পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গে মাৎস্য্যন্ত্যায় আমরা জানিতে পারি যে পুণ্ডবৰ্দ্ধনভূক্তি নামক প্রদেশ গুপ্ত-সাম্রাজ্যের অধীন ছিল ; স্বতরাং অনুমান করা যাইতে পারে যে পুণ্ডনগর বা পুণ্ডবৰ্দ্ধন, অর্থাৎ বর্তমান মহাস্থানগড় এই ভুক্তির প্রধান নগর ছিল । কিন্তু খ্ৰীষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর পর কোন কারণে এই স্বধৃপ্ত সৌধরাজি ও জনপরিপূর্ণ নগরী ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় । ইহার প্রমাণও খননের সময় পাওয়া গিয়াছে। নগর-প্রাকারের অবস্থা পৰ্য্যবেক্ষণ করিবার জন্য প্রযুক্ত দীক্ষিত মুনির ঘোন নামক একটি জঙ্গলাকীর্ণ মৃত্তিকান্ত,প খনন করেন। খননের ফলে এই স্থানে প্রাকারের একটি অন্তরগ্র কোণের ( e-entrant angle ) oft বুরুজের ( bastion ) ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। প্রাকারের নিৰ্ম্মাণকৌশল অতীব স্বন্দর । দুষ্ট দিকের বাহাকার ( surface ) ইষ্টক দ্বারা নিৰ্ম্মিত করিয়া শূন্যগর্ভটি টুর্ণ ইষ্টক দ্বারা ভরাট করা হইয়াছিল। প্রাচীরটি প্রায় ১১ ফুট চওড়া। ঐযুক্ত দীক্ষিতের মতে প্রাকারের সৰ্ব্বোচ্চ অংশটি পাল-যুগে নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল, কারণ ইহাতে দৈর্ঘ্যে ৮ হইতে ৯ ইঞ্চি এবং প্রস্থে ৫ হইতে ৬ ইঞ্চি এবং ২ ইঞ্চি স্থল ইষ্টক ব্যবহৃত হইয়াছে ; এইরূপ ইষ্টক পাল-যুগের বহু সৌধে দেখিতে পাওয়া যায়। সুতরাং দেখা যাইতেছে যে সপ্তম শতাব্দীর পরে কোন সময়ে কেবল নগরের হৰ্ম্ম্যরাজি নহে, নগর-প্রাকারও ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়াছিল, তাহার ফলে এই পুণ্ড বৰ্দ্ধন নগর প্রাচীন বাংলার নগর-সমুহের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব হারায়। পাল-সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হইবার পর বাংলায় সুশৃঙ্খলা স্থাপিত হইলে এই স্বপ্রাচীন নগরী পাল-বংশীয় নৃপতিদের কৃপালাভে বঞ্চিত ন হইলেও আর তাহার হৃত গৌরবত্র ফিরিয়া পায় নাই । পাল-যুগ হইতে ইহা এক নগণ্য প্রাদেশিক শহরে পরিণতি লাভ করে এবং কালক্রমে বিস্মৃতির কুত্ত্বটিকায় আত্মগোপন করে | এখন কোন সময়ে এই নগর সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, তাহার বিচার করা যাক। পূৰ্ব্বে বলা হইয়াছে হর্ষের সাম্রাজ্য বিলুপ্ত হইবার পর বাংলা দেশের বিভিন্ন অংশ অন্তত চারি বার বহিঃশত্রু কর্তৃক বিজিত হইয়াছিল। কান্তকুক্তরাজ যশোবর্ষণের বিজয়কাহিনীর মধ্যে মগধ, গৌড় ও বঙ্গের উল্লেখ পাওয়া যায়, কিন্তু বাংলা দেশের উত্তরাংশে অবস্থিত vరిట్రఫా প্রাচীন কালের পাধ্যপন্তস্তু পরবর্তী কালে নিৰ্ম্মিত মন্দিরে সোপানশ্রেণীরূপে ব্যবহৃত হইয়াছে। পুণ্ড বৰ্দ্ধন নগর বা ভুক্তির নামগন্ধও নাই। ললিতাদিত্যমুক্তাপীড়ের ইতিহাসেও পুণ্ডবৰ্দ্ধনের নাম নাই। কহলণমিশ্রের রাজতরঙ্গিণীতে জয়াপীড়ের এই নগরে বসবাসের উল্লেখ আছে বটে, কিন্তু এই স্থানে অবস্থান কালে তিনি যে নগরের কোন ক্ষতি করিয়াছিলেন তাহার কোন প্রমাণ অদ্যাবধি পাওয়া যায় নাই। কামরূপরাজ শ্ৰীহৰ্ষদেবের গৌড় ওড় ও কলিঙ্গ বিজয় অতি সাধারণ ভাবে বর্ণিত হইয়াছে, সুতরাং এই কাহিনী সত্যই ঐতিহাসিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত অথবা কবির কল্পনাপ্রস্থত তাহার বিচার এখন পৰ্য্যস্ত হয় নাই। কেবলমাত্র রাখোলী-আবিষ্কৃত শৈলবংশীয় নরপতি দ্বিতীয় জয়বৰ্দ্ধনের তাম্রশাসনে পুণ্ডবৰ্দ্ধনের উল্লেখ পাই । কেবল তাহাই নহে, ইহাতে স্পষ্টই বলা হইয়াছে যে, দ্বিতীয় জয়বৰ্দ্ধন বৈরী-বিদারণ-পটু পৌণ্ডাধিপকে নিহত করিয়া সমস্ত পুণ্ড দেশ অধিকার করিয়াছিলেন।* স্বতরাং অনুমান করা যাইতে পারে যে জয়োদীপ্ত শৈলসেনাকটক প্রাচীন পুণ্ডনগর উদয়ষ্ট করিয়াছিল। দীর্ঘকাল এই অবস্থায় পড়িয়া থাকিবার পর প্রথম পাল-যুগে এই নগরে আবার বোধ হয় জনসমাগম হইয়াছিল। T • JEpigraphia Jndica, vol. IX, p. 14. + এই প্রবন্ধেয় ছবিগুলি ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব-বিভাগের সৌজন্তে প্রকাশিত হইল।