পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ごぶ)● এই অতি অকিঞ্চিৎকর ছোট জায়গাটুকুতে অকস্মাৎ একি ঐশ্বৰ্য্যের আবির্ভাব—আন্না বিহালের মত র্তার দিকে তাকিয়ে রইল। তার পায়ে মেমেদের মত জুতা—চললে পরে খুটুখুটু করে শব্দ হয়—চকচক্‌ করছে সোনায় মোড় জুতা। র্তার পা থেকে মাথা অবধি দেখে আমার মুখে উত্তর জোগাল না । মহিলাটি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “এই বাড়ীতে আপনি থাকেন বুঝি ?” এতক্ষণ পরে আন্ন ঘাড় নেড়ে জানালে যে হ্য, সে এই বাড়ীতেই থাকে। মহিলাটি বললেন, “অনেক দিন ক্রমাগত এই ট্রেনে ট্রেনে ঘুরছি—আর ভাল লাগে না। আপনাকে দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি আপনি বাঙালী-ঘরের বেী— তাই ত নেমে এলাম কথা কইতে। এই বাৰ্ম্মিজদের কিচিমিচি শুনতে শুনতে কানে তাল ধরে গেছে ; ভাবলুম আপনার সঙ্গে দুটে বাংলা কথা ব'লে আসি। আসুন না, এই ত সামনেই আমার গাড়ী দাড়িয়ে—আমার বাড়াঘর বলতে এখন ও-ই আর কি। আসুন ওখানে গিয়ে বসে কথা বলা যাকৃ। আপনিও ত এক বসে রয়েছেন—কি বলেন ?” মহিলাটি মৃদু হাসলেম । মন্ত্রমুগ্ধের মত আন্না আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে মহিলাটির অনুসরণ করে সেই গাড়ীর কামরায় গিয়ে উঠল। ভিতরে এত তীব্র আলো যে চোখে ধেন ধাধা লেগে যায়। একটি বেঞ্চিতে নানা রঙের বিচিত্র একখানি কম্বল পাতা ; একদিকে কয়েকটি রঙীন তাকিয়া রয়েছে এবং তার নীচেষ্ট একটা সুন্দর ছবি-অ’াকা বই উপুড় করা। ট্রেনের দেওয়ালের গায়ে মুখ দেখবার জন্য আরসী লাগান---ছেলেবেলায় নূতন কাপড় পরে যে আরীতে আন্না ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজের মুখ বার-বার করে দেখত এ সে-রকম আরী নয়, এ মস্তবড় অারসী ; হয়ত এতে মাথা থেকে প| অবধি সবটা একসঙ্গেই দেখতে পাওয়া যায়, এত বড় আয়না এ–এবং তার নীচে ছোট বড় শিশি, বোতল, চিরুণী, বুরুস, ছোটখাট বাক্স কোঁটো কত কি রাখা রয়েছে, কোনটা রূপার, কোনটা কাচের, কোনটা মথমলের—কোনটা কিসের তা আন্না জানে না। আন্ন একবার মহিলাটির দিকে তাকিয়ে চোখ দুটি তখনই নামিয়ে নিলে । তার বড় লজ্জ করতে লাগল। তিনি কম্বলট প্রবাসী శ్రీgNరీ একটু সরিয়ে নিয়ে ব’ললেন, “বমুন আপনি ; দাড়িয়ে রইলেন কেন ?” তার অৰ্দ্ধমলিন কাপড়ে সেই দামী কম্বলের উপর বসতে আন্না অত্যন্ত সঙ্কোচ বোধ করছিল । এখন মহিলাটি কম্বল গুটিয়ে নিয়ে ট্রেনের গদিমোড়া বেঞ্চিতে তার জন্যে বসবার স্থান ক’রে দিলেন দেখে আন্ন মনে মনে স্বস্তি বোধ করলে, কিন্তু তবু বসল না। মহিলাটি নিজে কম্বলের উপর বসলেন, বললেন, “লজ্জ কি ? বলুন আপনি।” আন্না ব'সে নীরবে মাটির দিকে তাকিয়ে রইল। মহিলাটি তার পাশেই বসেছেন-মেজেতে র্তার জুতা-পর পা দুটি~ তার ওপর কালো শাড়ীর জরির পাড় এসে পড়ে সব যেন সোনায় সোন ক’রে দিয়েছে । আন্নার মনে হ'ল, এমন চকচকে জুতা প’রে ধুল-মাটির ওপর দিয়ে হঁটিতে কষ্ট হয় না ? নষ্ট হয়ে যাবে যে ! নিজের পা দুটির ওপরেও চোথ পড়ল । ধুলিমলিন পা দুখানি—অনেক দিন আগে কবে একদিন আলতা পরেছিল তারই মলিন দাগ এখনও রয়ে গেছে । নিজের কাপড়ের অণুচল নামিয়ে দিয়ে আঃ! প-দুখানি ঢাকবার চেষ্টা করলে । তাদের গাড়ীর সামনেই নীচে প্ল্যাটফর্মে দাড়িয়ে সেই খোড়। ভিখারীটা চেঁচামেচি সুরু করেছিল। আর একে রোজ দেখে । যখনই প্যাসেঞ্জার-গাড়ী থামে তখনই এই ভিখারীট। আরও বেশী খুড়িয়ে খুড়িয়ে লাঠির উপর ভর করে গাড়ীর দরজায় দরজায় ঘুরতে থাকে, তার পর ট্রেন চলে গেলে আন্নার ঘরের জানলার নীচেয় বসে ভিক্ষালব্ধ পয়সা ও কখনও কখনও ফল, রুটি, মিষ্টি ইত্যাদি ভাগ ক’রে গুছিয়ে নিজের গামছায় বেঁধে বেঁধে রাখে—আন্না কতদিন দেখেছে । মহিলাটি একবার তাকিয়ে বালিশগুলো একটু ঠেলে তার নীচে থেকে একটা ছোট্ট সাদা কুকুরছানা বার করলেন--সাদা ঘন লোমে তার গাটি ভরা, কালো দুটি চোখ জলজল করছে । আন্না সব ভুলে অবাক হয়ে সেই দিকে চেয়ে রইল। মহিলাটি সেই কুকুরের ঘাড়ের কাছে কি একটা ধরে টানলেন, অমনি কুকুরটি দু-ফাক হয়ে গেল। তখন আল্লা বুঝলে এটা আস্ত কুকুর নয়—খেলনার কুকুর । কিন্তু কি চমৎকার গেলনাই তৈরি করেছে-- ঠিক যেন মনে হয় সত্যিকারের কুকুর । সাহেব-বাড়ীর