পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NඵHNH প্রবাসী ゞNご8Nご ভাত তুলিতে তুলিতে বলিল, “ম, জোছন রাতে এত জোনাক কোথায় চলে যায় ?” হৈমবর্তী রাগিয়া বলিলেন, ‘মামার বাড়ী যায় ! তোকে কবিয়ানা করতে হবে না, ভাত খা দিখি, হাবা মেয়ে।” স্বধা মুখ নামাইয়া ভাতে মন দিল। হৈমবতীর ছেলে মৃগাঙ্ক হাই স্কুলে পড়ে। সে নীরবে এক মনে স্তুপীকৃত অন্নরাশি শেষ করিবার চেষ্টায় লাগিয়াছিল, হৈমবতী তাহার পাতের দিকে তাকাইয়। বলিলেন, “মুখে কি রা বেরোয় না? শুকৃনো ভাতের কঁাড়ি গিলছিস্—ডালট কি ঝোলটা চাইতে পারিস না ?” মৃগাঙ্ক বলিল, “একটু পোস্তর অম্বল দাও।” “রাতে কে তোর জন্যে পোস্ত-আমড়া রাধতে বসেছিল ?” বলিয়া হৈমবতী পাতের উপর দুই হাত কড়াইয়ের ডাল ঢালিয়া দিলেন। দিবার সময় এমন ভাবে হাত ও মুখ ঘুরাইলেন যেন নিতান্ত অনিচ্ছাসত্ত্বেও ছেলেটাকে তাহাকে খাইতে দিতে হইতেছে। ডাল দিবার পর পরম অবজ্ঞাভরে হাতাটা বাটির ভিতর ছুড়িয়া ফেলিয় দিয়া ধপাস করিয়া খানিকট কুমড়ার ঘণ্ট তাহার পাতে ফেলিয়ু তিনি একেবারে ঘরের ভিতর ঢুকিয়া পড়িলেন । মহামায়া পিছন হইতে ডাকিয়া বলিলেন, “ঠাকুরঝি, শত ত পড়ব পড়ব করছে। আজ রাতেই কথাখানা পেতে দিও, নইলে সেলাই করতে বড় দেরী হবে ।" ঠাকুরঝি ঘর হইতে বলিলেন, “না দিয়ে আর পার কই ? তোমাদের হাড়ে ত আর ওসব হয় না। খালি লিখিপড়ি আর লিথিপড়ি ” মহামায়া বলিলেন, “বিদ্যে বুদ্ধি ত তোমার মত নেই-ই ভাই, তার উপর কালই আবার রতনজোড়ে যেতে হবে, আর তোমাকে দিয়ে থাটিয়ে নেবার সময় কই ?” হৈমবর্তী কথার জবাব দিবার আগেই স্বধা চোখ বাহির করিয়া ব্যস্ত হইয়া বলিল, “ও মা গে, কালই মামার বাড়ী যাব আমরা ? তবে ছোট পুটিকে যে বলেছিলাম তার সঙ্গে পুতুলের বিয়ে দেব, সে আর হবে না ?” হৈমবতী ভারী গলায় বলিলেন, “আশ্বিন মাসে বিয়ের লগ্ন নেই। তুমি ফিরে এসে অম্ৰাণ মাসে মেয়ের বিয়ে দিও " মামাবাড়ী যাইবার আসন্ন সম্ভাবনায় স্থধার মন এতই উত্তেজিত হইয়া উঠিল, যে, সে-রাত্রে তাহার চোথে ঘুমঠ আর আসিতে চাহে না । মামাবাড়ীতে ঠিক তাহার বয়সী থেলিবার সঙ্গী সব সময় থাকে না। কিন্তু মামাবাড়ীর আদরযত্ন, সেখানকার নূতনত্ব, ইত্যাদির কথা ভাবিলে খেলার সার্থীর অভাব একেবারেই মনে থাকে না । তাছাড়া বাড়ীতেও তাহার খেলার সার্থী কালেভদ্রে জোটে। শিবুই প্রধান ও প্রায় একমাত্র সম্বল । কালই সকালবেল তাহদের যাত্র করিতে হইবে । ম| হইলে দশ-বারো ক্রোশ শালবন, পলাশবন ও ধানের ক্ষেত পার হইয় পৌছাইতে তাহদের সন্ধ্য হইয়া যাইতে পারে । বছরে একবার এই মামাবাড়ী যাওয়ার সময়ই তাহদের গরুর গাড়ী চড় । বাকি সময় পাড়াগেয়ে দেশে এক জোড় প ছাড়া আর কোনও বাহন তাহদের অদৃষ্ঠে জুটে না। গরুর গাড়ীর ছুইয়ের তলায় পুরু করিয়া খড় ও তাহার উপর নীল ডোরাকাটা সতরঞ্চি পাতিয়া শুষ্টয়া বসিয় যাইতে ভারি মজা । কিন্তু অসুবিধাও কতকগুলা আছে। গাড়োয়ানটা কিছুতেই গাড়ীর পিছন দিকে বসিতে দিতে চাহে না । অথচ সেই দিক্‌ দিয়াই পাৰ্ব্বত্য বনের পথ, বালুকাময় ক্ষুদ্র স্বচ্ছতো নদী, নাল বঁধের জলে শুভ্ৰ কুমুদ ফুল, সাঁওতাল পথিক, কালে কালে পাথরের অতিকায় হস্তীর মত বিরাট ঢিপি, সবুজ ধানের ক্ষেত, ইত্যাদি সবই দেখিতে পাওয়া যায় । লোকটা কেবলই বলে, “ওদিকে গাড়ী ভারী হয়ে যাবে গো, সামনে এসে বস।” সামনে সব কয়ট মাতুষ কি একসঙ্গে বসিতে পারে কখনও ? পারিলেও গাড়োঙ্গানের পিঠের আড়ালে বসিয়া কোনই সুখ নাই। পাশে যা একটু ফাক পাওয়া যায়, শিবু একলাই তাহা দখল করিয়া রাখে। তাছাড়া গরুর গাড়ী৯ চড়ারও বিপদ আছে। স্বধার বেশ স্পষ্ট মনে আছে, গত বৎসর মামাবাড়ী যাইবার সময় গরুগুলার ভয়ে সে পিছন দিক দিয়া গাড়ীতে চড়িতে গিয়াছিল । দুই হাতে গোল চুইট ধরিয়া যেই না গাড়ীতে পা দেওয়৷ অমনি সামনের ডাওফুিট আকাশমুখী হইয় সমস্ত গাড়ীট স্বধাকে লইয়া পিছন দিকে হুমণ্ডি খাইয়া পড়িল । কাজেই তাহার পর গরুর লাথির ভয় থাকা সত্ত্বেও সামনের দিক্ দিয়াই তাহাকে গাড়ী চড়িতে হইল ।