পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Nごa@ প্রবাসী S එ8ළු অক্ষুণ্ণ থাকবে। মানুষের অস্তরের যা নিতান্তই পবিত্র, একান্তই যা তার একলার বস্তু, তাকে অপমান করবার নিষ্ঠুরতা থেকে মুক্তি দিলে আপনার বীরত্ব.." বলতে বলতে আর কথা খুজে না পেয়েই বোধ হয় তার উত্তেজিত কণ্ঠ সহসা নিৰ্ব্বাক হ’ল। এক মুহূর্তের জন্য নিজেকে তার অসহায় হৃতসৰ্ব্বস্ব ব'লে মনে হ’তে লাগল এবং মনে মনে সে সেই মুহূৰ্ত্তে শচীন্দ্রের প্রতি কঠিন নিষ্ঠুর হয়ে উঠল। একটু থেমে আবার বললে, “পৌরুষ দেখাবার এমন সুযোগ আপনারা কিছুতেই ছাড়তে পারেন না, না ?” শচীন্দ্র এই কৌতুকরসমণ্ডিত দ্বিপ্রহরের নির্জন ঔপন্যাসিক পরিবেশে উৎসাহিত হয়ে নিশ্চিন্ত লঘুচিত্তে আনন্দিত কলকণ্ঠে বাক্যের পর বাক্য রচনা ক'রে চলেছিল । পাৰ্ব্বতীর এই অভূতপূৰ্ব্ব উত্তেজনার কারণ অকস্মাৎ তার অপ্রস্তুত মস্তিষ্কের মধ্যে অকুমান করতে না পেরে প্রথমে সে অবাক হ’ল এবং এক সময় ক্রমশ কঠিন ক’রে তোলা তার শ্লেষের স্বরে অত্যন্ত আহত হয়ে খানিক ক্ষণ চুপ করে থেকে শচীন বললে, “পাৰ্ব্বতী, তুমি জান ইচ্ছাপূৰ্ব্বক তোমাকে কোনরূপ আঘাত করা আমার পক্ষে একান্ত অসম্ভব । তোমাকে আমি অপমান করতে পারি, একথাও তোমার মনে আসা সম্ভব হ'ল কেমন ক'রে ? তুমি ত জন---" বলতে বলতে থেমে, নিজেকে একটু শাস্ত ক’রে নিয়ে গভীর ব্যথিত কণ্ঠে সে আবার বললে “তুমি নিশ্চয় জান, যে, সাধ্যপক্ষে তোমার দান গ্রহণ করার আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে পারি এমন নিৰ্ব্বোধ আমি নই। তবু যদি এমন হয়ে থাকে যে তোমার মত মেয়েকেও আমার জীবনে গ্রহণ করা ঘটুল না, তবে সে দুর্ভাগ্যের চেয়ে বড় দুঃখ আমার কি আছে ? তা নিয়ে তুমি যদি আমায় শ্লেষ করতে চাও, কর! কিন্তু—” বলে শচীন চুপ করে গেল । শচীন্দ্রের কথার স্বরে যে হতাশার বেদন ধ্বনিত হ’ল পাৰ্ব্বতীর অভিমানে আত্মবিস্মৃত চিত্ত তার আঘাতে চেতনা লাভ করলে । সে যে তার অসংযত উক্তির দ্বারা শচীন্দ্রকে কঠিন আঘাত করবে, পূৰ্ব্বে একথা পাৰ্ব্বতীর মনে হয় নি। কিন্তু তার প্রত্যাখ্যাত আত্মমর্যাদা বহুদিন অস্তরে অস্তরে তার ধৈৰ্য্যের বঁধিকে বোধ হয় ক্ষয় ক’রে এনেছিল—কিংবা শচীন্দ্রের কল্পনার মধ্যে তার প্রতীক্ষ্যমান প্রেমের এমন অবিকল রূপ পরিস্ফুট হয়ে উঠেছিল যে সহসা মালতীর মনে হল যেন তার হৃদয়ের রক্তে লালিত প্রিয়তম গোপন কামনাটিকে শচীন্দ্র ইচ্ছা ক’রেই নিল্লজ আঘাত করেছে। শচীন্দ্রের বেদনার স্বরে সে সচেতন হয়ে নিজের অসংযমের জন্যে মনে মনে দুঃখ ও লজ্জা বোধ করতে লাগল। শচীন্দ্রের মুখের দিকে সে আর চাইতে পারলে না। সময়োচিত কোন কথা পাৰ্ব্বতী খুঁজে পেলে না এবং কোন প্রকার ক্ষমা প্রার্থনার কথা বলাকে তার প্রগল্ভত বলেই মনে হ'ল। সে মাথা নীচু করে, রোদবৃষ্টিতে ক্ষয়ে-যাওয়া রেলিঙের ধারগুলি নখ দিয়ে ক্রমাগত খুঁটতে খুটতে তার আকণ্ঠ উদ্বেলিত অশরাশিকে প্রাণপণে ফেরাতে চেষ্টা করতে লাগল। বহু দিনের বহু ঘটনার মধ্য দিয়ে বিদেশে তাদের জীবন এমন একটি সমাজশাসনশষ্ঠ অতীতের মাঝখানে কেটেছে যে সেকথা বাংলা দেশে প্রচারিত হ’লে সমস্ত বাংলা দেশের মধ্যে একদিনে তারা বিশ্রত হয়ে উঠত। দুটি অভূক্ত নরনারী পরস্পরের নিকট নিজেদের অন্তরাত্মাকে সম্পূর্ণ নিরাবরণ ক'রে উদঘাটিত ক'রে দেবার অজস্র অবসর পেয়েছে। কত নির্জন বনচ্ছায়াকীর্ণ উপত্যকায়, কত নদীতটে, পৰ্ব্বত গুচায় তারা যে পরস্পরের নিরবচ্ছিন্ন সঙ্গলাভে পরস্পরকে সহজ আনন্দে পরম সম্পদ রূপে অনুভব কবেচে তার ইয়ত্ত নেই। হারানো-পত্নীর স্মৃতিভারে তখন অনন্যচিত্ত । তাকেই স্মরণ ক'রে বস্তুত তার এই নারীকল্যাণের উদ্যম । শচীন তার এবং সেই উদ্দেশ্যেই তার দু-জনে ইউরোপের নানা নারীপ্রতিষ্ঠান দেখে বেড়িয়েছে। পাৰ্ব্বতীর সঙ্গলাভে তার ক্ষুব্ধ উন্মন চিত্ৰ যেন একট পরমাশ্রয় লাভ করেছিল । তবু তখনও সে আশ্রয় পদ্মপত্রে শিশিরবিন্দুর মত চঞ্চল ; বাতাসের লীলায় যখন খুশী সে খসে পডতে পারে । পরিণতযৌবন পাৰ্ব্বতীর চিত্ত তখন স্নেহের আদানপ্রদানের অপরিসীম তৃষ্ণায় মুখর। শচীন্দ্রের বিরহবিক্ষুব্ধ অন্তরকে সে তার স্নেহের সহস্রধারায় অভিষিক্ত ক’রে দিয়েছিল। শচীন্দ্রও সহজে শিশুটির মত আত্মসমর্পণ করেছিল তার এই সৰ্ব্বগ্রাসী মেহের কাছে। তবু পাৰ্ব্বতী চিরদিনই অন্তভব করেছে যেন শচীন্দ্রকে সে কিছুতেই নিজের প্রেমবিমূঢ় চিত্তের আয়ত্তের মধ্যে পায় নি। মায়ের মত সেবা,