পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ “ও, তাই বুঝি কাটা তোলবার জন্তে আমাকে এই বাঘ-ভালুকের মুখে এনে—” “বাঘ-ভালুকরা মামুযের চেয়ে খারাপ ময় গো-—তাদের দেখলে চেনা যায়। না, না ঠাট্ট নয় ; তুমি দেখে নিও এই জায়গা কি সুন্দর হয়ে ওঠে। কাটাঝোপ ?—ও আর ক'দিন । জঙ্গল একবার সাফ করতে সুরু হ’লে ক'দিনই বা লাগবে ? তখন দেপো । তখন পেছুলে চলবে না । তোমাকেই সব গড়ে তুলতে হবে। ইউরোপে যা-কিছু দেখে বেড়িয়েছ— সবার সেরা— একেবারে সম্পূর্ণ নারীপ্রতিষ্ঠান-পুরুষের সম্পর্কশূন্ত ।” “অর্থাৎ এই ব্ৰহ্মাণ্ডটি আমার কাধে চাপিয়ে দিয়ে হাল্ক হ’য়ে সরে পড়তে চান ত!” “ন, না স’রে পড়ার কোন কথাই হচ্ছে না। প্রথম দিকে আমরা তোমাদের সব বিষয়েই সাহায্য করব । বাইরের দিক থেকে তোমাদের যাতে কোন অস্থবিধে না হয় তা দেখব । তবে সে দেখ দু-এক বছরের বেশী না দেখতে হয় তার চেষ্ট! তোমরা ও করবে ।” “সেটি হচ্ছে না। যতটুকু স্থতে ছাড়ব ততটুকু উড়তে পাবেন। যেই স্বতে গোটাব অমনি ফর্ফ ক'রে এসে উপস্থিত হবেন। তা হলে "কলুর চোখ-বাধা বলদের মত জোয়ালটি ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে আপনি সরে পড়বেন, আর আমি ঘানিগাছের চারিদিক বেওজর পাক খেতে থাকুব, তা হচ্ছে না মশাই ।” • আসলে এই নিজন বনবাসে আবদ্ধ হয়ে কতকগুলি নিৰ্ব্বোধ অশিক্ষিত অবলার নিয়ত সঙ্গলাভের প্রসঙ্গ পাৰ্ব্বতীর মনে বিশেষ উৎসাহ সঞ্চার করছিল না। শচন্দ্রের এবং পাৰ্ব্বতীর কৰ্ম্মপ্রেরণার উৎস এক নয়। শচন্দ্রের বিরহ-বিধুর চিত্ত তার প্রিয়ার স্মৃতিকে সমুজ্জল ক’রে রাখতে চায় ; সুতরাং শচীন্দ্রের প্রেরণা তার অস্তরে । আর পাৰ্ব্বতী ? শচীন্দ্র আনন্দলাভ করবে এই জন্তেই তার উৎসাহ, সুতরাং যেখানে শচীন্দ্র অনুপস্থিত সেখানে তার পক্ষে কোন সরসতা নেই। “আমি ত আছিই । যখনই দরকার সব কাজেই আমাকে পাবে। সব গুছিয়ে দেব। দেখবে তখন " গোছানোর কথায় পাৰ্ব্বতী হে হে ক’রে হেসে উঠল । মানুষের মন さ.\ご位 বললে, “হয়েছে। আপনাকে আর কাজের ফিরিস্তি দিতে হবে না। যা না মুরদ তো আর জানতে আমার বাকী নেই। তবু আপনার অমুখের সময় লগুনে আপনার ঘরে গিয়ে অবস্থাটা যদি না দেখতাম । উঃ, ঘর তো নয়, যেন মোষের বাথান । আমার মত পিটুপিটে লোক কেমন ক’রে যে সেই ধর নিজে হাতে সাফ করেছিলাম তা ভাবতে নিজেই অবাক হয়ে যাই । ভাগ্যিস জরে আপনি বেহু'স ছিলেন। নইলে সেই দিনই সেই মুহূৰ্ত্তে বেরিয়ে গিয়ে টেমস্ নদীতে গঙ্গাস্নান ক’রে বিদায় নিতাম। আপনার ল্যাগুলেডী বুড়ী বাঙালী ব’লে নেহাৎ কাকুতিমিনতি করেছিল তাই । আর বাবা মারা যাবার পর কত দিন যে ঘর আর অফিস ছাড়া কারুর সঙ্গে তখন মিশতাম না । বোধ হয় অনেক কাল কোন বাঙালীর সঙ্গে কথাই কই নি ; তাই বোধ হয় একটু মায়া হয়ে থাকবে মনে মনে—” শচীন্দ্র কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে বললে, “সত্যি, কি অসম্ভব কাজ করেছিলে! তুমি না থাকলে তো আমার বাচবারই কোন সম্ভাবন ছিল না । সে রকম—” পাৰ্ব্বতী বাধা দিয়ে বললে, “হ্যা হ্য, যে দেশে পাৰ্ব্বতী নেই সে দেশে তে বিদেশী ছেলে বঁাচে না ?” বলে কথাটা উড়িয়ে দেবার অছিলায় সে প্রচুর হাসতে লাগল। এ হাসিতে তার লজ্জা ছিল, মুখ ছিল এবং বোধ করি দুঃখও ছিল—সে দুঃখ নিজের প্রতি পরিহাসের দুঃখ । শচীন হাসিতে যোগ না দিয়ে বলতে লাগল –“সে রকম অবস্থায় একটি অসহায় মেয়ে বিদেশে যে কি দুঃসাহসে ভর ক'রে এত বড় একটা ভার মাথা পেতে নিতে পারে আমি ভেবেই পাই নে ৷” “দুঃসাহস আবার কি ? প্রথমত লণ্ডন আমার বিদেশ নয়। তার পর বাবার মৃত্যুর সময় রোগচৰ্য্যা থেকে রোজগার পর্য্যন্ত সবই করতে হত। তা ছাড়া মাত্য দরকারে পড়লে কি যে না পারে তা এখনও বুঝে উঠতে পারি নি। বাবা যথন মারা যান বয়স হিসাবে তখন আমাকে বালিকা বলাও চলে। মাত্র সতের বছর। পেরেছিলাম তো ? কি নিদারুণ যন্ত্রণ ছিল তার তা এখন মনে করলেও হৃৎকম্প হয়। তার তুলনায় আপনারটা তো সহজই বলতে হবে। বিশেষত আপনার জ্ঞান ছিল না এবং আমার হাতে অর্থও