পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ Nర్బి পুত্রসস্তানলাভ হইয়াছিল। বউটর বয়স ছিল খুবই কম।. পাড়াগায়ের নগণ্য একটি জেলের বউয়ের জীবনে আকাজক্ষার পরিধি আর কতটুকু হঠতে পারে ? ঐ যে একটি ছোট ছেলে—উহারই মধ্যে তাহাদের জীবনে যত কিছু আশা, আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ--সঞ্চস্বই সঞ্চিত ছিল। ইহার বাহিরে পৃথিবীর সহিত প্রয়োজনের তাগিদ ছাড়া আর কোন সম্বন্ধ তাদের ছিল না। হয়ত এমনিই হয় ।--কিন্তু বিধাতা তাহাতে বাধ সাধিলেন ।...বর্ষাকাল। দিবারাত্র টুপটাপ বৃষ্টি পড়িতে থাকে। হানার জল একটু একটু করিয়া দিন দিন বাড়িয়াই চলে। শেষে পথঘাট, বধি মাঠ সমস্তই জলে ডুবিয়া যায়। এবাড়ি হইতে ওবাড়ি যাইতে হইলে সালতি না হইলে যাওয়া ধাসু না । বাড়ির ;ানে পৰ্য্যস্ত জল-তরঙ্গ আসিয়া ভিড় করে,—ঘরের দাওয়ার পর হইতেই জল তার জল, মাঠ পর্য্যস্ত বিস্তৃত জল । ঠিক এমনি যখন অবস্থা তখন এক দিন সফরের বউ বুঝি কি একটা প্রয়োজনে সালতি চড়িয়া বাড়ির বাহির হইয়া ধায় । ছোট ছেলেটিকে ঘরের ভিতর ঘুম পাড়ায়। রাথিয়া যায়। ইচ্ছা ছিল খুব তাড়াতাড়িত ফিরিবার । কিন্তু হামাটান। দামাল ছেলেটি কথন ঘুম ভাঙিয়া উঠিয় পড়ে। তার পর হাম টানিতে টানিতে দরজা ঠেলিয়! বাহিরে আসিয়া ঐ জলে—ঐ বানের তবঙ্গায়িত জলে ঝাপাতয় পড়ে. ঘটনাটি ঐঞ্চপ । কিন্তু আমার চমক ভাঙিয়া যায় । অনেক ক্ষণ ভাবিতে ভাবিতে অন্যমনস্ক হইয়া গিয়াছিলাম । আবার রান্নায়ু মন দিই । রাত তো বাড়িয়া চলিয়াছেই । জীবনরামের নাকড়াক শোনা যাইতেছে । রান্না হইয় গেলেই তাহাকে ডাকিব । আহার না হইলে তার গাঢ় নিদ্র হয় না । সজাগ থাকে ডাকিলেত উঠিবে ... > দুপুর বেলা স্কুলে পড়াইতে বসি । ছোট এই চালাঘরটির ভিতর আমার শয়ন করিবার ঘর এবং স্কুল-—দুই-ই মাত্ৰ দুখানি বেঞ্চ এবং একটি চেয়ার । রাত্রিবেলা বেঞ্চ দুইটি জুড়িয় তাহার উপর বিছানা বিড়াইয়া লই । লম্বা হইয়া শুইলে পায়ের দিকে একটু কম পড়ে, তখন চেয়ারটি টানিয়া আনিয়া তাহার উপর পা চাপাইয়া দিয়া নিদ্রা দিই। জীবনরাম মাটিতে চেটাই বিছাইয়া গুইয়া থাকে। বেঞ্চদুটিতে ছেলেগুলি বসিয়া পড়ে। মাঝে মাঝে বড় গোল হচ্ছে বলিয়া একটু ধমকানি দিষ্ট । তাতার পর বাহিরের দিকে তাকাইয়া থাকি।-- সৰ্ব্বাগ্রেই দৃষ্টি পড়ে হানা আর তার বিপুল জলরাশি। হানার পশ্চিম দিকটিতে জল তেমন নাই। থানিকটা ঘোলাটে জল, কাদা এবং পাক। সেইখানে মেছুনিরা কাপড় খাট করিয়া ঠাট পর্যন্ত পাকে ডুবাইয় মাছের অনুসন্ধানে চুপড়িহাতে সমস্ত দিন রোদে পুড়িয়া গলদঘর্থ হয়। পাডের উপর শ্বেতপুষ্কের ঝণক বাধিয়া আছে । তার পর কয়েকটি বাকশ গাছ,—ছোট ছোট ফুল ধরিয়াছে সেগুলিতে । পরেশের ছেলে পঞ্চানন্দ উঠিয়া আসিল । তার পড়া তৈয়ারী হস্তয়া গিয়ছে। পড়া দিয়া বাড়ি চলিয়া ফাইবে এই উদ্দেশু । জিজ্ঞাসা করিলাম--আটচল্লিশ কড়া ? পঞ্চানন্দ একবার ফ্যাল ফ্যাল করিয়া তাকাইল । তার পর বলিল-পাচ গণ্ডা দু-কড়া । বলিলাম—পড় তৈরি হয় নি। চেচিয়ে পড়গে যা। ছেলেটি একাস্ত বিরস মনে চলিয়া গেল । জীবনরাম আসিয়া বলিল-মাষ্ট্যর-মশাই রতনের বউ এয়েছে এই ‘পোষ্টো কার্ড থানা— রভনের বউকে আমার এক ছাত্র এই পোষ্টকার্ডে চিঠিখানি লিথিয়' দিয়াছে। সে আমাকে দিয় একবার পড়াই য়ু লক্টতে চায়। যদি কিছু ভুল থাকিয়া গিয়া থাকে তাহ হইলে চিঠি যাইবে নঃ। রতনের বউয়ের মুখের দিকে একবার তাকাইলাম : নিক-কালে চাষার বউ । কণ্ঠস্বরের মধ্যে কোন মধু নাই । ঠেও কাপড় । সুগঠিত কটিদেশ হইতে রূপার বিছাটি বস্বাস্তরাল ভেদ করিয়া আপনার অস্তিত্ব জানাইতেছে । বুঝিলাম আমাকে কি করিতে হইবে। এইরুপ পূৰ্ব্বেও দু-এক বার করিতে হইয়াছে । চিঠিখানি পডিয়া দেখিয়া দু-একটি ভ্রম সংশোধন করিয়া দিয়া বলিলাম—ঠিক আছে, আর কোন ভুল নেই—