পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগষাঢ় নিজেদের সংস্কৃতি নাশের ভয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাহিত্য অবহেলা করিলে নিজেদেরই বঞ্চিত করা হইবে। নিজেদের কালচার, সাহিত্য ও আদর্শ ব্যতীত অপর কাহারও কিছু জানিব না, শিথিব না ও বুঝিব না, এই নীতিতে যদি সকলেই চলিতে থাকে, তবে শুধু যে জ্ঞান ও সভ্যতার আদান-প্রদান হইবে না তাহী নহে, তাহাতে কাহারও সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্যক পরিপুষ্টও হইবে না। আজ মুসলিম কালচার বলিয়া যাহা প্রচলিত আছে তাহাতে মুসলমানদের নিজস্ব দান থাকিলেও, তাহাতে কি গ্রীসীয়, ইরাণীয় বা অন্যান্ত কালচারের প্রভাব কিছুই নাই ? মুসলমানদের নিজস্ব ভাবধারার সহিত নানা দেশের সভ্যতার সংমিশ্রণেই মুসলিম কালচার পরিপূর্ণ হইয়াছে, ইহা অস্বীকার করিলে চলিবে কেন ? আবার গ্রীক, রোমক ও আরব সভ্যতার সংস্পর্শে না আসিলে ইউরোপীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি কখনই বর্তমান ধারণ করিতে পারিত না । তাহ হইলে পোপ-শাসিত মধ্যযুগের মত সমগ্র ইউরোপে আজি ৪ ডিার্ক এজ’-এর প্রভাব থাকিত। হিন্দু সংস্কৃতি ও সভ্যতা ও নানা ভাবধারীর সংস্পর্শে আসিয়া আজ বর্তমান অবস্থায় উপনীত হইয়াছে। যে সম্প্রদায়ের মধ্যে বহু প্রতিভাশালী ব্যক্তি থাকেন তঁহার অপরের ভাবধারাকে গ্রহণ করিয়াও নিজের বৈশিষ্ট্য নষ্ট আকার হঠতে দেন না। অনেকে তাহা পারে না, সুতরাং তাঁহারা পরের নিকট আত্মসমর্পণ করিতে বাধা হয় । এষ্ট কারণে কত দেশের কত কালচার ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়াছে । কিন্তু তাই বলিয়া ধ্বংস হইবার ভয়ে কূপমণ্ডুকতাও ভাল নহে। কাহারও কালচার যদি বাস্তবিকই ভাল হয়, কেন তাহা গ্রহণ করিব ম' ? কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে হিন্দুকালচার ভরিয়া দিতেছে—তাহ না-হয় মানিলাম, কিন্তু বাস্তবিকই যদি হিন্দু সংস্কৃতির মধ্যে সার সত্য কিছু থাকে তবে তাহা গ্রহণ করিলে কি মুসলমানদের বৈশিষ্ট, ময্যাদা ও আত্মসম্মান একেবারেই নষ্ট হইয়া যাইবে । চুম্বকের মত তাহাদের ভাল অংশটুকু যদি আয়ত্ত করিতে পারি, তবে তাতাতে আমাদের লাভ ব্যতীত ক্ষতি হইবে না। তাঁহাতে মুসলমানদের “শুদ্ধি" হইয়া যাইবার কোনও ভয় নাই । বাল্মীকি, হোমার, কালিদাস, শেক্সপীয়র, গ্যেটে, হাফেs, রুমী, থৈয়াম প্রভৃতি মহাকবিগণ কোনও জাতি দেশ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও মুসলমান BSS বা সম্প্রদায়-বিশেষের মহেন—ইহার সমগ্র বিশ্বের সম্পদ। ইহাদের ভাবধারার সহিত পরিচিত হওয়া যে-কোন পাঠকের পক্ষে সৌভাগ্যের বিষয়। কালচার ও ধৰ্ম্মনাশের ভয়ে যদি কেহ এই সকল মনীষীর জ্ঞানজগতের দ্বারদেশেও আসিতে ন চায় তবে তাহার মানবজন্ম ব্যর্থ, তাহা তাহার পক্ষে অশেষ দুর্ভাগ্য বলিতে হইবে । আমাদের মনে হয় কোনও সংস্কারমুক্ত শিক্ষাব্রতী ধৰ্ম্মনাশের নামে এই সব মহাপুরুষের সংস্পর্শে আসিতে কুণ্ঠ বোধ করিবে না। মহাকবি গ্যেটে যে কালিদাসের গুণগ্রহণ করিয়াছিলেন তাহার প্রমাণ শকুন্তলা সম্বন্ধে তাহার উক্তি । অথচ তিনি হিন্দু সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হইয়াছিলেন, এমন অভিযোগ তাহার কোন শন ও করিতে পারেন নাই । মহামনীষী আল-বেরুণ দীর্ঘকাল যাবৎ ভারতবর্ষে থাকিয়া ভারতীয় ভাষা ভ্যতা ও সংস্কৃতির সন্ধানে বহু গবেষণা করিয়াছিলেন, কিন্তু তাই বলিয়। তিনি হিন্দু হইয়া পড়িয়াছিল এমন কথা কেহ বলিতে পারে না। বর্তমান যুগের বাঙালী-মুসলমানই বা কেন বাংলা-সাহিত্য পড়িয় হিন্দুভাবাপন্ন হইয় পড়িবে ? বরং আমরা মনে করি দু-দশখান। “ছহি ছোনাভান” ও “গোলেবকাওলী" পড়ার চেয়ে একখানা ‘শকুন্তলা’, একখানা ‘মেঘদূত’, একখানা ফাউষ্ট’, একথান। ‘হামলেট, একখানা ইলিয়ড পড়ার মূল্য অনেক বেশী । ইহাতে দেহ-মনের অবসাদ অনেকট কাটিয়৷ যাইবে । একথা এই ধৰ্ম্মান্ধ সমাজকে কে বুঝাইবে ? যাহার এই সব অমূল্য সম্পদ হইতে সমাজের গতি ফিরাইয়ু আনিয়া 'মধ্যযুগের আদর্শের দিকে লইয়; যাহতে চায়, তাহার! সমাজের যে কি সৰ্ব্বনাশ করিতেছে ত:হা চিন্তু কবিলে দুঃখে অভিভূত হইতে হয় । বিভিন্ন দেশের ভাবধার ও সঠি:ত্যর সহিত পরিচিত হওয়ার মধ্যে যে সার্থকত আছে, কুপমণ্ডুকতার মধ্যে তাহ মধ্যযুগের পোপ-প্রভাবিত খ্ৰীষ্টান ইউরোপ যেদিন রোম-গ্রীসের কালচারের সাক্ষাৎ স্পর্শ পাইল, সেই দিন হইতে তাহার সত্যকার জাগরণ আরম্ভ হইল । সেই সময় হইতে তাহার জ্ঞান প্রসারিত হইল, চিস্তাশক্তি অবারিত হইল। মানুষ শিখিল প্রত্যেক বিষয়ে সন্দেহ করিতে ; এই সন্দেহ হইতে আসিল অমুসন্ধিৎসা-প্রবৃত্তি--আর এই অমুসন্ধিৎসা হইতে ન|