পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা । নষ্টচন্দ্র Wసి আপ শোপে তা’র অন্তর ভরাট হ’য়ে উঠেছিল ব’লে তা’র মাতার বিচ্ছেদ-বেদনাও সেখানে স্থান পাচ্ছিল না । তাদের গ্রামের ছু-ক্রোশ দূরবর্তী বাহুম্বিয়া গ্রামের জমিদার, প্রফুর-বাবুর সখের থিয়েটারে স্বই অনিল নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে ; সেই জমিদারের অনুগ্রহেই তার পরিত্যক্ত বসন-ভূষণ ও প্রসাধন-শ্রব্য প্রসাদ পেয়েই আনিলের বিলাস-বাসনা চরিতার্থ হয় ; আজ তাদের থিয়েটারের ড্রেসূরিহাসলি হবার কথা, আজকের দিনে আটক প’ড়ে অনিলের মন এমন বিরস শু মায়ের প্রতি বিরক্ত হ’য়ে উঠেছিল যে, মায়ের মৃত্যুশোকের চেয়েও থিয়েটার করতে যেতে না পারার দুঃখ তার কাছে ক্রমে প্রবলতর হয়ে উঠ ছিল । তা’র কেবলই মনে হচ্ছিল—সে যে এখনও গেল না, এতে বাবু না জানি কত বিরক্ত হচ্ছেন । সেই রাত্রে অনিলের মার মৃত্যু হ’ল । যাতার এই অসাময়িক মৃত্যুতে অনিল অত্যন্ত দুঃখিত বিরক্ত হ’ল । মা যখন তাদের ছেড়ে চ’লে গেলেন তখন প্রথমটা র্তার বিয়োগব্যথাই তাকে আকুল করেছিল, কন্তু সে ব্যথা অতি ক্ষণিক । তা সে সহজেই কাটিয়ে উঠ ল । তা’র দুঃখ ও বিরক্তির কারণ হ’ল এই যে তা’র চ্ছৈাসত্ত্বেও লোকনিন্দার ও দাদার শাসনের ভয়ে সে ই অশৌচ অবস্থাতে থিয়েটার করতে পারলে না, অধিকন্তু গ’ৰু বহু কালের যত্নে পমেটম ও ল্যাভেণ্ডার-জলের সঞ্চনে কুঞ্চিত আবৰ্ত্তিত কেশদাম নিৰ্ম্মল ক’রে মুণ্ডিত ”রে ফেলতে হ’ল। মাতৃশোক যখন সে সম্পূর্ণ বিস্বত য়েছে, তখনওতা’র এই শোক দূর হয়নি, কারণ চুল তা’র ঠখনও জেলখানার কয়েদীর কেশের চেয়ে দীর্ঘ নয় । 臀 彎 事 বিমাতার মৃত্যুর সময় অনল কলকাতায় এম্-এ আর আইন পড় ছিল ; আর আনিলের বয়স বেশী হ’য়ে গেলেও স গ্রামের স্কুল উত্তীর্ণ হ’তে তখনও পারেনি । থিয়েটার আর বিবিধ প্রসাধনের দিকে অনিলের নোযোগ যতখানি ছিল, লেখা-পড়ার দিকে তা’র সিকিও - خ تصدعمحمدمصاص ছিল না। বলাই বাহুল্য যে সে সেই বৎসর এন্টনিস পরীক্ষায় ফেল করলে। ঠিক সেই সময়ই হঠাৎ বাস্থন্দিরার জমিদার প্রফুল্প-বাবুর মৃত্যু হ’ল ; কাজেই র্তার সখের থিয়েটার আপনা হ’তেই ভেঙে লুপ্ত হ’য়ে গেল । স্বতরাং অনিলের গ্রামে থাকার আর কোনো প্রলোভন রইল না । এই বৈচিত্র্যহীন জীবন তা’র কাছে অসহ হয়ে উঠল। সে দাদাকে গিয়ে বললে—দাদা, এখানকার গেয়ে স্কুলে ভালো পড়া হয় না ; এখানে থাকলে পাশ হওয়া শক্ত হবে ; আমি পড়তে কলকাতায় যাবে। অনল ভাইয়ের মুখের দিকে ক্ষণকাল শূন্তদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে অন্যমনস্কভাবে বললে—আচ্ছা। এই ছোট একটু আচ্ছার পিছনে যে কতখানি আত্মত্যাগ প্রচ্ছন্ন হ’য়ে ছিল, তা অনিল বুঝতে পারলে না। অতটা অস্তদৃষ্টি থাকলে এমন আন্ধার সে করতে পাবৃত না। অনিল কলকাতায় পড়তে গেল, সঙ্গে-সঙ্গে অনল পড়া ছেড়ে দিয়ে বাড়ীতে এসে বসল ; তাদের সামান্য জমিজমা থেকে যা আয় হ’ত, তা থেকে অল্প কিছু নিয়ে আর নিজে দুবেল প্রাইভেট ছেলে পড়িয়ে কিঞ্চিৎ উপার্জন ক’রে অনল কলকাতায় নিজের পড়ার খরচ চালা’ত । ভাই যখন কলকাতায় পড়তে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করলে, তখন সে তা'কে 'না' বলতে পারলে না ; সে নিজে কল, কাতায় পড়ছে, ভাইয়ের কলকাতায় পড়বার ইচ্ছায় সে যদি বাধা দেয়, তা হ’লে ভাই তা’কে হয়ত স্বার্থপর ভাববে, এই মনে ক’রে, অনল ভাইয়ের প্রস্তাবে তৎক্ষণাৎ সম্মত হ’তে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু দুই ভাইয়ের কলকাতায় পড়ার খরচ চালাবার মতন আয় তাদের ছিল না, আর অধিক উপার্জন কবৃবারও কোনো পথ অনল খু’জে পেলে না। অনিল ধে তা’র মতন ছেলে পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ চালাতে পারে এ-সম্ভাবনা অনেলের মনে উদয়ই হ’ল না। তাই সে নিজের পড়া ছেড়ে দিয়ে খরচ কমিয়ে ভাইয়ের পড়ার খরচ যোগাতে প্রবৃত্ত হ’ল । - পৌষ মাস । দুপুর বেলা । অনল বাড়ীর রকে রৌদ্রে ব’সে নিজের ছেড়া কাপড়-জামাগুলো সেলাই করছে। ছিন্ন বস্ত্রের রন্থে-রন্থে, শীতের বাতাস তা’কে