পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

さいごQ。 প্রবাসী SN○8○ ছিল তখন ; তার পর যখন জ্ঞান হ'তে সুরু হ’ল তখন কেমন ক'রে যেন সব সহজ হয়ে এসেছে।” বলে চুপ করে লণ্ডনের তখনকার দিনগুলি তার মনের চিত্রপটে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠাতেই বোধ করি, সে মুখ ফিরিয়ে দূরে এক জায়গায় যেখানে নদীটি ঘন বনের অন্তরাল থেকে হঠাৎ বের হয়ে বাক ফিরেছে তারই স্বযকিরণোঙ্গল চিকুণতার দিকে চেয়ে রইল। সেদিনকার কথা তার কাছে এখন স্বপ্নের মত, অথচ কত স্পষ্ট। তার স্বেচ্ছায় মাথায় তুলে নেওয়া গুরুভারের মধ্যে সে কি উন্মাদন, কি তীব্ৰ উদ্বেগ, তবু তার মধ্যে কত মাধুর্য, চিত্তের স্ফুটনোন্মুখ ভাবগুলির কি তীব্রমধুর মন্থন! আর আজ ! জীবনের সেই রসবন্যায় আজ নৈরাপ্তের ভাটার টান ধরেছে। আজ তার জীবন সমস্ত আনন্দময় পরিণতির আশীৰ্ব্বাদ থেকে বঞ্চিত। অস্তরে অস্তরে অবসাদের ক্লেদ জমা হয়ে উঠেছে। নৌকায় আজ পালের বাতাসের দক্ষিণ্য নেই, স্রোতের আনুকূল্য নেই ; যে তরণী সে বেয়ে চলেছে তার সঙ্গে তার যোগ বিচ্ছিন্ন ; সে তাকে ব’য়ে চলে না, টেনে নিয়ে তাকে জীবনপথে অগ্রসর হতে হয় শুধু গুণ দিয়ে। তবু তো এই যোগটুকুর মায়া সে কাটাতে পারে নি। তাকে চুপ ক’রে গষ্ঠীর হয়ে থাকৃতে দেখে শচীন্দ্র তার মনের চিন্তার গতি কল্পনা করবার চেষ্টা করতে লাগল । পাৰ্ব্বতীর মনের কথা তার কাছে নিতান্ত অগোচর ছিল না এবং তার মনের এই মেঘটুকু কাটিয়ে দেবার জন্যে অত্যন্ত সহজ স্বরে হালকা হাসির হাওয়ায় সেই প্রসঙ্গ উড়িয়ে দেবার জন্তে বললে, “করুণার তাড়নায় বুঝি আমার যা-কিছু কাগজপত্র, কাপড়, গেঞ্জি মায় নতুন পোষাকটা পৰ্য্যস্ত ঝোঁটিয়ে বের ক'রে দিলে ? মনে আছে, যখন প্রথম জ্ঞান হ’ল তখন কি রকম অবাক হ’য়ে গিয়েছিলাম তোমায় দেখে ?” এ সব কথা শচীন্দ্র পূৰ্ব্বেও আলোচনা করেছে ; তবু পাৰ্ব্বতীর প্রতি তার স্নেহ ও শ্রদ্ধাপূর্ণ অবনত চিত্ত এই আলোচনা-প্রসঙ্গে তার হৃদয়ের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যেন তুর্থ হ’ত না । এবং পাৰ্ব্বতীর সঙ্গে তার যে বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তার একটি নিবিড় সম্পর্ক প্রকাশ পেত, এই স্বত্রে বঞ্চিত-বিধুরচিত্ত পাৰ্ব্বতীও সেই পরম রমণীয় রসমাধুৰ্যটুকু থেকে আপনার প্রেমোন্মুখ ব্যথিত হৃদয়কে বঞ্চিত করতে পারত না । বিদেশে রোগশয্যায় শচীন্দ্রের কাছে সমস্ত জগতের মধ্যে যখন সে একমাত্র, তখনকার পরমানন্দময় দুঃখের বিচিত্র ছবি তার প্রেমাস্পদের চিত্তে প্রত্যক্ষ করে তুলে তাদের জীবনে তাদের দু-জনের নিবিড় নিঃসঙ্গ আত্মীয়তাটুকু মনে মনে উপভোগ করায় সে যেন এক রকম নিরুপায়ের পরিতৃপ্তি এবং সুখ লাভ করত। শচীন্দ্রের প্রচেষ্টাটুকু পাৰ্ব্বতীর বুঝতে বাকী রইল না এবং সলজ প্রয়াসে নিজেকে সংযত ক'রে নিয়ে একটু হেসে বললে—“আছে ।” শচীন্দ্র যে সৰ্ব্বপ্রথম কথাই বলেছিল ‘খোকা কোথায়? একথা দু-জনেরই মনে পড়ল। কিন্তু শচীন্দ্রের জীবনে তার মৰ্ম্মাস্তিক বেদনার কথাটিকে তার দু-জনেই এড়িয়ে গেল। শচীন বললে, “ভারি মুস্কিলে পড়ে গিয়েছিলে না ?” “মুস্কিল না ? আপনি কত প্রশ্নই ধে করেছিলেন । একটারও ত উত্তর দেবার পুজি ছিল না। কত বানান যায় বলুন ত ?” “তার পর ?” “তার পর দু-তিন দিন আবার একটু নিৰ্ব্বিঘ্নে কাটুল— বোধ হয় কথা বলবার ক্ষমতা বেশী ছিল না ; কিংবা মাথাটাই পরিষ্কার হয় নি তখনও। তার পর একদিন সকাল বেল মুখ ধোয়াতে গিয়ে দেখি আপনি ওঠবার চেষ্টা করছেন। তাড়াতাড়ি ধরে শুইয়ে দিলুম। অনেক ক্ষণ আমায় চেনবার চেষ্টা ক'রে বললেন, “তুমি কে?” মহা ফ্যাসাদে পড়লুম। নতুন যে বাসাটাতে আপনাকে এম্বুলেন্স ডেকে উঠিয়ে এনেছিলুম, জানেন তো ? সেখানে মিষ্টার এবং মিসেস সিনহা বলেই পরিচয় দিয়েছিলাম।" "জানি, নইলে দিত না ।” “হ্যা ; কারণ একদিন গল্প করতে করতে বলছিল যে বিয়ে করবে বলে বেশী ভাড়া আগাম দিয়ে একটা ছোকরা আর একটা মেয়ে এসে উঠেছিল। তার পরে তাদের নিয়ে পুলিসের হাঙ্গামে পড়তে হয়। বলছিল ‘অবিবাহিত স্ত্রী-পুরুষকে আমরা সেই থেকে ভাড়া দেওয়া একেবারে বন্ধ ক’রে দিয়েছি। ” “বটে ? তাই নাকি ? তার পর ?” বোধ হয় সে ল্যাগুলেডী জায়গাই