পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

之8冷 প্রবাসী SNLHNA অধিক অগ্রসর হওয়া সমীচীন কি না শচীন মনে মনে সেই আলোচনা করতে লাগল । এমন সময় অকস্মাৎ সমস্ত বাড়িটার জনহীন স্তব্ধ পঞ্জরতল বিদীর্ণ করে একটা তীব্ৰ আৰ্ত্ত চীৎকার শব্দহীন জমাট আকাশটাকে ফেড়ে তাদের বুকের রক্তপ্রবাহকে আড়ষ্ট ক’রে দিয়ে গেল। শচীন্দ্র দু-তিন পা হটে এল । তার হাতে পায়ে যেন খাল ধরে গিয়েছে । গুর্থাপুঙ্গব তে ‘দেও দেও’ বলে কাপতে কঁপিতে সেইখানেই জমি নিলে । ভোলানাথও চুপ করে দাড়িয়ে ভাবতে লাগল, “ডাকট কি জানোয়ারের ! না, আর কিছু ?” আকাশপাতাল ভেবেও তার বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতার কোন কুলুঙ্গীতে তার উত্তর খুজে পেল না। সকলেই স্তম্ভিত ; মুখে কারও রা-টি নেই । আওয়াজটা এত অতিমাল্লষিক যে, ধেলোকটা জুতোস্বদ্ধ, উপরে গিয়েছে তার কথা শচীন্দ্রনাথ চমক থেয়ে একেবারে ভুলেই গিয়েছিল। রহস্য সহ করা ভোলানাথের ধাতে পোষায় না। সে এক রকম বিরক্ত হয়েই উঠেছিল। তার উপর বাহাদুর সিংএর গোঙানী তার পক্ষে অসহ্য হয়ে উঠল । তার ঘাড়ের কোটটা ধ’রে এক ঝটিকায় তাকে সোজা দাড় করিয়ে দিয়ে দাতে দাত চেপে বললে, “চুপ করে দাড়া উল্লুক, দাত ঠকঠকাবি ত এক চড়ে মুখ ভেঙে দেব ।” শচীন্দ্রও নিজের কাপুরুষতায় লজ্জিত হয়েছিল । কিন্তু কি করবে কিছুই ভেবে উঠতে পারছিল না । এমন সময় আবার সেই চীৎকার । মনে হ’ল যেন পৃথিবীর বক্ষ নিদারুণ যন্ত্রণায় দীর্ণ করে এই বিলাপধ্বনি উঠছে । ভোলানাথ বললে, “এ মানুষের আওয়াজ বাবু, মেয়ে মানুষের । আমি দেখি।” বলে মুহূৰ্ত্তমাত্র বিলম্ব না ক'রে সে দু-তিনটে ক’রে সিড়ি ডিঙিয়ে উঠে গেল। অগত্য শচীন্দ্রও তার পিছু নিল । উপরে উঠে দেখলে চারি দিকে চওড়া বারান্দ দিয়ে ঘেরা প্রকাগু দালান। সামনের মাঠটা পেরিয়ে ঘন জঙ্গলের ফাকে ফঁাকে নদীর জল দেখা যায়। ভোলানাথ জুতোর দাগ দেখে দেখে সাবধানে এগতে লাগল। পিছনে শচীন্দ্ৰ— হাতের বন্দুকট বাগিয়ে-ধরা। ভয়ে এবং বিস্ময়ে মনের মধ্যে তখন তার পরিণত বুদ্ধির পাক মানুষটি প্রায় রূপকথার শিশুর পধ্যায়ে এসে ঠেকেছে। সম্ভব এবং অসম্ভব উদ্ভট কল্পনায় তার মস্তিষ্কের মধ্যে চলচ্চিত্রের তাণ্ডব চলেছে যেন । একটা বারান্দার মোড় ফিরেই ভোলানাথ বললে, “ঐ থে বাৰু।” একটা অদ্ভুত পোষাক-পরা লোক একটা প্রকাও থামের প্রায় আড়ালে নদীর দিকে মুখ ক’রে রেলিঙের উপর ঝুঁকে দাড়িয়ে আছে । মাথার মধ্যে কল্পনার ফিল্ম কটাং ক’রে কেটে গেল, এবং ভয়ের ভোজবাজাট। অকস্মাৎ পরদ থেকে ছটকে এসে যেন গা ঘেষে নেমে পড়ল । সে প্রায় ভয়াৰ্ত্ত বিকৃত রূঢ় স্বরে ইকি দিয়ে উঠল, “কে ? কে ওখানে ? বল, নহলে--” “নইলে’র অপেক্ষ না করে হঠাৎ মাথার টুপিট মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে প্রকাণ্ড একটা লম্বা কোট খুলতে খুলতে পাৰ্ব্বতা হি হি করে হেসে উঠল। “উ:, কি জবরদস্ত বীরপুরুষ আপনার । এই বীরপনা নিয়ে আবার আমাকে মেয়েমানুষ ব'লে ফেলে আসা হয়েছিল ! বীরত্বের উ৫েজনায়ু আজ আমারই দফা শেষ করেছিলেন আর কি !” নিরতিশয় বিস্ময়ে প্রায় নিৰ্ব্বোধের মত মুখ করে শচীন্দ্র তার দিকে চেয়ে বললে, “তুমি ! পাৰ্ব্বতী !” “হঁ্য, পাৰ্ব্বতীই তো । সারপ্রাইজটা নিত। স্তষ্ট জোলে: হয়ে গেল, যা: ! হুরী না, পরী না, রাজকম্বে না, এমন কি বাঘ-ভালুক পৰ্য্যস্ত নয়—” “সত্যি এলে কেমন ক'রে বল তো ? কি দুঃসাহস তোমার ! এলে কোথা দিয়ে ?” পাৰ্ব্বতী ঠাট্টা ক'রে বললে, “এলাম, উড়ে।” শচীন্দ্র বিস্ময়বিস্ফারিত প্রশংসমান চোথে তার দিকে চেয়ে তার আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে দেখতে লাগল। এই মেয়েটির সাহস, কৰ্ম্মপটুতা এবং স্বাভাবিক স্বচ্ছন্দতায় তার মনোহর বৈশিষ্ট্যের পরিচয় সে পূৰ্ব্বে প্রচুর লাভ করলেও এই অসম দুঃসাহসিকতা তার কাছে সে আশা করে নি। তার নিজের ভয়ের লজ্জা এবং পাৰ্ব্বতীর এই নারীদুলভ সাহসিকতা তাকে সত্যই অভিভূত করেছিল। বললে, “উড়ে এলে এত আশ্চৰ্য্য হতাম না । তবু আর যে কেমন করে আসতে পার তাও ত জানিলে।”