পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশষাঢ় অমৃতের ভাগটুকুই জাগে ছেকে খেয়ে শেষ করলে বাবা ? বিষটাই ফেলে রাখলে ? আমি রসরাজকে আঙ্গুল টিপিয়া নিষেধ করিলাম, কিন্তু তাহার ঘাড়ে যেন ভূত চাপিয়াছে, সে বলিল—ঈশ্বরকে আপনি দেখেছেন বাবা ? সাধু কোন উত্তর দিলেন না। আমি আবার রসরাজকে ইঙ্গিতে নিষেধ করিলাম। কিন্তু সে গ্রাহ করিল না, আবার প্রশ্ন করিল—আচ্ছা ঈশ্বর কি ভূত ? সাধু এ কথারও কোন জবাব দিলেন না। সে আবার প্রশ্ন করিল—আচ্ছা এত তপিস্তে করে কি দেখলেন বলুন ত ? ভূত না প্রেত ? সাধু এবার ববিলেন—বাব, দেখলাম কি জান, দেখলাম এই যে সবুজ পৃথিবীর বুক, এটাই পৃথিবী নয়। সবুজট হ'ল আবরণ, পৃথিবীর মধ্যে দেখলাম কেবল অস্থি আর মেদ । মেদিনীই হ’ল ঠিক নাম । রসরাজ চোখ দুইটা বড় বড় করিয়া বলিল—ও। তা হ’লে মেদিনীপুরই হ’ল পৃথিবী । আমি এবার তাহার দুইটি হাত ধরিয়া টানিয়া বলিলাম— আয়, উঠে আয় । রসরাজ উঠিতে উঠিতে বলিল—বললেন না বাবা, ঈশ্বর কেমন আপনার ? ক’টা তার হাত, কটা তার পা ? সাধু এবার ঈষং কঠিন স্বরে বলিলেন—ঈশ্বরের কাটা হাত ক'টা পা তা ত জানি না বাবা, তবে এটা জেনেছি যে, তার স্বভাব হ'ল প্রতিধ্বনির মত। যেমন স্বরে তুমি কথা বলবে ঠিক সেই স্বরে সে উত্তর দেবে । রহস্য কর সেও রহস্ত করবে । বাধা দিয়া রসরাজ বলিল-ফু দিয়ে উড়িয়ে দেব বাব, ফু দিয়ে উড়িয়ে দেব । সাধু এবার হো-হো করিয়া হাসিয়া উঠিলেন। অদ্ভুত শক্তিশালী কণ্ঠ, কিন্তু তারও চেয়ে অদ্ভুত সে হাসির স্তরবিন্যাস। শরীর রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিল । রসরাজ স্তন্ধ হইয়া সাধুর মুখের দিকে চাহিয়া দাড়াইয়া ছিল, আমি তাহাকে টানিয়া লইয়া আসিলাম। এপারে নামিয়া রসিক বলিল— লোকটা কি বললে বল ত ?” 碌 碌 舉 একটু বিশ্রাম লইয়া নীলমাধববাবু বলিলেন—এর মাসছয়েক পরেই শহরে প্লেগ দেখা দিল। বিখ্যাত প্লেগের বৎসর। গ্রীষ্মকালের আগুনের মত দুৰ্দ্ধান্ত প্রকোপে সমস্ত শহরটার মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ল । তার পর আমার মুখের দিকে চাহিয়া বলিলেন—কল্পনা করতে পারবেন না সে যে কি ভীষণ । দলে দলে লোক শহর ছেড়ে পালাতে আরম্ভ করলে। আমার যাওয়া হ'ল না। আমার বাবা ছিলেন পক্ষাঘাতে পঙ্গু, তাকে নিয়ে প্রতিধনি 80命 যাওয়া সম্ভব হ'ল না। তিন-চারটি পাগল নিয়ে রসরাজও কোথাও যেতে সাহস করলে না । শহরের সে এক ম্ৰিয়মাণ ভাব, পথে মামুষ নেই, পথ চলতে গা ছম-ছম করে ; মনে হয় কোন গলি থেকে প্লেগ এসে হাসতে হাসতে সামনে দাড়াবে। ঘরে জোরে কথা কইতে সাহস হয় না, মনে হয় সাড়া পেয়ে প্লেগ এসে টুটি টিপে ধরবে । কাক চিল পৰ্য্যস্ত শহর ছাড়লে, শ্মশানের মাথায় হ’ল তাদের বসতি। শহরের মানুষের সাড়ার মধ্যে শুধু কান্না। বলব কি আপনাকে, ট্রেনে যারা যেত তারা ষ্টেশন থেকে কাল্লার শঙ্গে শিউরে উঠত। ক্রমশ রসরাজের বাড়ীতে প্লেগ ঢুকল। তার মা গেল, বোন গেল, শেষ গেল তার ভাইটি । তার পর ডায়েরী হইতে পড়িলেন, “রসরাজের ভাই আজ মারা গেল । কিন্তু মামুষের স্বভাবের কি পরিবর্তন হয় না ! সংকার-শেষে স্নান করিতে করিতে রসরাজ বলিয়া উঠিল, ফুরোলে বাগানের আম কি খাবি রে হকুমান ! জিজ্ঞাস্বনেত্রে তাহার মুখের দিকে চাহিলাম, সে ব্যঙ্গভরে হাসিয়া বলিল—মৃত্যুকে বলছি । রসিককে আজ আমাদের বাড়ীতে রাখিলাম।” – এরই পরের দিনের ডায়েরী, গুমুন । “ডোরে উঠিয়াই রসরাজের খোজ করিলাম, দেখিলাম সে নাই। বোধ হয় নিয়মমত বেড়াইতে বাহির হইয়াছে। আমি ।” নীলমাধববাবু বলিলেন—থাক রসরাজের কথা শোনাই । গুমুন । “রসরাজ ফিরিয়া আসিল । গিয়েছিলি ? শ্রান্ত-মান কণ্ঠে সে বলিল—বেড়াতে । উ, কি অদ্ভুত শহরের অবস্থা ! এত কান্না আমি একসঙ্গে কখনও শুনি নি । আশ্চধ্য এতদিন শুনতে পাইনি, আজ যেন হঠাৎ শুনলাম । উ:, এত কাল্লা ! রসরাজের চোখে জল ছল ছল করিতেছিল । বলিলাম—মন খারাপ করিস নে রসরাজ । সে বলিল—আমি আরায় চলে যাই নীলু। এ আমি আর সহ করতে পারছি নে । এই সাড়ে ন’টার ট্রেনেই চলে যাই । রসরাজকে ট্রেনে তুলিয়া দিয়া আসিলাম।” তাহাকে বলিলাম—কোথায় তার পর মুখ তুলিয়া নীলমাধববাবু বলিলেন–ঠিক তিন দিন পর । কয়েক পৃষ্ঠ উন্টাইয়া তিনি পড়িলেন, “ভোরে উঠিয়া বাহিরে আসিয়াই দেখিলাম বাহিরে