পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগষাড় ভগবান না হ’লে আছেন কি করতে । আপাতত: সে রেল-কোম্পানীর যে বাড়ীখানি এই ক'টা মাস থাকবার জন্য পেয়েছে, সে-রকম বাড়ীতে নিজে বাস করবার কল্পনা ভবতোষ স্বপ্নেও কখনও করে নি; তাই মাইনে যতই সামান্ত হোক এবং চাকরি যতই অল্পদিনের জন্য হোক, ভবতোষের বিশ্বাস সে খুবই স্বখে আছে। ক্ষুদ্র পল্লীগ্রামের অনাথা বিধবার পুত্র সে । ছেলেবেলায় সকালবেলা স্কুলে যাবার আগে মাসের অর্ধেক দিন শুধু দুটি মুড়ি খেয়ে সে স্কুলে যেত—ভাত জুটত না । দীর্ঘপথ পদব্রজে অতিক্রম ক’রে শিশুপুত্র সারাদিনের জন্য বিদ্যালয়ে যাবে, তার আগে তাকে দুটি ভাত দিতে পারার অক্ষমতার দুঃখ দুঃখিনী মায়ের বুকে শেলের মত বিধত । কিন্তু তিনি মুখে হাসি এনে মুড়ি কয়টি জলে ভিজিয়ে ভিক্ষালব্ধ আখের গুড়টুকু তার সঙ্গে মেখে ছেলেকে কোলে টেনে নিয়ে বলতেন, “দেখ দিকিনি কেমন খাসা নরম করে মিষ্টি করে ফলার মেখেছি আজ। আয় আমি খাইয়ে দিই—তুই বাছা নিজে থেতে বসলে বড় কাপড়ে-চোপড়ে মাধিস। আয় বোস এখানে।" ছেলে আবদার করে বলত, “না ও নরম মিষ্টি ফলার আমার ভাল লাগে না রোজ রোজ । কে তোমাকে মাথতে বললে জল দিয়ে ? আমি ঘি দিয়ে গোলমরিচ দিয়ে শুকনো মুড়ি খাব ৷ কাল নন্দ খাচ্ছিল ইস্কুলে—আমি দেখি নি বুঝি ? সে-ই ভাল থেতে, এ বিচ্ছিরি ।” কিন্তু বলতে বলতে ভবতোষ মায়ের প্রসারিত বাহুর সমেহ আহবানে ধীরে ধীরে এসে মায়ের কোলে বস্ত, তার পর তfর মুখে নরণে রাক্ষসীর মরুণ দিয়ে তুলে তুলে ভাত খাবার গল্প শুনতে শুনতে কখন যে সেই মুড়ি কয়টি শেষ ক'রে ফেলত তা জানতেও পারত না। থালা থালি হ'লে মা হেসে উঠতেন, “কি রে বিচ্ছিরি না ফলার ? কোথা গেল তাহলে থালা থেকে। ওম, শেয়ালে বুঝি খেয়ে গেল গে সব-আমাদের খোকন ত খায় নি। বিচ্ছিরি ফলার ত ও থায় না ।” তার পর ডবতোষের রাগের পালা। সে কোন দিন চেচাত, কোন দিন হাত পা ছুড়ত আর ক্রমাগত বলত, “তুমি ভারী দুষ্ট মা—রোজ আমাকে তুলিয়ে ভুলিয়ে ঐ জল-দেওয়া মুড়ি খাওয়াবে। খাব না ত—কাল তুলনায় Nつ*(r থেকে আমি আর কথখনো খাব না। ছাই গল্প তোমার ; ঐ পুরনো নরণে রাক্ষসীর গল্প রোজ রোজ কেন বল আমাকে তুমি ? কাল থেকে আমি মুড়িও খাব না, ও ছাই গল্পও শুনব না–কথখনো শুনব না, শুনব না—দেখো তুমি । রোজ ভুলিয়ে দেবে আমাকে—দুষ্ট মা তুমি, বিচ্ছিরি মা । কত দিন থেকে বলছি মাছের ঝোল ভাত ন-রোধে দিলে কিছুতে খাব না আমি–কথা শোনা হয় না। খাব না ত— মাছের ঝোল ভাত ন-রোধে দিলে কাল থেকে কিছু খাব না ।" কিন্তু সে-সব অনেক দিনের কথা । সে মা-ও আর নেই, সে ফলারও আর খেতে হয় না। এখন মাছের ঝোল ভাত ভবতোয় রোজই খেতে পায়—অস্তত মাস দেড়েক থেকে ত পাচ্ছেই—কিন্তু সে খাওয়া আর ভবতোষের এখন পছন্দ হয় না। স্ত্রীকে বলে, “রোজ রোজ মাছের ঝোল রাধ কেন বল ত ? বিচ্ছিfর লাগে আমার ঝোল খেতে । পেয়াজ দিয়ে লঙ্কা দিয়ে মাছের কালিয়া রাধতে পার না ? একটুখানি ঘি দিও কিন্তু কালিয়ায়—ন হ'লে ভাল হবে না।” ভবতোষের স্ত্রী-ভাগ্য ভাল । মেয়েটির মুখখানি সুন্দর ; বড় বড় কালো চোখ দুটি যখন তুলে সে তাকায়, মনে হয় ওঁর চোখ দুটি যেন আয়না । ওর মায়ামমতাভর শাস্ত, একান্ত পরিতৃপ্ত মনের ছায়। ওর চোখে এতই পরিষ্কার ভাবে পড়েছে যে মনটি না দেখে শুধু চোখ দুটি যেন ওর দেখবারই জো নেই। একপিঠ চুল অযত্নবিন্যস্ত—ক্রমাগত চোখেমুখে এসে পড়ে। রং ফস নয়, স্নিগ্ধ। অতি দরিদ্র পিতার অনাদৃত সপ্তম কন্তু সে ; নাম আরাকালী। ছোটবেলায় আল্লাকালী কখনও একখানা আস্ত কাপড় পরেছে ব'লে তার মনে পড়ে না। বড়দির কাপড়ের আধখানা টুকরায় মেজরি বস্ত্রের ছিন্নাংশ জুড়ে সেলাই ক’রে মা তাকে কত সময়ে পরতে দিতেন এবং সে-কাপড় পরতে আন্না আপত্তি প্রকাশ করলে মুথনাড়া দিয়ে বলতেন, “নে, নে, আবদার করিস নে—লজ্জাও করে না আবদার করতে ! এসেছেন ত ছজনের পরে—ছ-জনের জুটিয়ে তবে ত তোর জোটাব। আগে আসতিস ত আগে পেতিস।” ছ জনের পরে আসাট যে অত্যন্ত অপরাধ হয়ে গেছে তাতে আন্নাকালীর মনে সন্দেহমাত্র ছিল না, কিন্তু সে অপরাধটা কখন ষে তার