পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՅoՋ প্রবণসী SN?Bゞ না। বিষামৃত । বেশ, আপনার সঙ্গে একদিন কথা তুমি আবিষ্কার করলে যে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে ফলটা পড়ল । কইব । কিন্তু তাতে হ’ল কি ? বুকের ভেতর থেকে প্রাণ কার পাগল চলিয়া গেল । ইহার পর দু-তিম দিন আর পাগল আসিল না। সেদিন মামার এক বন্ধুর বাড়ীতে রাত্রে নিমন্ত্রণ খাইতে বসিয়াছি এমন সময় মামার ডাক আসিয়া উপস্থিত হইল। এক বাঙালী ভদ্রলোকের ছোট একটি মেয়ে দৈবছুৰ্ব্বিপাকে পুড়িয়া মারা গিয়াছে—তাহার সৎকারের ব্যবস্থা রবিবাবুকে করিয়া দিতে হইবে । মামা উঠিয়া পড়িলেন। আমাকে বলিয়া দিলেন, তুই বাড়ী চলে যা, শিবু । রাত্রি তখন এগারট। পথ প্রায় জনহীন, আকাশে চাদ উঠিয়াছে। নগরীর মিউনিসিপ্যালিটির ব্যবস্থায় জ্যোৎস্ন লোকের জন্ত পথ-প্রদীপগুলি নিবাইয়া দেওয়া হইয়াছে । নগরীর মাথার উপর সৌধশীর্ষে জ্যোৎস্না, পথের উপর সৌধমালার ছায় । সেই ছায়ালোকের মধ্যে সস্তপণে চলিতে চলিতে ভাবিতেছিলাম—এখানকার পথ-প্রদীপ ও চন্দ্ৰ যেন রাজপথশ্বন্দরীর প্রণয়-প্রতিদ্বন্দ্বী-এক জগতে উভয়ের স্থান হয় না । কিন্তু চিন্তা ত্যাগ করিয়া চমকিয়া দাড়াইতে ट्झेल । একটা বঁ:কের মোড়ে গাঢ়তর ছায়ালোকের মধ্যে কে কোথায় যেন মৃদু কণ্ঠে অনর্গল বকিয়া চলিয়াছে। স্থির হইয়া শব লক্ষ্য করিয়া দৃষ্টি হানিয়া দেপিলাম—সম্মুথেই একটা খোলার ঘরের বারান্দায় বসিয়া কে এক জল কি বলিতেছে । আরও খানিকট অগ্রসর হইয় নিকটে আসিয়া দেপিলাম, রসরাজ পাগল । আরও নিকটে গিয়া মনে হইল ভাষাট। ইংরেজী । বারান্দার উপরে উঠতে উঠিতে প্রশ্ন করিলামকি বলছেন রসরাজ বাবু ? বলিতে বলিতেই আমি সম্মুথে গিয়া দাড়াইলাম। রসরাজ পাগল নীরব হইয়া মুখ তুলিয়া আমার দিকে একটু চতিয়৷ থাকিয়া বলিল—কে, কে তুমি ? পরমহংসদেব ? এখন নয়, এখন নয়, পরে এস । এখন আমি নিউটনের সঙ্গে কথা কইছি। পাগল বলে কি ? চমকিয় উঠিয়া উত্তর দিলাম-ন, আমি রবিবাবুর ভাগ্নে । আমার সঙ্গে কথা কইবেন বলেছিলেন যে ! অনেক ক্ষণ চিস্তা করিয়া যেন মনে করিয়া লষ্টয়া পাগল বলিল-ও ! তা বেশ । কিন্তু সে আজ ত হবে না। কাল, কাল কথা কইব । আমি প্রশ্ন করিলাম-কিন্তু নিউটন কে ? —নিউটনকে জান না ! মস্তবড় বৈজ্ঞানিক ! সে এসেছিল, চলে গেল । —কি বলছিলেন তাকে ? —বলছিলাম, গাছ থেকে ফল পড়ল আর তা থেকে আকর্ষণে কোথায় যায় বলতে পার তুমি ? আমি বিস্মিত হইয়া বলিলাম—নিউটন কি বললেন ? —কিছু বলতে পারলে না। চুপ ক'রে ভাবছিল, এমন সময় তুমি এসে পড়লে ; আজ পাগলের উপর কেমন শ্রদ্ধা হইল। সবিনয়ে বলিলাম—তবে ত বড় অন্যায় করলাম আমি, তিনি চলে গেলেন । পাগল বালল –তুমি গেলেই সে আবার হয়ত আসবে। এই যে থামটা দেখছ—এইটেই হয়ে উঠবে নিউটন । কোন দিন এটা নিউটন হয়, কোন দিন হয় পরমহংস, কোনদিন বা বেদব্যাস হয়—বুঝেছ ! বুঝিলাম বিকৃত কল্পনায় পাগল ঐ থামটার সহিতই বকিয় যায়। আশ্চৰ্য্য মাতৃযের মন, মুহূৰ্ত্ত-পূর্বের শ্রদ্ধা এই মুহূর্কে আর নাই ! আমি চলিয়। আসিব মনে করিয়া ফিরিলাম। কিন্তু পাগল ডাকিয় বলিল-সেদিন কি কথাট তুমি বললে – বেশ একটা ভাল কথা ?


ও, বিষামুত । —হঁ্য, বিষামুত । বেশ কথাটি । কাল, কাল কথা কইব ।

পরদিন অপরাঃে আর কোথাও বাহির হইলাম ন}, পাগলের প্রতীক্ষায় রহিলাম । তাহার সম্বন্ধে আমার একট। কৌতূহল জাগিয়াছে । কিন্তু সে দিন পাগল আসিল না। পরদিনও না । অবশেষে আমিহ পাগলের খাজ করিলাম । কিন্তু কোথাও সন্ধান মিলিল না। পাগল কোথাও চলিয়া গিয়াছে । আর তাহার সহিত দেখা হয় নাই, এবার আসিয়া শুনিলাম—পাগল মরিয়াছে । আচ্ছ এস তুমি । কল্পনাপ্রবণ মন পাগলের সমস্ত স্মৃতিটুকু স্মরণ করিয়া কত কঠিন রচনা করিয়া চলিল । কিন্তু কোনটা সম্পূর্ণ হইল না। সহন মনে পড়িল পাগলের পুঢ়লাট এই ঘরেই আছে । কি আছে খুলিয়া দেথিতে ইচ্ছা হইল। জানালাটা খুলিয়া দিয়া খুজিয়া সেটাকে লঙ্গয় বসলাম। পাইলাম, দুইথান ময়লা কাপড়, একটা শুকানো ফুল, একটা দেশলাই, টুকরা কয়েক দড়ি, একথান মরিচা-ধরা ব্লেড, একটা স্বচ, খনিকটা স্থত, একট। পেন্সিল, কয়ট পাথর, খানকয় খবরের কাগজ, মহাভারতের একথান পাত, একট। দেবনাগরী বইয়ের কয়খাল পাতা, সৰ্ব্বশেষে একথান মোট বঁধান খাত । অনেক প্রত্যাশা করিয়া খাতাখানা খুলিলাম। প্রত্যাশা আমার সফল হইল—থাতাখানা ডায়েরীই বটে ! মন আনন্দে অধীর হইয়া উঠিল। গোড়াকার পাতা উল্টাষ্টয়া দেখিলাম, কিছুই বোঝা যায় না, লেথার উপরে আবার লেখা--একবার