পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অলখ-ঝোর শ্রীশান্ত দেবী y করুণা ঝির সঙ্গে আতা পাড়িয়া তাহার ছোট টুকুরীটি ভৰ্বি করিয়া মুধ যখন বাড়ী ফিরিয়া আসিল তথন সন্ধ্য হইয়া গিয়াছে। স্বৰ্য্যদেব সবেমাত্র অস্তশিখরের অন্তরালে লুকাইলেও, তাহদের মাঠের মধ্যের বাড়ী তাহারই মধ্যে একেবারে অন্ধকার হইয়া যায়। বাড়ীর পশ্চিম দিকে একটা পুকুর, তাহার পর প্রায় দুই শত বিধা হবিস্তৃত ধানের ক্ষেত। সুতরাং স্বৰ্য্যদেব যখন ধরণীর নিকট বিদায় লন, তখন গাছপালা বাড়ীঘরের আড়ালে একটু একটু করিয়া নামেন না, একেবারেই দিগন্তরেখার অন্তরালে চলিয়া যান। সামান্য কিছুক্ষণ পশ্চিম আকাশের মেঘে কিম্বা ধূলিজালে বর্ণচ্চটার খেলা দেখা যায় । তাহার পর অন্তহীন কালে অন্ধকারের স্তুপ মাত্র অবশিষ্ট থাকে। সুধা বাড়ী আসিয়া দেখিল তাহার ছোট ভাই শিবু, বাহির বাড়ীর খোলা দাওয়ায় একটা মাদুর পাতিয়া চিং হইয় গুইয়া আছে। মাথার উপর ধূমলেশহীন বিরাট নীল আকাশের অসংখ্য নক্ষত্ৰ জল জল করিতেছে, দিগন্তেব এক প্রাস্ত হইতে আর এক প্রাস্ত পৰ্য্যস্ত শুভ্ৰ জলহীন বালুকাময় নদীগর্ভের মত ছায়াপথ আকাশকে দ্বিখণ্ডিত করিয়া চলিয়া নিয়ছে। সুধাও চিৎ হইয়া শিবুর পাশে শুইয়া পড়িল । শিৰু আকাশের তারার দিকে তাহাৰ ছোট তর্জনীটি তুলিয়া বলিতেছিল, “এক তার লারাপারা,* দুই তারা...” মৃধা তাহাকে ধমক দিয়া বলিল, “কি হিজিবিজি বকছিস্ ? ঐ দেখ, একটা তারা থ'সে পড়ল।" প্রকাণ্ড একটা উল্কাপিণ্ড আকাশের চারি পাশে জলস্ত অগ্নিশিপার দীপ্তি ছড়াইয়া পশ্চিম দিক্ হইতে ছুটিয়া পূৰ্ব্ব দিকের মাঠের পারে গিয়া পড়িল । শিবু বলিল, “তারা পড়লে কি বলতে হয় বল দেখি ।”

  • লারা- নারী, ন-পার ।

স্বধী মাছুরের উপর উঠিয়া বসিয়া বলিল, “আহ, ভী যেন আর আমি জানি না । ছ’টি ব্রাহ্মণ, ছ'টি ফুল আর ছ'টি পুকুরের নাম করতে হয়। এই আমি বলছি, আমার সঙ্গে সঙ্গে তুইও বল। হরিহর বিষ্ণুরাম বেণু, রতনকেষ্ট, গোপী, ছোটকালী, তারপর গে গোলাপ, দোপাটি, টগর, জবা, শালুক ..” শিবু বলিল, “দিদি, তুষ্ট কিছু জানিস না। এগাধটি ব্রাহ্মণের নাম করতে হয় ।” মৃধা বলিল, “উনি মহা পণ্ডিত ভটbাধ ঠাকুর এলেন আমার ভুল ধরতে ! বল দেখি সাপের নাম করলে রাঘিরে কি বস্তে হয় ?” শিবু বলিল, “নারায়ণং নমস্কৃতj.” স্বধা গালে তাত দিযু! বলিল, “৪ম, কোথায়ু ঋণ আমি ? ওই বুঝি বলতে হয় ? বলতে হয় অস্তি কস্তি মুনি মাত, ভগিনী বাহকী থl, জরৎকারু মুণি পত্নী মনসাদেশী নমস্থতে ।" সুধার সংস্কৃতের তুল বুঝিবার ক্ষমতা শিপুর ছিল না, স্বতরাং শিবু হার মানিয় বলিল, “আচ্ছ, তাই গে। তাই কিন্তু আমার যে বড় ঘুম পেয়েছে। চল বান্নাঘরে ঘাই ভাত হয়েছে ত থেয়ে ঘুমোই গে।" তাহারা এতক্ষণ বাহির বাড়ীর দাওয়ায় গুইয়াছিল। মৃধা টুক্রীট এবং শিশু মাছুরট টানিতে টানিতে ভিতর বাড়ীতে আসিয়া ঢুকিল । শুইবার ঘরের কোলে ঢাকা বারান্দ, তাহার পর উঠান, উঠানের ওপারে রান্নাঘর । উঠানের মাঝখানে মস্ত একটা পেয়ার গাছ, দুই দিকের বারান্দার পর্দার কাজ করে । রান্নাঘরের পোড়ে বারান্দার তলায় উবু হইয়া বসিয়া মা ও পিসিমা ছেলেদের ভাত বাড়িতেছিলেন । পেয়ারা গাছের আড়ালে হারিকেন লন্ঠনের স্বল আলোয় তাহাদের মুখ ভাল করিয়া দেপা ধায় না। মা'র মাথার কাপড়টা পড়িয়া গিয়াছে, মস্ত গোপাট উচু হইয়া আছে,