পাতা:প্রবাসী (প্রথম ভাগ).djvu/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা । ] জন্মানভাষা হইতে ইংরাজীতে অনুদিত গ্রন্থ দেখিতে হয়। আর আমাদের দেশে? এদেশে কলেজের বাহিরে কোন বিজ্ঞানের চচ্চা আছে ? পূৰ্ব্বকালে আধুনিক পাশ্চাত্য জড় বিদার কোনও বিদ্যাই এদেশে ছিল না, এখনও নাই । কিন্তু কার্যাকালে জীববিদ্যার অভাব বোধ করিতে হয় । আমাদের বৈদ্যক ঔষধে বহুবিধ উদ্ভিদের প্রয়োজন হয় । এক একটা তৈলের নিমিত্ত গন্ধমাদন অন্বেসণ করিতে হয় । প্রাচীন শাস্ত্রকারগণ বৃক্ষলতাদির নাম করিয়াহ নিশ্চিন্তু হই ছিলেন । তাহাদিগকে বিনিশ্চয় করিবার উপায় বলিয়া যান নাই । গোপাল, সন্ন্যা দীদিগকে জিজ্ঞাসা করিয়া গাছ চিনিয়া লইবার উপদেশ আছে । কিন্তু যোজনাস্তে ভাষা পরিবর্তনের সহিত রক্ষণতাদির নামের ও পরিবর্তন ঘটে। বোধ করি পূর্বকালেও নামের প্রভেদ ছিল । তথাপি আবখ্যক রক্ষাদির লক্ষণ দিবার প্রয়োজন শাসকারগণ ভাবেন নাই। ফলে দেখা যায়, এক একটা গাছ ঠিক করিয়া লইতে বিষম গোল োগে পড়িতে হয় । দুই একটা দৃষ্টান্ত দিলে বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধ হইবে । আমার কোন প্রবাসী বন্ধু কলিকাতার কোন কবিরাজ মহাশয়ের নিকট একটি ঔষধের ব্যবস্থ। অনিয়াছিলেন । সেই ঔসধ শ্বেত বেড়েলার পাতার রস দিয়া সেবন করিবার আদেশ ছিল । এখানে কোন ঔষধপত্র-বিক্রেত। শ্বেত বেড়েলা নাম শুনিয়া একটি ছোট গাছ দিল । এক কবিরাজ মহাশয় ও সেই গাছ দেখাইয়। দিলেন । বন্ধুর সঙ্গে শ্বে ত বেড়েলার দুই একটি শুষ্ক পাতা ছিল । তাহার হিত এই গাছের পাতার অনৈক্য দেখিয় তাহার মনে নোঙ্গ হয় । অামাকে জিজ্ঞাসা করাতে দেখিলাম, তাত। শ্বেত বেড়েলা কেন, কোন বেড়েলাই নহে। এই প্রকার রমের কারণ অনুসন্ধানে বুঝিলাম, ভূমি আমলকির চলিত ওড়িয়া নাম বাড়ী অর্ণওলা (অমলা) ; তান্ত হইতে বাঙ্গল বড়ে লা ওড়িয়ার বাড়ী অর্ণ ওলায় পরিণত হইয়াছে । দিলা বেড়েলার ওড়িয়া নাম বজু,মুলী । দেশভেদে একই গাছের এইরূপ বিভিন্ন নাম আছে । প্রাচীন শাস্ত্রকারগণ এক এক দ্রব্যের নানাবিধ দোষ গুণ শন করিয়া গিয়াছেন, কিন্তু দ্রব্যবিনিশ্চয় সম্বন্ধে বড় একটা উপদেশ করেন নাই। সেদিন কোন কবিরাজ প্রবাসী ২৭ মহাশয়ের অনুরোধে শঙ্খ দ্রাবক প্রস্তুত করিতে গিয়াছিলাম । কিন্তু তিনি যে কয়েকটি দ্রব্য অনিয়া দিলেন, তাতাদের রোগে কিরূপে দ্রাবক অস্ত্র প্রস্বত হইতে পরিবে, তাত। ভাবিঘ্ন পাই লাম না । ফলে তাতাক দেখিলাম । অস্ত্র উৎপন্ন না হইয়া একটি মিশ্র ক্ষার তই ল ৷ কিন্তু শঙ্খ দ্ৰব করিতে পারে বলিয়। নাম শঙ্গাদালক । অতএব বুঝা গেল দ্রবাবিনি-চয়ে কলিরাজ মহাশয় লম করিয়াছিলেন । আমাদের শরীরের প্রতিক্রিয়া দেখিয়া ঔষধের শুদ্ধি অশুদ্ধি বিবেচনা করা সমীচীন নছে। প্রসিদ্ধ মকরধ্বজ স্বণ-পারদ গন্ধক যোগে প্রস্থত হইবার উপদেশ । কিন্তু কোন বিচক্ষণ বুদ্ধ কবিরাজ মহাশয় বলিয়াছেন, ৮ মামা স্বর্ণ দিয়া মকরধূজ চাপা লৈ ১ মামাও গঙ্গাতে লাগে fক না সন্দেহ । বস্ব তঃ মকরধ্বজে স্বণ থাকিবেই কি না, থাকিলে কি অনুপাতে থাকিবে, তাহা নিদেশ না করিলে হিঙ্গ,লও মকরধ্বজ নামে বিক্রীত হইতে পরিবে । কালিদাস প্রভৃতি আমাদের প্রাচীন কবিগণ উপমার নিমিত্ত পুথিবীর কত ন বস্তুষ্ট দেখিয়াছিলেন। কিন্তু দুই দশটি বৃক্ষলতা ও প্রাণী লক্ট প্লাই তাহারা সন্তুষ্ট ছিলেন । বৃক্ষল তার উল্লেখ বরণ দেখিতে পাওয়া খায়, কিন্তু প্রাণিঘটিত উপমার বা বর্ণনার মত্যস্তাভাব বলিলে অত্বাক্তি হয় না । সংস্কৃতসাহিত্যানুরাগ কেচ এই সকল উপমা দৃষ্টান্ত সংগ্ৰহ করিলে আমাদের প্রাচীন দিগের জীবরাজ্য পরিদর্শন অবগত হইতে পারা যায়। কোন কোন পুরাণে গাছপালা জীবজন্তুর নাম আছে । মনু স তিতা ও কোন কোন পুরাণে উদ্ভিদ ও কোন কোন প্রাণার এক একটা স্থল বিভাগ আছে । বায়ুপুরাণে হস্তী প্রভৃতি কয়েকটি প্রাণীর উংসেধও আছে, কিন্তু অষ্ঠাত্র কেবল নামেই শেষ । অবগু অশ্ব ও হস্তী চিকিৎসা গ্রন্থ আছে । কিন্তু এ সকলে ও জস্থfদগের বিশেষ বিশেষ স্ব ভাব জানিতে পারা যায় না । বস্তুতঃ চারি দকে ঘরে লা চরে যে সকল জাগাড়। কীট পতঙ্গ দেখিতে পাই, তাছাদের সংস্কৃত নাম নাই, চলিত নামও নাই । এক রকম পোক, এক রকম গাছ, বলিয়াই জীববিদ্যার পরিচয় শেষ হয় । পল্লীগ্রামের লোকেরা বরং অপেক্ষাকৃত অনেক গাছপালা কীটপতঙ্গের নাম জানে, নগরবাসীরা এ বিষয়ে মারও অজ্ঞ ।