পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NDIడి এই আহলাদে ছেলে নিয়ে । মিছরী দিয়েছে বলে দুধ আর মুখে করবে না—একটু সর মুখে ঠেকলে বাবুর খাওয়া মাথায় উঠল। আর বিটাও হয়েছে বাহাজুরে। এত করে বলে দি তা একটা কথা যদি মাথায় থাকে। খা বলছি মুখপোড়া ছেলে । এদিকে মাছ খুব চিনেছেন। মাছ একবার দেখলে হয় ।” দেখারও অবসর হ’ল না। শুনেই হৃদয় তার উথলে উঠল । “মাত দে” বলে তার টুকটুকে এক কোষ ছোট হাতটি মালতীর দিকে উচু করে ধরলে। মালতী হেসে বললে, “ওমা দেখেছ, কি দুষ্ট ছেলে। ঠিক বুঝতে পেরেছে।” বলে তার হাতটা মুখে চেপে ধরে চুমোয় ভরে দিলে। “মাত, দে।” “ই্য, মাছ দেবে বইকি ? তা হবে না ; আগে দুদু খাও, তবে মাছ পাবে।” কমল বললে, “ওকে রোজ র্কাচ সদ্য-দোয়া গরম গরম ছাগলের দুধ খাওয়ানো হ’ত । তাই ও জাল-দেওয়া কি মিষ্টি-দেওয়| দুধ খেতে পারে না । আমাদের এক জন পুরনো চাকর ছিল, সে-ই ওকে নিয়ে দিনরাত থাকৃত । এক মুহূৰ্ত্ত যেন ওকে চোখের আড় করতে পারত না । এখন কেমন করে আছে কে জানে ?” বলতে বলতে আবার তার চোখ ভরে এল । মালতী ক্ষুন্ন স্বরে বললে, “এমন ক’রে রাতদিন কাদলে কি দেহ বইবে দিদি ? উনি ত কত চেষ্টা করছেন। একটা স্বরাহ ঠাকুর করে দেবেনই। “তোমরা আমার যা করছ বোন, ইহজন্মে তিল তিল ক'রে প্রাণপাত করলেও তা শোধ হবার নয় । চোখের জল বাধা মানে না, তাই ঝরে।” ব’লে আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বললে, “খুব দ্যাওটা হয়েছে তোমার, খোকন।” “না হবে না আবার’ বলে দুধের বাটিটা নামিয়ে খোকনকে কোলের মধ্যে চেপে ধরে মালতী বললে, “কেটে ফেলব না হাত দুটো বেইমানী করলে ।” তার পর মস্ত একটা চুমো দিল । ר כי দিন তাদের চলে যাচ্ছিল এক রকম । নন্দলাল প্রায় সমস্ত দিন বাইরে বাইরে কাটায় । তার পরিশ্রম অনেক বেড়ে গেছে। উপার্জনের নূতন নূতন পন্থা তাকে অবলম্বন 公 প্রবাসী $N98\రి করতে হয়েছে অধিক অর্থাগমের চেষ্টায়। তবু এ পরিশ্রমে তার ক্লাস্তি নেই। তার নূতন দায়িত্ব তার মধ্যে যেন নবীন উৎসাহের সঞ্চার করেছে। অর্থের অভাবে যাতে কোন রকমে কমল ও তার শিশুটির কোন কষ্ট না হয় তার জন্য সে নিজেকে কোন বিশ্রাম দিতে প্রস্তুত নয় । সন্ধ্যায় সে পরিশ্রমে ক্লাস্ত হ’য়ে বাড়ী ফেরে, কিন্তু সে ক্লাস্তিতে কোন অবসাদ নেই। খোকনের জন্যে সে নিত্যই কিছুনা-কিছু শিশুচিত্তহরণ উপহারস্রব্য নিয়ে আসে এবং বাড়ীতে প্রবেশ ক’রেই সে ডাকে খোকন ? ডাক ঠিক জায়গায় পৌছতে দেরি হয় না। খোকনের উচ্ছসিত আনন্দ যে অন্য একটি চিত্তে সহজেই সঞ্চারিত হয়, সেটি সে সুস্পষ্ট অনুভব করে । ঐটুকুতেই তার আত্মপ্রসাদ । একথা অস্বীকার করা যায় না যে ভগবান স্ত্রীলোককে স্বভাবতই আত্মরক্ষণশীল অর্থাৎ সন্দিহান স্বভাবের ক'রে স্বজন করেছেন । সমস্ত বহিঃপৃথিবীর অজস্র লোভনীয় আহবানের বিরুদ্ধে, অন্তঃপুরের অন্তরালে আবদ্ধ থেকে, এমন সকল লোভনতর ইন্দ্রিয়-পরিতৃপ্তিকর আয়োজনে নারীর নিজেকে ব্যাপৃত রাখতে হয় যাতে ক'রে বহিমুখীন প্রলুব্ধ পুরুষের বিক্ষিপ্ত ইন্দ্রিয়াকুভূতিকে সংহত এবং গৃহায়ুগত করে। এ বিষয়ে মালতীর স্বাভাবিক অশিক্ষিত পটুত্ব অন্য অনেক রমণীর অপেক্ষ অল্প ছিল, এ কথা মানতেই হবে। যদিচ রসনার সরস পথে, দেহ-মনের মুখস্বাচ্ছন্দ্য বিধানে সে নন্দের তৃপ্তিসাধনের আয়োজনকে কখনও শিথিল হ'তে দেয় নি ; তবু এক্ষেত্রে তার দৃষ্টিকে যথেষ্ট সতর্ক রাখা যে সম্ভব হয় নি তার গুরুতর কারণ মালতীর নিজের মধ্যেই প্রচ্ছন্ন ছিল । কমল এবং তার সস্তানের প্রতি আন্তরিক করুণ ও নিবিড় স্নেহে মালতী আপনার অস্তরকে উন্মুখ ক’রে দিয়েছিল। বিশেষত: তার সন্তানহীন মাতৃহৃদয়ে কমলের শিশুপুত্রকে সে এমন গভীর মমতায়, এমন একটি পরম লোভনীয় আবেশময় আবরণে আত্মসাৎ ক’রে নিয়েছিল যে এর থেকে কোন প্রকারে বিচ্ছেদ সম্ভাবনার আভাসও চিস্তার মধ্যে গ্রহণ করা মালতীর পক্ষে সম্ভব ছিল না । অতএব-চিত্তের আদিমতম সংস্কার আত্মরক্ষণশীলতা এবং তারই সহজাত স্ত্রীজাতিসুলভ সুহ্ম সন্দেহতৎপরতা