পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশষণচ তবে আমি ভাত মুথে তুলব। ওঠ না আন্না—খিদেতে পেট জলে গেল যে, কতক্ষণ আর বসিয়ে রাখবে ?” আল্লাকালী নিরুপায় হয়ে মুখখানি স্নান ক'রে ক্ষুঃমনে রান্নাঘরে চলে গেল। একটু পরে একটি ছোট কাসাঁতে ভাত ও অন্য একটি কালীতে কি তরকারী এনে স্বামীর সামনে নামালে। ভবতোষ বললে, “ও কি রকম ভাতবাড়া ? তোমার থালা কই ?” আল্লা বললে, “থালা কি হবে ? আমি এই কার্সীতেই খাব ।” ভবতোষ গোলমাল ক’রে উঠল—“বা রে কাসাঁতে খাবে কেন ? অার একটা থালা করে আমায় যেমন দিয়েছ এমনি ক'রে ভাত বেড়ে নাও না। এ কি রকম ব্যবস্থা তোমার। কেন, আর একটা থাল নেই বুঝি " আন্নাকালী ছোট একটি ঘটিতে জল গড়িয়ে নিচ্ছিল । মুথ না তুলেই উত্তর দিলে, “বাড়ীতে মানুষ ত এই দুটি, একথানার বেশী থালা নিয়ে কি হবে ? আমি ত তোমার পাতেই বরাবর খাজ-দু-জনের জন্যে আবার আলাদা আলাদা দু-থান৷ থালা চাই নাকি ? কবে বলবে একখানি ঘরে দু-জনে থাকব কি ক’বে—-ধরও দু-জনের দুখান না হলে আর চলে so I” জলের ঘটিটি রেখে একটু তুন সেই মেঝের উপরেই ঢেলে নিয়ে আন্নাকালী জীবনে এই প্রথমবার স্বামীর সঙ্গে থেতে বসল। লজ্জায় ভাল ক'রে খেতে পারলে না, কিন্তু স্বামীর ঞ্জেদে থেভেহ হ’ল । বিকালে ভবতোয় কাগজে মোড় কি একটা জিনিষ পিছনে লুকিয়ে নিয়ে হাসিমুখে বাড়ী ঢুকল। “আন্ন, ও আয়, কোথায় তুমি ? শোন না এদিকে এস । কাপড় কাচতে ঢুকেছ বুঝি ? বেরোও না শীগগির-কথা আছে, বড় দরকারী কথা । বাঃ, বলব কেন ? এখানে ন! এলে বলব না। চেচিয়ে চেচিয়ে এত বকতে পারব না দূর থেকে ।” আন্না কোনমতে তাড়াতাড়ি কাপড়-কাচা শেষ ক’রে স্বামীর ডাকাডাকিতে উৎসুক হয়ে ভিজা কাপড়েই বেরিয়ে এল। ডাগর চোখ দুটি তুলে বললে, “কি বলছ! এত ডাকাডাকি যে গা মুছতেও দিলে না।.ও, বুঝেছি কি আ: তুলনায় به سNoty জিনিষ এনেছ, না ? পেছনে হাত কেন লুকিয়েছ ? হ্যা, কিছু আন নি বইকি—নিশ্চয়ই কিছু এনেছ। আমায় অমনি বোকা পেয়েছ কিনা ! কি এনেছ দেখাওঁ শীগগির । আবার বুঝি গরম বেগুনী ভাজছিল ঐ দোকানটায় সেদিনের মত ?” ভবতোষ কাগজের মোড়ক খুলে বার করলে, বেগুনী নয়—বেগুণী রঙের একখানি শাড়ী, পাড়ের উপর কালো ও লাল রঙের সুতায় ফুল তোলা। আল্লার চোখ মুখ প্রথমে বিস্ময়ে তার পর আনন্দে উজ্জল হয়ে উঠল। শাড়ী, নূতন শাড়ী, কালোয় লালে ঝকৃঝকূ করছে পাড় । আল্লা হাত বাড়িয়ে স্বামীর হাত থেকে শাড়ীটা নিলে । ভবতোষ অত্যন্ত তৃপ্ত হাসিমুথে স্ত্রীর দিকে দেখছিল। আন্না পাড়টায় হাত দিয়ে দিয়ে দেখতে লাগল কেমন উঁচু উচু ফুল তোলা—ঠিক যেন সত্যিকারের ফুল কেটে বসিয়ে দিয়েছে। তার পর স্বামীর দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে লজ্জিত আনন্দিত কুষ্টিত মুখে স্বামীর পায়ের গোড়ায় প্রণাম করলে । ছোটবেলায় দুর্গাপূজার সময়েও আন্নাকালী কখনও একখানা মৃতম আনকোরা শাড়ী পরেছে বলে মনে পড়ে না। আগের বংসরের কেনা দিদিদের কোন একথানা শাড়ী তার ভাগ্যে পড়ত—কিন্তু তার আনন্দ আল্লা এখনও ভোলে নি । কাপড় কাচতে তবু সঙ্গত না—আম্ন ছুটে গিয়ে গামছা দিয়ে মুখ মুছে নতুন শাড়টি পরে ছোট আরসীখানা নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে থাকত তাকে কেমন মানিয়েছে । মা দেখতে পেয়েত বলতেন, “নে নে, আইবুড় মেয়ের অত ভাবন ভাল নয়। গেলেন একেবারে আস্ত একখানা শাড়ী পেয়ে—মুখ দেখার ঘটা দেখ না। রাখ, আল্পসী । নতুন কাপড় পরে যে আগে গুরুজনকে পেরাম করতে হয়, বুড়ে টেকী মেয়ে তাও জালে না গো ।” আরসী রেখে আন্নাকালী তাড়াতাড়ি প্রথমে মাকে, তার শর বাবাকে, তার পর একে একে সব দিদিদের প্রণাম করত। পূজা নয়, পাৰ্ব্বণ নয়, কোন একটা উপলক্ষ্য নয়, স্বামী তাকে এমন শাড়ী এনে দিলে যা পরবার কথা আল্ল কখনও ভাবতেও পারে নি। তাদের গায়ে দুর্গাপুজার সময়ে পুজ+ বাড়ীতে যে চাটুজ্জেদের বউরা আসত তাদের ছাড়া এই রকম শাড়ী পরতে আন্না কখনও কাউকে দেখে নি। ও জানে