পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নূতন বড়লাটের প্রথম বক্ত তানিচয় এমন কোন বিষয় নাই এবং সরকারী চাকরিসমূহের --- く এমন কোন বিভাগ ( service ) নাই যাহার বিষয়ে ঐ নূতন বড়লাট লর্ড লিনলিথগো বোম্বাইয়ে পদার্পণ করিবার পর একাধিক অভিনন্দনপত্র পান। মুসলমানদের অভিনন্দনের উত্তরে তিনি বলেন, যে, ধৰ্ম্মবিশ্বাস ও শ্রেণী নির্বিশেষে জাতীয় একতাতেই ভারতের ভবিষ্যৎ শক্তি নিহিত ; সেই একতা যাহাতে জন্মে তাহার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিবেন এবং তদৰ্থে এই দেশের অধিবাসীদের প্রতি ধৰ্ম্মবিশ্বাস ও শ্রেণী নির্বিশেষে তিনি অপক্ষপাত ব্যবহার করিবেন। তাহা তিনি যথাসাধ্য করিলে ভালই হইবে। কিন্তু নূতন ভারতশাসন আইন ও চাকরির বঁাটোয়ার সম্বন্ধীয় ভারতগবন্মেন্টের রিজলু্যশন পক্ষপাতিত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত, এবং সেইগুলি অতুসারে কাজ করিতে তিনি বাধ্য। সুতরাং অপক্ষপাত ব্যবহার করিতে তিনি ইচ্ছা করিলেও প্রধান প্রধান বিষয়ে তিনি তাহা করিতে পারিবেন না । জাতীয় একতাতেই ভারতের ভবিষ্যৎ শক্তি নিহিত, ইহ খুব মামুলী সত্য কথা। কিন্তু সাম্প্রদায়িক বাটােয়ারার উপর প্রতিষ্ঠিত নুতন ভারতশাসন আইন জাতীয় একতার মূলে প্রচণ্ডতম আঘাত করিয়াছে। এই আইনের উচ্ছেদ বা আমূল পরিবর্তন না হইলে ইহা জাতীয় একতার পথে প্রবল প্রতিবন্ধক হইয়া থাকিবে । অতএব লর্ড লিনলিথগে যাহা বলিয়াছেন তাহা ভারতশাসন আইনের অনভিপ্রেত বিরুদ্ধ সমালোচনী । তিনি সকল সম্প্রদায়ের প্রতি সমান ব্যবহার করিবেন, এই উক্তিতে মিঃ জিন্না কোপ প্রকাশ করিয়াছেন । র্তাহার ভাবট এইরূপ—“আমরা এত রাজভক্ত ও হিন্দুরা এত রাজদ্রোহী, অথচ বড়লাট কি না বলেন উভয়ের প্রতি সমান ব্যবহার ” অবশ্ব এই কোপটাও অভিনযুমাত্র হইতে পারে ; কারণ, মিঃ জিন্নার মত বুদ্ধিমান লোকে নিশ্চয়ই বুঝে, যে, ভারতশাসন আইন মানিয়া অপক্ষপাত ব্যবহার করা অসম্ভব । বোম্বাই মিউনিসিপালিটীর অভিনন্দনের উত্তরে লাটসাহেব বলেন, ভূমিকৰ্ষণনিরত কৃষক চিরকাল যেমন এখনও তেমনই এই দেশের মেরুদণ্ড ও তাহার শ্ৰীসমৃদ্ধির ভিত্তিস্বরূপ । ইহা সত্য কথা, কিন্তু আংশিক সত্য । অতীতে ভারতবর্ষের ঐসমৃদ্ধির ভিত্তি যেমন ছিল রুযি, তেমনই ছিল বাণিজ্য এবং পণ্যশিল্পও। ভারতে কৃষির উন্নতি খুবই অবিশুক । কিন্তু শুধু কষির উপর নির্ভর করিয়া ভারত নিজের পূর্বত্র ফিরিয়া পাইবে না । তদৰ্থে শিল্পবাণিজ্যের উন্নতি বিস্তৃতিও একাস্ত প্রয়োজন। কিন্তু নূতন ভারতশাসন আইন এই উভয় দিকে উন্নতি করা আগেকার চেয়েও কঠিন করিয়া দিয়াছে । নিউ দিল্লীতে গিয়া লর্ড লিনলিথগো রেডিয়োর সাহায্যে দূরবর্তী স্থানসমূহেও শ্রোতব্য একটি বক্তৃত করেন। প্রধান বক্তৃতাটিতে কিছু উল্লেখ নাই – কেবল একটি বিষয় ছাড়া । তাহা শিক্ষা । সভ্য মাতুষদের শাসনাধীন যত দেশ আছে তাহার মধ্যে ভারতবর্ষে নিরক্ষর লোক শতকরা যত জন আঢ়ে এমন আর কোথাও নাই। শিক্ষা সম্বন্ধে যে-দেশের অবস্থা এরূপ লজ্জাকর, সে দেশের আর সব বিষয়েই বড়লাট উৎসাহ দিবার আশ্বাস দিয়াছেন অথচ সৰ্ব্ববিধ উন্নতির জন্য একান্ত আবখ্যক শিক্ষার বিস্তার ও উন্নতি সম্বন্ধে একটি কথাও বলিলেন না, ইহা কি বিস্মৃতি ও অনবধানতাবশত: ঘটিয়াছে ? তিনি চিকিৎস-বিদ্য, বিজ্ঞান, উচ্চ কারখান|-পণ্যশিল্প, ভারতীয় মুকুমার শিল্প ও সাহিত্য-সকল বিষয়েই কিছু-ল-কিছু করিবার আশা দিয়াছেন, অথচ শিক্ষা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ নিৰ্ব্বাক! শিক্ষার উন্নতি ও বিস্তৃতি ব্যতিরেকে বিজ্ঞান ললিতকলা সাহিত্য কি প্রকারে উৎসাহলাভ করিতে পারে ? ভারতশাসন আইন তিনি ব্রিটেন ও ভারতের সম্মিলিত বিজ্ঞত দ্বারা গঠিত বলিয়াছেন। ভারতবর্ষ এই আইনের জন্য মোটেই দায়ী নয়। ইহার জন্য প্রাপ্য সমুদয় প্রশংসাটা ব্রিটেন গ্রহণ করুন । এই বক্তৃতায় তিনি বোম্বাইয়ের একটি বক্তৃতার মত নিজের সম্পূর্ণ অপক্ষপাতিত্বের উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য আগেই বলিয়াছি । ভারতীয় সিবিল সার্বিসের সুশের উল্লেখ তিনি করেন । পৃথিবীতে সভ্য মানবের দ্বার। শাসিত দেশসমূহের মধ্যে ভারতবর্ষ নিরক্ষরত, দারিদ্র্য ও রপ্পতীয় সকলের সেরা । সুতরাং সিবিল সাবিসের সুৰ্যশ ভিত্তিহীন নহে । কংগ্রেস ওয়াকিং কমিটি কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে এবার এক জন বাঙালীকেও লওয়া হইয়াছে । তিনি ঐযুক্ত সুভাসচন্দ্র বন্ধ । তিনি এই কমিটির সভ্য হইবার নিশ্চয়ই যোগ্য । কিন্তু তিনি কারাগারে ; কমিটির অধিবেশনে উপস্থিত হইতে পারিকেন না । কমিটিতে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের প্রতিনিধি লণ্ডয়া হইয়াছে খান আবদুল গফফর খানকে । কিন্তু তিনি কারাগারে আছেন বলিয়া অন্য এক জনকে তাহার স্থানে কাজ করিবার জন্ত লওয়া হইয়াছে। বঙ্গের মুভায বাবুর বেলাতেও এই রীতি কেন অসুস্থত হইল না ? বাঙালীদের রসবোধ আছে ও তাহার। তামাসা বুঝে বলিয়া কি ?