পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] নষ্টচন্দ্র ক’রে বা অন্ত যে কারণেই হোকু এই প্রয়োজনীয় সামগ্ৰীটি যে তা’র কাছে চায়নি এর বেদন তা’র অন্তরকে পীড়িত করে তুলছিল। • তা’র কেবলই মনে হ’তে লাগল যে, গওয়ার অতিরিক্ত যদি না দিতে পারি তা হলে অনিলের প্রতি আমার সমস্ত স্নেহই ত মিথ্যা ; তা’র স্নেহ যে মিথ্যা নয় তা নিজের কাছেই প্রমাণ করবার জন্যে অনল চঞ্চল হ’য়ে উঠল। সঙ্গে-সঙ্গে কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথের ‘পণরক্ষা গল্পের বংশী ও রসিকের কথা মনে হ’য়ে অনলের মন -কেমন শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল । অনল জুতো-জামা পর ছেড়ে দিয়ে নিজের খরচ কমিয়ে ফেললে ; আহারের বাহুল্যও সে ত্যাগ করলে। কিন্তু এর পরেও সে হিসাব করে দেখলে যে,একটি টেনিস্র্যাকেট কিন্‌বার মতন টাকা জমতে এতদিন লাগবে যে ততদিনে এবারকার টেনিস খেলার সিজন ফুরিয়ে শেষ হ’য়ে যাবে। তখন অনলের হঠাৎ মনে পড়ল এবার সে প্রাইভেট এম্‌-এ পরীক্ষা দেবে বলে ফি-এর কতক টাকা সংগ্ৰহ ক’রে বাক্সর একেবারে তলায় ধেন নিজের লুব্ধ দৃষ্টির অগোচরে লুকিয়ে রেখেছে । কিন্তু সেও ত অতি সামান্য, সেই কয়েক টাকায় ত ভালো টেনিস র্যাকেট পাওয়া যাবে মা ! অনল পরীক্ষণ দেবার সঙ্কল্প ছেড়ে দিয়ে কোথাও একটি চাকুরি সংগ্রহ করবার জন্যে ব্যস্ত হ’য়ে উঠ ল , ভাইকে একট। সামান্ত খেলনা ঘূদি সে না দিতে পারে, তবে কিসের তার ভালোবাসা ? -অনলের ভাগ্যক্রমে একট। চাকরিও চট্‌ ক’রে জুটে গেল ; অনিলের মুরুবি বাস্কন্দিয়া গ্রামের জমিদার প্রফুল্লবাবুর মৃত্যুর পর তার জমিদারি কোর্ট সুব ওয়ার্ডসের অধীনে রাখবার জন্তে জেলুর ম্যাজিষ্ট্রেটু ইচ্ছা জানিয়েছেন। জমিদারের স্ত্রী চেষ্টা করছেন যাতে জমিদারি কোর্ট অব ওয়ার্ডসের অধীনে না যায় ; এই সূত্রে ম্যাজিষ্ট্রেটের সঙ্গে চিঠি লেখালেখি করুবার জন্যে একজন ইংরেজি ও আইন জানা লোকের আবশ্বক হয়েছিল। অনল এইকথা লোকপরম্পরায় শুনূবা-মাত্রই বাস্থন্দিয়ার জমিদারের প্রবীণ দেওয়ান রাজকুমার-বাবুর সঙ্গে গিয়ে দেখা করলে এবং মাসিক পঞ্চাশ টাকা বেতনের এই চাকৃরিটি সংগ্রহ ক’রে উৎফুল্ল হ’য়ে বাড়ী ফিরে এল। ጫእ গোমস্তার কাজে নিযুক্ত হ’ল । নিযুক্ত হ’য়েই সে কথাপ্রসঙ্গে তার সহকৰ্ম্মীদের কাছ থেকে জেনে নিলে, তা’রূ" বাংল-মাস হিসাবে মাইনে পেয়ে থাকে, না ইংরেজী মাস হিসাবে। যখন সে শুনলে যে বাংলা মাস হিসাবেই তাঁদের মাইনে দেওয়ার রীতি, তখন তা’র আনন্দও হ’ল চিন্তাও হ’ল—আর চোঁদ পনের দিন পরে সে মাইনে পাবে ভেবে তা’র যেমন আননাও হ’ল, তেমনই তের দিনের বেতন যা সে পাবে তা’তে অনিলের জন্যে র্যাকেট কেনা কেমন করে হবে ভেবে সে চিন্তিত এবং বিমৰ্ষও হয়ে উঠল। সে হিসাব ক’রে দেখলে, এই তের দিনের মাইনে যে ২২/১• আনা পাবে ; আরো এতগুলি টাকা হ’লে তবে একখানি ভালো র্যাকেট হয়। মাসকাবারে মাইনে পেয়েই অনল দেওয়ান রাজকুমারবাবুর কাছে একদিনের ছুটি নিয়ে কলকাতা রওনা হ’ল । তার মাইনের সব-টাকা, নিজের একৃজামিনের ফি-এর জন্য সামান্ত সঞ্চয় এবং প্রজাদের বাড়ীতে প্রত্যহ হাটহাটি করে আদায়-করা কিছু খাজনা একত্ৰ ক’রে মোট বায়ায় টাকা পৌনে তের আন ট্যাকে গু’জে সে কলকাতায় গেল,নিজে একটি র্যাকেট কিনে নিজের হাতে অনিলকে দিয়ে তার প্রফুল্লতাটুকু দেখে আসবে বলে। . কলকাতায় পৌছে পথ থেকে একটা র্যাকেট কিনে নিয়ে অনল অনিলের মেসে গিয়ে উপস্থিত হ’ল। অনল দূর থেকেই দেখলে,অনিল মুখ মান ক’রে তা’র কেওড়া-কাঠের তক্তপোষের উপর চুপ ক’রে বসে কি ভাবছে। দাদাকে কোনো খবর না দিয়ে অকস্মাৎ এসে উপস্থিত হ’তে দেখে অনিল মুখ আঁরো বিষন্ন ও বিরক্ত করে তাড়াতাড়ি উঠে দাড়াল । অনল অনিলের মুখের বিষন্নতা লক্ষ্য ক’রেও তা’কে মোটে আমল দেয়নি, কারণ অনিলকে তৎক্ষণাৎ প্রফুল্ল ক’রে তোলবার সোনার কাঠি সে ত সংগ্ৰহ ক’রে সঙ্গে ক’রে নিয়ে এসেছে। অনল ঘরে ঢুকে ঘরে আর কেউ নেই দেখে আরো খুশী হয়ে হাসিমুখে বললে—এই দেখু অনিল, তোর জন্যে কি নিয়ে এসেছি! অনল হাত বাড়িয়ে র্যাকেটখানা অনিলের সামনে ধরলে ।