পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՏԳg প্রবাসী ১৩৪৩ আশেপাশে সমস্ত জায়গাটা ছাইয়া ফেলিয়াছে,–কুল-ফুল —ফুল-ফুল-কুল. আরতি নামিয়া নিজেই সুইচটা তুলিয়া দিল । অনেক দিনের নির্বাসিত আলো যেন আচমকা ফিরিয়া আসিয়াছে, ঘরটি ভরিয়া গেল । সামনেই আরতি দাড়াইয়া। দুষ্টামির হাসিতে-ভর ঠোটের একটা কোণ মুঠ দিয়া চাপা। চুল, ভ্র, চোখের পাপড়ি আর সিক্ত বসন হইতে শীকরের মুক্ত ঝরিয়া পড়িতেছে। এদিকে এত আলে, তবু কিন্তু ঘরটাতে কেমন একটা জড়ত, একটা অস্পষ্টতা। মদ্যজ ভাবিল-একি তাহার চোখের লজ্জার জন্য নাকি ?---অসম্ভব নয়,-- আরতি অলট্রা-মডার্ণ হইয় তাহাকে যেন অনেক পেছনে ফেলিয়া দিয়াছে,-—তাল রাথিয় ওঠা যায় না। লজ্জ ঠেলিয়া, নেহাৎ কিছু একটা বলিবার জন্যই বলিল, “আলোটা বেশ খুলছেন যে, বাদলের জলো হাওয়ার জন্যেই না কি বল ত ?” চপল হাসিতে আরতির বৃষ্টিতে-ভেজা মুখখানি ঝিকমিক্‌ করিয়া উঠিল । প্ৰগলভার মত বলিল—“শোন কথা !— আরতির সামনে কখনও আলো থোলে নাকি ?” চোথের কোণে কোথায় যেন নিজের অতি-বেহায়াপনার একটু লজ্জা, মুক্তির পাশে পাশে সঙ্কোচ, আর সেই হাসির কুল্‌কুল্‌ শব্দ, বর্ষার সঙ্গে ওর গলায় যেন ধারা নামিয়াছে। আরতির আবির্ভাবটা মন্থজের যেন অদ্ভুত ভাবে কি এক রকম মনে হইতেছিল, - অত্যন্ত মিষ্ট, প্রায় অসম্ভবের কোটায় ; অতিশয় আশ্চর্য্য ; প্রায় অলৌকিক, তাতারই মধ্যে আবার নিতান্তই অন্তরঙ্গ একটা ঘটনা তাহার জীবনের সম্পর্কে সব চেয়ে সহজ সত্য ;-এতই সহজ যে অপার্থিব হইয়া অনায়াসেই সম্ভব হইয়া পডিয়াছে, এমন একটি সত্যের আলোকে স্পষ্ট যে তাহার সামনে কাকা--তপস্যা—এলাম ঘড়ি —এ সবই যেন কুয়াশার মত অস্পষ্ট হইয়া গিয়াছে। মোটের উপর কি রকম একটা অনুভূতি-বাস্তবেও যেন স্বপ্ন, স্বপ্নেও যেন বাস্তব। এত পলকা একটা-কিছু যে সাহস করিয়া একটা প্রশ্ন করিয়া উঠিতে পারিতেছে না মনে হইতেছে আসার কারণ সম্বন্ধে কোন জবাবদিহি করিতে গেলেই সমস্ত ব্যাপারটি কোন দিক দিয়া যেন মিলাইয়া যাইবে। মমুজ একটু লজ্জিত হাসি হাসিয়া বলিল--"বসো আরু।” বর্ষার জলের মতই আরতি যেন হাসির স্রোত বহাইবার পথ খুজিতেছে। হাসিয়া হাসিয়া বলিল—“কোথায় —ঐ একফালি চেকিতে ? মাফ কর, আমার অত তপস্যার জোর নেই –পড়ে মরব, অত স্বল্প জিনিষ সহ হবে না। বরং তুমি ব’স ওটাতে, কিংবা শুয়ে পড়। আমি এই চেয়ারটাতে বসে যা করতে এসেছি তাই করি।” ব্যাঞ্জোট বাহির করিয়া কোলে রাখিল । মতুজ অতিমাত্র আশ্চৰ্য্য হইয় প্রশ্ন করিল- “ওটা কোথা থেকে বের করলে ? -ভিজে যায় নি ?” পাতলা কি একটা আস্তরণ, সেটা খুলিতে খুলিতে আরতি উত্তর করিল –“ন, ওটা আমার অস্তরের জিনিষ, প্রাণের পাশাপাশি লুকান ছিল, ভিজলে তো প্রাণও ভিজে যেতে পারত ?—নয় কি ? বল না-ও, তুমি আবার দর্শনশাস্ত্রের ছাত্র, ব’লবে প্রাণু জলে ভেজে না, অনলে পোড়ে না ।” দুষ্টামির হাসি হাসিয়া বলিল, “এক ধরণের অনলে কিন্তু পোড়ে প্রাণ, না গা ?” মহুজ হাসিয়া বলিল—“তুমি আজ হঠাৎ বড় বাচাল হ’য়ে উঠেচ আরু ।” “আজ বিকেল থেকে কেমন যেন হ’তে ইচ্ছে হয়েছে,—- তুমি অনেক কথা বাকী থাকতেই তখন উঠে এলে কিনা ; তার পর আবার এই চমৎকার বর্ষ রাত্তির-..” হঠাৎ সামনে একটু ঝুকিয় বলিল, “আচ্ছা তুমিও হতে না বাচাল, কাকার কাছে যদি আমন দাবড়ানিট না খেতে ? —বল না ?” কৌতুকায়ত দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল, চাদে জ্যোৎস্নার মত তাহাতে অফুরন্ত হাসি যেন জমান আছে । মতুঞ্জ অনুভব করিল ক্রমশ তাহার জিহবাটাও বেশ সবল হইয়া আসিতেছে,—বোধ হয় কাকার দাবড়ানির জেরটা কাটিয়৷ আসিবার জন্যই। হাসিয়া কি একটা বলিতে যাইতেছিল এমন সময় একটা দমকা হাওয়া আরতির কোলের ব্যাঞ্জোটার উপর দিয়া বহিয়া সমস্ত তারগুলা, একসঙ্গে সমস্ত পর্দায় চাপিয়া যেন ঝনঝনাইয়া দিল ; একটা তীব্র মিঠা ঝঙ্কারে সমস্ত ঘরটা যেন ভরাট হইয়া গেল। মন্ত্রজ বলিল—