পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নষড়চন্দ্র চারু বন্দ্যোপাধ্যায় বিকালবেলা। পশ্চিমের জানলা দিয়ে সোনালি-রঙের পড়ন্ত রৌত্র ঘরের ভিতরে অনেক দূর পর্যন্ত এসে পড়েছে। আলোর দিকে মুখ ক’রে সাম্নে একখানা বড় আয়না পেতে একটি সতর-আঠার বছরের ছেলে একটা বড় কাচের বাটিতে জল আর ল্যাভেণ্ডার মিশিয়ে একএকবার মাথায় মাখছে আর বিবিধ ভঙ্গিতে টেড়ি বাগাবার চেষ্টা করছে। তা’র চুলে ইচ্ছামতো তরঙ্গ ও আবর্তময় টেড়ি হচ্ছে না ব’লে সে বিরক্ত হ’য়ে ক্রমাগত টেড়ি ভাঙছে আর ল্যাভেণ্ডার-জল দিয়ে-দিয়ে আবার বিচিত্র কারুকার্য্যখচিত টেড়ি করবার চেষ্টা করছে । ছেলেটির বর্ণ উজ্জল-গেীর, মুখভাব নিতান্ত মেয়েলি, কোমল ও স্বন্দর ; তা’র সর্বাঙ্গে সৌধীন বিলাসিতার পারিপাট্যের চিহ্ন দেদীপ্যমান ; তা’র পরনে শাস্তিপুরের মিহি কালাপেড়ে ধুতি পরিপাটিভাবে ক্টোচানো চুনটকরা ; গায়ে ডুরে ছিটের শার্ট, এরারুট আর মোম দিয়ে শক্ত চকুচকে ইস্তিরি-কার ; জামায় সোনার বোতাম, হাতে সোনার হাতঘড়ি সোর্নার বন্ধনীতে বাধা ; পায়ে বাণিশকরা নূতন চকচকে পাম্প শু । তা’র আয়না চিরুর্ণি বুরুশ প্রভৃতিও বেশ দামী । ছেলেটির স্বন্দর সেখীন চেহারার সঙ্গে এই সব বিলাসোপকরণ বেশ খাপ থেয়েছিল ; কিন্তু ঘে-বাড়ীর যে-ঘরে বসে সে এই বিলাস-প্রসাধন সম্পন্ন করছে তা’র সঙ্গে সেও খাপ খায়নি, তা’র সাজসজ্জাও মানায়নি এই বাড়ীতে ভা’র অবস্থানকে গ্রাম্য উপম দিয়ে বলতে পারা যায়—গোবরে পদ্মফুল ফুটেছে। বাড়ীটি ছোটে, অতি পুরাতন, জীর্ণ, নোনা লেগে ইটগুলো নানা জায়গায় ক্ষীয়ে-ক্ষ’য়ে গেছে, ঘরের ভিতরে-বাহিরে চুনবালি খসে পড়েছে, কোথাও-কোথাও ব| পড়ো-পড়ো হ’য়ে ফেপে আছে, আর যেখানে এটে লেগে আছে দেখানকারও চুনকামের রঙ বয়সের আতিশয্যে হলদে হয়ে উঠেছে। দীর্ঘকাল গুরুভার বহন ক’রে কড়ি-বরগা জখম হয়ে ঝু’লে পড়েছে, আর তাদের স্বয়ং কাজ চালাবার শক্তি নেই দেখে তাদের তলায় বংশের খুটি ঠেকৃনে দেওয়া হয়েছে ; ঘরের মেঝে অনেক জায়গাতেই খু’ড়ে গৰ্ত্ত-গৰ্ত্ত হ’য়ে গেছে, যে-ধে জায়গায় গভীর হয়ে খুঁড়ে গেছে হাটুতেচলতে পাছে হোচট খেতে হয় তাই সেই-সেই জায়গায় মাটি ভরাট ক’রে গোবর জল দিয়ে লেপে নিকিয়ে চৌরস করা হয়েছে ; গর্ভগুলি ভরাবার জন্যে চারটি গোয় আর দুটি-খানি সিমেন্ট মাটি সংগ্রহও হ’য়ে ওঠেনি দেখা যাচ্ছে। ঘরের একপাশে একটা অনেক কালের পুরানো কৃষ্ণমূৰ্ত্তি দেরাজ-আলমারি, তার দুদিকের কাৰ্ণিশ ভেঙে উড়ে গেছে, দেরাজের টানার গায়ে গা-চাবির কল আর হাতল লাগানে ছিল, এখন তাদের পূর্ব অবস্থিতিব স্মরণ-চিহ্ন-স্বরূপ কেবল কতকগুলি ফুটে-মাত্র দেখা যাচ্ছে, তা’তে কাজ হুমু না, কিন্তু কাজের ব্যাঘাত ঘটে অনেক, তাই সেই-সব ফুটোর ভিতর দিয়ে আবৃক্ষলার অবধিপ্রবেশ নিবারণের জন্য ছেড়া খবরের কাগজ গুজে-গুজে দেওয়া হয়েছে ; কালের কুপায় সে-কাগজের রং বালিকাগজের মতন পিঙ্গল হ’য়ে উঠেছে ; দেরাজটার একট। পায়া নেই, তা’র জায়গায় একটা জীর্ণ আধ লাইট গোজী আছে ; দেরাজের পাশে একটা গড় গড়ে ঘোড়াঞ্চির উপর বসানো আছে একটু মৃতিপ্রাচীন কালের পটুপটে টিনের প্যার, তার ভালাটা দুমড়ে তুবড়ে নৌকার খোলের মতন হয়ে গেছে ; সেই প্যাটুরীর পাশেই সাজানো রয়েছে একটি ঝকৃঝকে মাজ পিতলের পিলস্থজের উপর রেড়ির তেলেভরা একটি পিতলের প্রদীপ । ঘরের অপর পাশে একটি পুরাতন খাটের উপর স্বল্প শয্যা বিছানো, সেটি ধোয়াচাদরে টাক, কিন্তু খাটের ছত্রীর উপর তোলা মশারিটি জীর্ণ মলিন ; খাটের পাশেই কড়ি থেকে ঝোলানে রয়েছে একটি পুরাতন কড়ির আলন, তা থেকে অনেক কড়িই খসে গেছে, অনেক কড়ি ভেঙেও গেছে ; আলনার উপর