পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Nつ*○ প্রবাসী SNごBNご অজ্ঞাতে হয়ে গেছে সেইটে ভেবে সে আকুল হয়ে উঠত এবং বার-বার ভাবত যে জন্মাবার স্বযোগটা যদি এখন একবার হাতের কাছে পায় ত সে সকলকে ডিঙিয়ে তার উনিশ বছরের বড়দিদিরও উপরে এবার জন্মে নেয়। তার পর বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে সে বুঝতে পারলে যে শুধু বাপ-মায়ের স্নেহ, ভাল কাপড়টি, ভাল খাবারটুকুই যে তার দিদিরা নিঃশেষে নিয়ে গেছে তাই নয়, বাপের টাকাও যা-কিছু ছিল তা-ও আর আন্নাকালীর জন্ত তারা অবশিষ্ট কিছুই রেখে যায় নি। অতএব ভাল ঘরে ভাল বরে বিয়ে হওয়াও যে তার দুরাশা, মা থেকে থেকে সে-কথাটা তাকে জানিয়ে দিতেন । ভাল ঘরে, ভাল বরে আল্ল’কাষ্ঠীর বিশেষ লোভ ছিল না, লোভ ছিল শুধু ভাল কাপড়খানিতে ; তাই মা’র কথা শুনে তাঁর ভয় হ’ত যে হয়ত তার বিয়ের সময়েও দিদিদের মত রাঙা শাড়ী, নতুন আনকোরা শাড়ী একখানিও জুটবে না—এবং হয়ত বা বিয়ের পরেও তার শাশুড়ী ও মনদের কাপড়ের ছিন্নাংশ জুড়েই তাকে পরতে হবে। এমন সময়ে হঠাৎ আন্নাকালীর সন্মর মুখখানি দেখে তাকে নিজে পছন্দ ক’রে বিয়ে ক’রে নিয়ে গেল । স্বামী যে তার পিতাকে কন্যাদায় হ'তে বিনাপণে উদ্ধার করেছে এতে c আন্নাকালা কত কৃতজ্ঞ ত সে কেমন ক’রে স্বামীকে জানাবে ভেবে পায় না। স্বামীর ঘরটি, স্বামীর শয্যাটি, জুতাটি, কাপড়থানি– সবই তার অসীম যত্নের । ভবতোষের নূতন চাকরি হওয়াতে তারা যে বাড়ীতে সম্প্রতি উঠে এসেছে সে বাড়ীতে দুটি ছোট ছোট ঘর এবং ভিতর দিকে একটি ছোট উঠান আছে, সেখানে একটি গন্ধরাজ ফুলের গাছ কে কবে সখ ক’রে পুতেছিল, সেটি এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে । ভবতোষের ঘর থেকে একটি কুট বা এক টুকরা ছেড়া কাগজ বার করবার জে নেই, আন্নাকালীর যত্নে এখন ঝকৃঝকৃ তক্তকূ করছে ঘর দুখানি । পিতৃগৃহে আল্লাকালী এর চেয়ে অনেক দুঃথেষ্ট দিন কাটাত—স্বামীর গৃহে সে একল৷ গৃহিণী, তার নিজেরষ্ট সব-হোক না কেন সে মাত্র দুটি মাটির ঘর ও একটি গন্ধরাজ ফুলের গাছ—কিন্তু এখন অস্তত কিছুদিনের জন্যও তার সম্রাঞ্জী ত সেই । বার-বার এইটে আঠুভব করে তার ক্ষুদ্র বুকটি গর্বে ও আনন্দে ভরে যায় ও নিজের সেই ক্ষুদ্র সাম্রাজ্যটুকুর নানারূপ অভিনব উন্নতির চেষ্টায় তার চিন্তা ও পরিশ্রমের অবধি থাকে না । সেদিন দুপুরবেলা ভবতোষ ভাত খেতে বসে বললে, “কই, তোমার ভাত কই ? কাল না বলেছি এবার থেকে একসঙ্গে না খেলে আমি খাব না ?” স্বামীর আহার শেষ হ’লে আন্না বরাবর সেই থালায় নিজের ভাগের অল্পব্যঞ্জন ঢেলে নিয়ে খেতে বসে। স্বামীর সহিত একসঙ্গে ব'সে ভাত খাওয়া সে চোখে দেখা দূরে থাকুক কখনও কানেও শোনে নি। সে সেই অশ্রুতপূৰ্ব্ব নিলজ ব্যাপারের প্রসঙ্গমাত্রেই লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠে বললে, “যাও— কি যে বল ! রোজ রোজ এক কথা ।” ভবতোষ নিজের থালাখানা হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললে, “ও, কাল তবে বুঝি তুমি আমাকে ছেলে ভোলালে! বেশ ত রইল এই তোমার ভাত-তরকারী— খাব না ত আমি ' ভবতোষ সত্যসত্যই ভাত ছেড়ে উঠে পড়ে দেখে আন্নাকালীর মুখখানি শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি সে দু-হাত দিয়ে স্বামীর কাপড় চেপে ধরে বললে, “আমার মাথা থাও যদি ওঠ। বাড়া ভাত ফেলে উঠতে নেই-ব'সো ব’সে ।” টেনে স্বামীকে আসনে আবার বসিয়ে লজ্জায় রাঙা মুখে ঠেসে বললে, “আচ্ছ একি আবদার বল ত ? এমন বেহায়া কাণ্ড বাপু আমি ন জন্মে কখনও শুনি নি। কেন, তুমি গেয়ে ঠ নী—ঐ পাতেই এখনই ত বসব আমি । আগে থেকে দুম করে আমি খেতে বসে যাব তার পর তোমার যদি আর কিছু দরকার হয় ?” ভবতোস আবার উঠে পড়বার উপক্রম ক'রে বললে, “আজ আর ওসব শুনব না আমি- সত্যি, না খেয়ে উঠে যাব তাহ’লে । আচ্ছ, কেনই বা থাবে না শুনি ? সেই দুমিনিট পরে ত থাবেই—ন-হয় দু-মিনিট আগেই থেলে । তুমি যা বেশী বেশ করে ভাত-তরকারী দাও আমার থালায়— এটা শেষ ক'রে আবার আমার চাইবার দরকার হবে কেন, আমি কি একটা রাক্ষস ? ওসব দরকার-টরকার তোমার একটা বাজে ওজর খালি, ওসব আমি শুনছি না। ওঠ, ওঠ—কই, উঠলে ? যাও তোমার থালা আন, আনলে