পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপাঘাত শ্ৰীমনোজ বস্তু বাপ মারা গেলেন, কিন্তু বিষয় রইল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক চুকিয়ে স্থধানাথ অতঃপর নিশ্চিন্তে বৈঠকখানার ফরাসে জাকিয়ে বসবার উদ্যোগে আছে, এমন সময় গোমস্ত এসে আদালতের ছাপ-মারা শুপাকার কাগজপত্র সামনে গজির করল । সুধানাথ সভয়ে জিজ্ঞাসা করল—ব্যাপার কি ? —খাদাগাতির খামার নিলাম হয়ে গেছে । আট আনা পাৰ্ব্বণী নিয়ে কৰ্ত্ত জমিদারের সঙ্গে গোলমাল করেছিলেন ।-- এবার সদরে ছুটতে হবে। সদরে আদালত বাড়িটা বাইরে থেকে দেখা আছে, কিন্তু সাহস ক’রে স্বধানাথ কোন দিন ভিতরে ঢোকে নি। শোনা আছে, ওর টিকটিকিগুলোও বিনা ঘুষে ই করে না। কেমন ক'রে কি ভাবে যে সেই আদালতের মুখ থেকে খামার জমি উদ্ধার করে আনতে হবে, স্বধানাথ ভাবতে গিয়ে কৃলকিনার পায় না। - গোমস্ত বলল - দেরি করলে হবে না, বাবু। একটা ভাল উকীল দাড় করিয়ে হাকিমকে বুঝিয়ে-মুঝিয়ে পুনৰ্ব্বিচারের দরখাস্ত করে দিন গে। উকীলের কথায় আলো দেখা গেল। নীরদবিহারী উকীল ভাল, স্বধার পিসতুত ভাই, তালেশ্বরে বাড়ি, সদর থেকে ক্রোশ-তিনেক পথ মাত্র। নীরদ বাড়ি থেকেই শেয়ারের নৌকায় আদালত যাতায়াত করে। দিনটা বৃহস্পতিবার, রখের ছুটি । সে হিসাবেও সুবিধা। আজ গিয়ে ধীরেস্বন্থে নীরদের সঙ্গে যুক্তি-পরামর্শ করা যাবে ; দরখাস্ত দাখিল হবে আগামী কাল প্রথম কাচারীতে । নৌকায় যেতে হয়। তালেশ্বরের ঘাটে পৌছতে প্রায় সন্ধ্য। জ্যোৎস্ন রাত, কিন্তু মেঘের দৌরাত্ম্যে চাদ স্পষ্ট হয়ে ফুটতে পারে নি। নীরদের বিয়ের সময়-এই বছর পাচ-ছয় আগে—সুধানাথ একবার এ-বাড়ি এসেছিল । নূতন বৌদিদির সঙ্গে তখন যৎকিঞ্চিৎ আলাপও হয়েছিল। ইতিমধ্যে নীরদের এক খোকা হয়েছে। এবার স্বধানাথের বাপের শ্রাদ্ধের সময় এরা সবহুদ্ধ তাদের বাড়ি গিয়ে দিনকুড়িক ছিলেন। আসবার সময় লীলা নৌকায় উঠেও বার-বাব মাথার দিব্য দিয়েছিলেন—যেও ঠাকুরপো, আমাদের ওখানে ; যেও কিন্তু- স্বধানাথও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এত শীঘ্র সে প্রতিশ্রুতি পালন করবার আবশ্বক ঘটবে, তখন স্বপ্নেও ভাবা যায় নি । নদীর ঘাট থেকে কয়েক পা গিয়েই বাইরের উঠান । কোন দিকে জনমানবের সাড়া নেই। আবছা অন্ধকারে বাড়িট থমথম করছে । রেয়াক পেরিয়ে গোট দুই দিন খালি ঘরের ভেতর দিয়ে সে এসে পড়ল ভিতর-উঠান । তার পর আবার সুদীর্ঘ রোয়াক অতিক্রম ক'রে দালানে গিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল—যাক, বাচোখ-মানুষের চিহ্ন মিলেছে এবার, এবং ঘে-সে মাত্ষ নয়- স্বয়ং বৌদিদি ঠাকরুণ। এক পাশের টেবিলে উজ্জল পাঞ্চ আলো জলছে। বৌদিদি পিছন ফিরে দেওয়ালে টাঙানো অয়নায় নিবিষ্টমনে চুল ঠিক করছেন । স্বধানাথ পায়ের জুতা খুলে রেখে টিপি-টিপি এগুতে লাগল। একেবারে পিছনটিতে গিয়ে দাড়িয়েছে, বৌদিদির হুশ নেই। খোপায় সোনার কাটা ঝিকমিকঙ্করছে, সুধানাথ সাফাই হাতে সেটা তুলে নিতে গেল। নিলও ঠিক, ঐ সঙ্গে ক'গাছি চুল উঠে এল । এক বটকায় দু-তিন হাত সরে গিয়ে মুখোমুপি তাকাল– সৰ্ব্বনাশ-বৌদিদি ত নয়, আর একটা মেয়ে । মেয়েটি হতভম্ব ; সুধানাথও তাই ; হাতে সোনার কাটা ঝকমক করছে। সেদিকে লক্ষ্য ক’রে মেয়েটি চেঁচাতে সুরু করল—চোর ! চোর ! সৰ্ব্বনাশ ! তম্বদী কিশোরী মেয়ে-চুরির বমল হাতের উপর। পৃথিবী দ্বিধা হোক, সেই ফাকের মধ্যে সুধানাথ