পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশষগড় পিসিমার স্বল্পকেশ মাথার উপর থান কাপড়ের ঘোমটী । বাতির আলোয় তাহদের মাথার ও খোপার গঠনের বড় বড় কালে ছায়া সুধার চোখে ভারি সুন্দর ঠেকিতেছিল। সত্যকারের মায়ের সৌন্দর্ঘ্যের চেয়ে এই ছায়াময়ী মা’র রূপই যেন তাহার মনের রূপতৃষ্ণাকে বেশী তৃপ্ত করিল। মা’র হাতনাড়ার সঙ্গে ছায়ার হাত নড়িতেছে, মা হাত হাতে উঠিতে বসিতে ছায়াও উঠতেছে বসিতেছে, স্বধা মুগ্ধ হইয় তাহাই দেখিতেছিল। মৃধা বায়োস্কেপ কখনও দেখে নাই কিন্তু দেখিলেও তাঁহাতে ইহার চেয়ে বেশী আনন্দ বোধ হয় সে পাইত না । শিবু নাকিস্বরে বলিয়া উঠিল, “দিদি, মাকে ডাক না । তার আমি বদূতে পাচ্ছি না।” স্বধ চমকিয় ডাকিল, “ম গে, শিবু, ধে ঘুমিয়ে পড়ল, ভাত কথন দেবে ?” মা মহামায়া মাটির ঠাড়ি হইতে হাত করিয়া ভাত তুলিয়। শালপাতার উপর পরিবেশণ করিয়া কালে ঠাড়িট রান্ন ঘরের উচু তাকে বিড়ার উপর তুলিয় রাথিলেন। তারপর এদিকে আসিয়া শিবুর চোখে জলহাত বুল্লাহয় তাহাকে টানিতে টামিতে ভাত খাওয়াইতে লইয়া চলিলেন । পিসিম হৈমবর্তী মোটাসোটা ভারী মাতুষ । তাহার চালচলন কিছুই মেলায়েম নয়। গলার আওয়াজটা পুরুষের মত মোট, কথা বলেন ধমক দিয়, ঠাটেন দুৰ্ম্ম দুৰ্ম্ম করিয়া প। ফেলিয়, কিন্তু তাহার মনের ভিতরটা অন্ত রকম। কর্তব্যবোধের তাড়নায় তিনি মাচুষের সেবা-যত্ন করেন, কি মমতার আধিক্যে করেন, তাহা তাহার ব্যবহার দেখিয় শুনিয়া কেহ বুঝিতে পারে না। কিন্তু তাহার সেবার নৈপুণ্যে মুগ্ধ হইয়। সকলেই তাহার উপর খুশী থাকে। শিবু ভাত খাইতে থাইতে সুধার গায়ের উপর ঢলিয়া পড়িতেছিল, চোখ দুইটি তাহার তথন সন্ধ্যার পদ্মের মত মুদিত হইয়া আসিতেছিল। মহামায় তাহার ডান হাতটা বঁ হাত দিয়া নাড়া দিতে দিতে আদর করিয়া বলিলেন, “লক্ষ্মী সোনা আমার, একবারটি সোজা হয়ে ব’সে এই কটি গরাস থেয়ে ফেল, তার পরেই ঘরে গিয়ে শোবে ।” কিন্তু কে বা শোনে তাহার কথা ? শিবু স্বধার কোলের উপর উপুড় হইয়া পড়িল । হৈমবতী ঝোলের বাটি নামাইয়া রাখিয়া نیا--س-&85 অলখ-ঝেণর סאסאס\ দুৰ্ম্মাম, করিয়া শিবুর সামনে আসিয়া দাড়াইয়া মোট গলায় তাড়া দিয়া বলিলেন, “ও ছেলে ! ভাত ভাত ক’রে অস্থির ক'রে শেষে এক কঁড়ি ভাত নষ্ট করতে বসেছিস্ ? দাড় আমি পরাণ মোড়লকে ডেকে দিচ্ছি এথ খুনি ; তার বাক৷ মুখটা নিয়ে তোকে এসে এক কামড় দেবে।” শিবু তড়াক্ করিয়া লাফাইয়ু উঠিয়া বসিল। পরাণ মোড়লকে ভয় না করে এমন ছেলে এ তল্লাটে একটিও ছিল না । বিশেষতঃ রাত্রে তাহার নাম শুনিলে ত ছেলেদের বাবাদেরই হংকম্প উপস্থিত হইত। মসীকৃষ্ণ পরাণ বয়সকালে মস্ত পালোয়ান ছিল, এখনও তাহার শৌর্ষ্য বীৰ্য্যের বিশেষ অভাব হয় নাই। কিন্তু শুধু এই কারণেই যে ছেলেরা তাহাকে ভয় করিত তাহ নয়। একবার মেীবনীর শালবনে শালগাছ কাটিতে কাটিতে সন্ধ্যা হইয়া পড়ায় পরাণ বুনো ভালুকের হাতে ধরা পড়িয়ছিল। যুদ্ধে সে ক্রুদ্ধ ভালুককে হার মানাইয়া নিজের প্রণটি লইয়াই ফিরিয়াছিল, কিন্তু হিংস্র ভালুকের নখরাঘাতে তাহার নাক মুখ চোখ কোনটাই আর পূর্ববং যথাযথ স্থানে ছিল না । ঘা সারিয়া উঠিবার পর তাহার যা কিম্ভূতকিমাকার চেহারা, হইল তাহাকে ভালুকের চেহারার চেয়েও অনেক বেশী ভয়াবহ বলা যাইতে পারে । সন্ধ্যাবেলায় এ অঞ্চলের ছেলেদের ভয় দেখাইবার জন্য তখন হইতে আর কাল্পনিক জুজুর আবাহনের প্রয়োজন হইত না । একবার পরাণ মোড়ল বলিলেই হইল । ছেলের মনে পিসির কথায় হয়ত আঘাত লাগিয়াছে ভাবিয়া মহামায়। তাড়াতাড়ি কথাটার স্থর ফিরাইয়া বলিলেন, “ভাত ক'টা চট করে আদায় ক'রে নে শিবু, আমি আজ তোর পাশে শুয়ে অমূল্যরতন শাড়ীর সমস্ত গল্পট। বলব।” পোকা বলিল, “তুমি রোজ রোজ ভূল ক’রে অন্য অন্য রকম বল । ও আমি শুনতে চাই ন৷ ” মহামায় হাসিয়া বলিলেন, “তুই ভুল দেখলেই শুধরে দিবি, তাহলেই ত হবে ?” ভিতর বাড়ীর পাচিলের পিছন হইতে অগণ্য জোনাকীর আলোকে উজ্জল ময়ূরের পেখমের মত একটি স্বডৌল বন্য কুলগাছের মাথা মৃধাদের ভাত খাইবার আসরের দিকে তাহার সহস্ৰ চক্ষু মেলিয়া যেন তাকাইয়াছিল। স্বধা মুখে