলমান বা খৃষ্টানের তাহাতে আপত্তি হইতে পারে না। কিন্তু আমরা পূৰ্ব্বে ধৰ্ম্মান্তর গ্রহণের যে-সকল কারণের উল্লেখ করিয়াছি, ধৰ্ম্মবিশ্বাসের পরিবর্তন তাহীদের অন্তর্গত নহে । সমগ্র মানবজাতি যখন ধৰ্ম্মস্বাতন্ত্র্য বিসর্জন দিয়া, স্ব-স্ব ধৰ্ম্মের বিশেষত্বের গঞ্জী অতিক্রম করিয়া, বিশ্বহিত ও বিশ্বপ্রেমের মহান ভাবে অনুপ্রাণিত হইয়া হাতধরাধরি করিয়া ,