পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԳԾ, সময়ও দূর নহে যখন এ সকল ভুলভ্রাস্তি তিরোহিত হইবে। ভারতের ভবিষ্যৎ উজ্জল, সন্দেহ নাই। ১৭ই ডিসেম্বর আমি গোযানে পরে মোটর বাসে মন্দাপুর হইতে জলগাও আসিয়া সেইদিনই সাচী রওয়ানা হইলাম । ঐযুক্ত স্বথর পরদিন আসিবেন স্থির করিলেন। প্রত্যুষে সাচী পৌছিলাম। মনে হইল এই সেই স্থান যেখানে মহারাজ অশোকের পুত্ৰ মহেন্দ্র সিংহলে ধর্শ্বপ্রচারের জন্য চিরপ্রস্থান কারবার পূৰ্ব্বে কত দিন ছিলেন। এই সেই স্থান যেখানে বুদ্ধদেবের শুদ্ধতম ধৰ্ম্ম ( স্থবিরবাদ ) মগধ ছাড়িয়া বহু শতাব্দী বৰ্ত্তমান ছিল। সেই সময় মহান সারিপুত্র ও মোগল্যায়ন—তথাগতের এই দুই প্রধান শিষ্যের দেহাস্থি বিশাল ও সুন্দর স্তুপের মধ্যে রাখা হইয়াছিল, ইহা এখন লণ্ডনের মিউজিয়মের শোভা বৰ্দ্ধন করিতেছে । সাচী স্তুপ মুগ্ধ হইয়া দেখিলাম। ভূপাল রাজ্যের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের স্বন্দর ব্যবস্থা দেখিয়াও বিশেষ সন্তুষ্ট হইলাম। ১৯ হইতে ২৬ তারিখ পর্য্যস্ত কোচ-এ এক পুরানো বন্ধুর সঙ্গে থাকিলাম । “দশাৰ্ণ” দেশ শুষ্ক হইলেও এখনও কত মধুর ! আমাকে শিবরাত্রির পূৰ্ব্বেই মধ্যদেশের ( কুরুক্ষেত্র হইতে বিহার প্রাস্ত অঞ্চলের প্রাচীন নাম ) বুদ্ধচরণ পরিপূত বহুস্থান দর্শন করিতে হইবে। এই ভাবিয়া ২৭শে ডিসেম্বর আমি ফের বাবা রামউদারের “কালী কমলী” পরিলাম। সঙ্গে একটি ছোট ঝোল এবং ভিক্ষু আনন্দের সিংহল ফেরৎ বালতি। ২৭শে তারিথেষ্ট কনৌজ পৌছিলাম। ‘বে-ঘর’ কখনও ঘরের চিন্তা করে ? একাওয়ালাকে বলিলাম, শহর হইতে বেশী দূর না হয় এমন কোনও বাগানে পৌছাইয়ু৷ দাও । ছোট বাগানও পাওয়া গেল, সেখানকার পূজারী মহাশয় অকিঞ্চম সাধুর উপযুক্ত স্থান নির্দেশ করিয়া দিলেন। উন্মুক্ত আকাশের নীচে দুই বৎসর পরে* শীতের সহিত সাক্ষাৎ হইল, কিন্তু সে সাক্ষাৎ মধুর লাগিল না ! কনৌজ ? নুতন কনৌজ তো গোলাপজল না ছিটাইয়াই ‘সুগন্ধে ভরপূর ! তবে আমি তো মূতের ভক্তী সুতরাং

  • সিংহলে দুই বৎসর শীতভোগ হয় নাই । + অর্থাৎ অতীত স্থতির

প্রৰণসী SNరి8vరి ইহাতে পশ্চাৎপদ হওয়া চলে না। ২৮শে জল্প কিছু জল পান করিয়াই স্তুপের ধূলারাশি ঘাটিতে চলিলাম। এমনই তো দেশব্যাপী দারিদ্র্যের পীড়ন, প্রাচীন নগরীগুলির ভাগ্য যেন ততোধিক ক্লিষ্ট। কত শতাব্দী ধরিয়া পতন আরম্ভ হইয়াছে, জানি না আরও কতদূর পড়িবে। বিশেষত: শ্রমজীবীদের দুর্দশা বর্ণনাতীত। আমি চামার শ্রেণীর একজনকে পথপ্রদর্শকরূপে সঙ্গী করিলাম। সারাদিন ঘুরিবার মজুরী চার আন—সে তাহাই যথেষ্ট ভাবিল। কনৌজ কি একদিনে দেখা চলে, ন তাহার বর্ণনা এই প্রবন্ধের মধ্যে লেখা সম্ভব ? কনৌজ বর্ণনার মুখবন্ধই এক সুদীর্ঘ প্রবন্ধের উপযুক্ত। আমি অজয়পাল, রৌজ, টিলামুহুল্লা, জামামসজিদ ( সীতা রসোই ) বড়পীর, ক্ষেমকলদেবী, মখদুমজহানিয়া, কালেশ্বর মহাদেব, ফুলমতী দেবী ও মকরন্দ নগর, এই পয্যন্ত কোনক্রমে দেখিলাম । পুরাতন বস্তুর ভগ্নাবশেষের ছড়াছড়ি, অৰ্দ্ধ-সত্য কাহিনীর প্রচার, পুরাতন, সুন্দর কিন্তু খণ্ডিত-ছেদিত মূৰ্ত্তির প্রাচুৰ্য্য, এ সকলই ইতিহাসপ্রসিদ্ধ ভবা কান্তকুঞ্জের ক্ষীণ ছায় দেখাইতেছিল। ফুলমতী দেবীর তো চারিধারে বুদ্ধ প্রতিমার আধিক্য দেখিলাম । سخ ত্ৰহ লোকটিকে চার আন পয়সা দিলাম, সে আপনার প্রতিবেশী দিগের নিকট কিছু প্রাচীন মুদ্র সংগ্ৰহ করিয়া দিল, তাহারও দাম দিলাম। ফিরিবার জন্য এক্কা খুজিলাম, কিন্তু সেখানে ভাগ্য অপ্রসন্ন। কাছেষ্ট কয়েকজন মুসলমান ভদ্রলোক বসিয়াছিলেন, তাহার। বলিলেন, “আমুম শাহ, সাহেব, + কোথা হইতে আগমন করিলেন ?” আমি বলিলাম, “ভাই, দুনিয়ার ধুলা ঘাটিয় বেড়ায় যাহারা তাহাদের কি এ প্রশ্ন করা চলে ?” “জুমার নমাজ কি জামা মসজিদে সম্পন্ন করিলেন ? পান গ্রহণ করুল ।" “ধন্যবাদ ৷ পান খাওয়া অভ্যাস নাই, ফররুখাবাদ যাইতে হইবে।” ইহারা আমার লম্বা কালো আলখাল্লা দেখিয়াই এই ভ্রম করিলেন। ভ্রম কেন বলি, সনাতন হিন্দুও তো আমাকে

  • ভদ্র মুসলমান উচ্চশ্রেণীর ফকিরকে শাহ বলিয়া সম্বোধন করেন।