পাতা:প্রবাসী (প্রথম ভাগ).djvu/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা । ] বিষয় বর্ণনা করিতেও গা শিহরিয়া উঠে । এক মৰ্ম্মভেদী নিরাশার ছবি রোগীর মুখে প্রতিফলিত হয়, যেন কোন মাসয় বিপদের শঙ্কায় তাহার হৃদয় ক্লিষ্ট । আহারে অরুচি, বাক্যালাপে অনিচ্ছা, জীবনে বিরাগ ; উচ্চ শব্দ, উজ্জ্বল আলোক, এমন কি চঞ্চল বায়ুতাড়নাও তাহার অসহ হয়। হতভাগ্য রোগীর মুখের দিকে চাহিলে মনে হয় আনন্দ ও শাস্তি তাহার হৃদয় হইতে চিরদিনের জন্ত বিদায় ইয়াছে। ক্রমে তাহার শরীরে এক অনির্দেশু যাতনা উপস্থিত হয় । সামান্ত উত্তেজনাতে ও তাহার সর্বাঙ্গে দারুণ আক্ষেপ ঘটে। এই অবস্থায় কিছু গলাধঃকরণ করা একেiারে অসম্ভব হইয় উঠে, এমন কি, সে কথা মনে হইলেও মসহ যন্ত্রণায় কণ্ঠনালী রুদ্ধ হয় । তৃষ্ণায় যখন প্রাণ যায়, রাগী জীবনের মায়া কাটাইয়া বারিপাত্র মুখে ধরে— কন্তু সে জল একবিন্দু ওষ্ঠে সংলগ্ন হইবামাত্র আতঙ্গে তাঙ্কার মন্তরাত্মা শুকাইয়া যায়, সৰ্ব্বাঙ্গ স্পন্দিত হইতে থাকে, এবং শাপগ্রস্তের ন্যায় তাহার দৃষ্টি স্থির ও মথন্ত্র বিকৃত হয়। ক্তমাংসের শরীর আর কত সচিতে পারে ? এইরূপে য়েক দিন অবর্ণনীয় যন্ত্রণা ভুগিয়া রোগীর প্রাণ দেহমুক্ত য় | সাধারণ চিকিৎসাতত্ত্ব এই উৎকট রোগের নিকট একোরে হার মানিয়াছে। এখন দেখা যাক পাষ্টর ইহার তীকারের জন্য কি করিয়াছেন। পাষ্টরের অসাধারণ }ধ্যবসায়ের প্রথম পুরস্কার রূপ এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হইল যে, ক্ষিপ্তকুকুরের স্নায়ুমণ্ডলীঠই তাহার রোগের তীব্র বিষ অবস্থিতি করে। সুতরাং য়ুমণ্ডলীর সাহায্যই এই বিষ দেহান্তরে প্রবর্তনের প্রকৃষ্ট পায় । তিনি পরীক্ষা দ্বারা দেখাইলেন যে, যদি কোন শকের করোটির কিয়দংশ উঠাইয়া, সেই স্থানের অনাবৃত স্তষ্কের উপর কোন ক্ষিপ্ত কুকুরের একটুকরা মেরুমজা piual cord) রাখিয়া দেওয়া যায়, তবে অল্পকালের ধ্যই সেই শশকেও, রোগের লক্ষণ সকল দেখা যায়। কটু চিন্তা করিয়া দেখিলেই এই আবিষ্কারের উপকারিতা পলব্ধি হইৰে । - প্রবাসী S89 তাহার লক্ষণ পরিস্কট হওয়া পর্যন্ত অল্পাধিক সময়ের ব্যবধান থাকে ; এই সময়কে “বিকাশীবসর" বলা যাইতে পারে। ক্ষিপ্ত কুকুর দংশনের পর সাধারণতঃ পাঁচ ছয় সপ্তাঙ্গের মধ্যেই জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় ; কিন্তু এই রোগের "বিকাশাবসরের” কোন স্থিয়ত। নাই। এরূপ ঘটনা বিরল নন্তে যে, কোন কুকুরের দংশন জনিত ক্ষত শীঘ্ৰ শুকাইয় গেল, রোগের কোন লক্ষণ কয়েক মাস—এমন কি –বৎসরেও দেখা দিল না ; “কুকুরটা তবে ক্ষেপ নয়” এই ভাবিয়া সকলে এক প্রকার নিশ্চিন্তু হইলেন । তারপর প্রতীকারের পথ একেবারে বন্ধ করিয়া দিয়া কোপা হইতে জলাতঙ্ক রোগ একেবারে গা ঝাড় দিয়া উঠিল ! আবার এমনও অনেক সময়ে ঘটে যে, কেরু সুস্থ কুকুরের কামড় খাইয়াই “হয় ত কুকুরটা ক্ষেপ” এই ভাবিয়া নানা প্রকার কাল্পনিক বিভীষিকা দেখিয়া থাকেন । জলাতঙ্গ রোগের অমূলক আশঙ্কায় তাহার হৃদয় একেবারে অবসন্ন হইয়া পড়ে। কখন কখনও এরূপ কাল্পনিক রোগের লক্ষণ সকলও সাংঘাতিক হইয়া দাড়ায়। তবেই দেখুন, কোন দংশনকারী কুকুর ক্ষিপ্ত কি না তাহার সন্দেহাতীত প্রমাণ লাভের কোন উপায় থাকা নিতান্ত আবখক। পাষ্টর উদ্ভাবিত পূৰ্ব্বেক্ত উপায়ে সহজেই তাঙ্গার মীমাংসা হইতে পারে ; সন্দেহজনক কুকুরের একটুকরা মেরুমজ" (spinal cord) সুরুয়ার সহিত মাড়িয়া তাঙ্গ কোন শশকের দেহে প্রবিষ্ট করাইয়া দিলে পর যদি এই শশকে রোগের লক্ষণ দেখা যায় তবেই জানিতে হইবে যে পরীক্ষিত কুকুরের দেহে জলাতঙ্ক রোগের বীজ ছিল । আর যদি সতর্কতার সহিত এইরূপ পরীক্ষার পরও কোন বিষের প্রমাণ না পাওয়া যায়, তবে ত আর কোন আপদই থাকে না । এখন দেখা যাক, জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসাপ্রণালী কিরূপ । সংক্ষেপে বলতে গেলে, পাষ্টর-প্রবর্ভুিক্ত তবের মূলমন্ত্র “বিষে বিষক্ষয়"। যেমন ব্যাধি তেমনি ব্যবস্থা । পাষ্টয় বুঝিলেন, ক্ষিপ্ত কুকুরের দেহজাত প্রচণ্ড বিষষ্ট