পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কলিকাতায় রাজা রামমোহন রায় ভূমিকা বিষয়কৰ্ম্ম ত্যাগ করিয়া আসিয়া রাজা ১৮১৪ হইতে ১৮৩০ খ্ৰীষ্টাব্দ পয্যন্ত কলিকাতায় বাস করিয়ছিলেন। এই যুগে তাহার জীবনের মুখ্য ব্রত ছিল ব্রাহ্মধৰ্ম্ম ংস্থাপন এবং ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠ।। ১৭৬৯ শকের আশ্বিন মাসের । ১৮৪৭ খ্ৰীষ্টাব, সেপ্টেম্বর-অকুটোবর মাসের) “তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায়” ( দ্বিতীয় কল্প, প্রথম ভাগ, এ • সংখ্য: ) রামমোহন রায়ের এই যুগের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তাস্ত-সম্বলিত "ব্রহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার বিবরণ” নামক প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছিল ( ৮৯-৯২ পৃ: ) । এই প্রবন্ধটি নিম্নে অবিকল মুদ্রিত হইল। এই বিবরণ প্রকাশের ঠিক ১৭ বৎসর পূৰ্ব্বে রাজা রামমোহন রায় দেশত্যাগ করিয়াছিলেন, এবং ঠিক ১৪ বৎসর পুৰ্ব্বে ব্ৰিষ্টল নগরে দেহত্যাগ করিয়াছিলেন । তৎকালে “তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা" “তত্ত্ববোধিনী সভা”র মুখপত্র ছিল। ঐ সভার “১৭৬৮ শকের সাম্বৎসরিক আয়ু ব্যয় স্থিতির নিরূপণ পুস্তকে” অক্ষয়কুমার দত্তকে সভার গ্রন্থ-সম্পাদক উল্লেখ করা হইয়াছে । সুতরাং এই বিবরণ খুব সম্ভব স্বপ্রসিদ্ধ অক্ষয়কুমার দত্তের রচিত। এই নিরূপণ পুস্তকে দেখা যায়, তখন তত্ত্ববোধিনী সভার সভাপতি ছিলেন রমাপ্রসাদ রায়, একতম অধ্যক্ষ ছিলেন চন্দ্রশেখর দেব, এবং কৰ্ম্মাধ্যক্ষ ছিলেন রাধাপ্রসাদ রায় এবং দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর । রাধাপ্রসাদ এবং রমাপ্রসাদ রায় রামমোহন রায়ের দুই পুত্র, চন্দ্রশেখর দেব তাহার শিষ্য। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বনামধন্য মহর্ষি । তত্ত্ববোধিনী সভ রাজ রামমোহন রায়ের প্রিয় শিষু রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। এই নিরূপণ পুস্তকের মুখবন্ধে লিখিত হইয়াছে— “মহাত্মা রাজার সমকালবৰ্ত্তী ঐযুক্ত রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয়ের উপদিষ্ট কতিপয় ব্যক্তি ১৭৬১ শকে ( ১৮৩৯ খ্ৰীষ্টাব্দে ) ব্রাহ্মধৰ্ম্ম প্রদীপ্ত করিবার মানসে তত্ত্ববোধিনী নামী এই সভা স্থাপন করিলেন।" ( /- পৃ: } مbسحس-R۹ রামমোহন রায় এই বিবরণ লেখার সময় রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ জীবিত ছিলেন না। তিনি ১৮৪৪ সালে পরলোকগমন করিয়ীছিলেন । কিন্তু এক সময় তত্ত্ববোধিনী সভার সভ্যগণের রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের মুখে রামমোহন-কথা শুনিবার স্থযোগ ঘটিয়ছিল । রাধাপ্রসাদ এবং রমাপ্রসাদও রামমোহন রায়ের জীবনের এই ভাগের অনেক ঘটনা প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন। সুতরাং এই বিবরণ ঠিক সমসময়ে লিখিত না হইলেও নির্ভরযোগ্য । বলবত্তর বিরোধী প্রমাণ না পাইলে এই বিবরণের কোন অংশ অবিশ্বাস করা যাইতে পারে না । এই বিবরণে রামমোহন রায়ের রঙ্গপুর হইতে কলিকাতা আগমনের সময় দেওয়া হইয়াছে ১৭৩৫ শক ( ১৮১৩-১৪ খ্ৰীষ্টাব্দ ) । দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্ঞাতসারেই বোধ হয় এই শক দেওয়া হইয়াছিল। নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্ধৃত তাহার একটি বক্তৃতায় তিনি বলিতেছেন, “যখন কলিকাতায় তিনি ( রামমোহন রায় ) প্রথম বাস করেন, যখন তিনি ১৭৩৬ শকে একাকী বিদেশী উদাসীনের ন্যায় এখানে আইলেন, তখন কে তাহার সহযোগী হইয়া সাহায্য দিতে পারে ?** মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ কবে যে এই বক্তৃতা করিয়াছিলেন গ্রন্থকার তাহা বলেন নাই। খুব সম্ভব এই বক্তৃত “তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা"র বিবরণ প্রকাশিত হইবার অনেক পরে দেওয়া হইয়াছিল। সুতরাং এই ক্ষেত্রে তত্ত্ববোধিনীর লেখকের মতই বলবত্তর মনে করা কৰ্ত্তব্য । ১৭৩৭ শ কে রামমোহন রায় কলিকাতায় " বেদান্ত গ্রন্থ” বাদরায়ণের বেদান্ত স্বত্রের শঙ্করভাষা-সম্মত বাঙ্গলা অতুবাদ ) প্রকাশিত করিয়াছিলেন । এই গ্রন্থ রচনা করিতে এবং ছাপাইতে দুই বৎসর লাগ সম্ভব। সুতরাং যদি আহমান করা যায় রামমোহন রায় কলিকাত আসিয়া “বেদস্ত গ্রন্থ” রচনা করিয়াছিলেন তবে ১৭৩৫ শকে তাহার আগমন কাল স্বীকার

  • নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়,--"মহাত্ম রাজ রামমোহন রায়ের জীবন

চরিত, ৪র্থ সংস্করণ, ৩১৯ পৃ. i