পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অলখ-ঝোরা ঐশাস্ত দেবী いう মামার বাড়ী সেকেলে ধরণের বাড়ী, রাস্তার উপরেই সারি সারি চারখানি ঘর, কিন্তু একখানি ছাড়া আর কোনওটির রাস্তার উপর দরজা নাই । বাড়ীর ভিতর দিকে চারথানি ঘরের দরজার কোলে লম্ব দালান, দালানের পর খোলা চাতাল, দালানেরই সমান উচু। চাতাল হইতে দুই ধাপ সিড়ি নামিয়া রান্নাঘরের খড়ে আটচালা। রান্নাঘরে আটচালার নিকস-কালো কাঠের খুঁটিগুলির গায়ে বিচিত্র কারুকার্য্য, চৌকাঠের মাথায় কাঠে খোদাই এক জোড়া মকরের মুখ, দরজাগুলিতে কাঠের চৌখুপি ঘরের ভিতর বড় বড় পিতলের ফুল বসানো। বসতবাড়ীর দালানের এক কোণে চাল রাখিবার জন্য নীচু নীচু ছোট দুটি মরাই, আর এক কোণে কালে কাঠের প্রকাণ্ড একটা গাছ সিন্ধুক । সুধা এত বড় সিন্ধুক তাহার নয় বৎসরের জীবনে আর কোথাও দেখে নাই। এই জন্য এই জিনিষটি জাহার বিশেষ প্রিয় ও স্মরণীয় ছিল । সিন্ধুকের ভিতর থাকিত বাড়ীর পূজাপাৰ্ব্বণ বিবাহাদির জন্য যত নক্সাকাটা বড় বড় তোলা বাসন ; অধিকাংশই পিতলের, থানিক র্কাসাও ছিল । সিন্ধুকের উপর কাঠের রেলিং-ঘেরা ছোট একটি থাটের মত জায়গা । সেই রেলিং ও সিন্ধুকের গায়ে কাঠ-থোদাইয়ের কি চমৎকার লতাপাতার বাহার। মধ সেই লতা ও ফুলের গড়ন দেখিয়া দেখিয়া মুখস্থ করিয়া ফেলিয়াছিল। ছবি অাকিবীর চেষ্টা সে কখনও করে নাই, না হইলে আঁকিয়া দেখাইতে পারিত। তাহার মনের পটে সিন্ধুকের ছবিটি চিরকাল অাকা ছিল । বিধবা বড় মাসীমার দুটি বড় বড় ছেলে, বিশু আর সতু ; তাহারা এই সিন্ধুকের উপরেই রায়ে বিছানা পাতিয়া ঘুমায়। সিন্ধুকের উপর বিছানা পাতিয়া ঘুমানে শিবুর কাছে ছিল একটা পরম লোভীয় ও রহস্যময় ব্যাপার। আগে আগে সে বিস্মিত দৃষ্টিতে দেখিত মাত্র, এবার সে বিশুদাকে আসিয়াই বলিয়াছিল, “বিশুদ, তোমার সঙ্গে আমাকে একদিন গুতে দিতে হবে।” বিশুদ বলিল, “হঁ্য, রাত্রে কি কাগু কর তার ঠিক নেই। শেষে পূজোপাৰ্ব্বণের বাসন নষ্ট হোক, আর বুড়ো বয়সে দিদিমার হাতে মার খেয়ে মরি।” শিবু অত্যন্ত অপমানিত হইয়া ইহার পর আর দ্বিতীয় বার অনুরোধ করে নাই । বাড়ীর যত ছোট-ছোট ছেলেমেয়ে অধিকাংশই ঘুমাইত স্বধার দিদিমার কাছে । দালানের উল্টাকোণে একেবারে জানালার ধারে এক জোড় খুব উচু পুরাতন পালঙ্ক পাতা। তাহার উচ্চতা এত বেশী যে চড়িবার একটা মই থাকিলেই ভাল হইত। মই না থাকিলেও থাটের তলায় একখানা ছোট চৌকি পাতা ছিল, তাহার উপর দাড়াইয়া স্বাকড়ায় পা মুছিয়া দিদিমা খাটে উঠতেন। খাটগুলি প্রশস্তও কম নয়, দুইখানাতে মিলিয়া বেশ একটা ঘরের সমান হইবে। খাটের মাথা অৰ্দ্ধচন্দ্রাকারে প্রায় এক মানুষ উচু হইয়া উঠিয়াছে। তাহতে ময়র-মিথন দুই দিকে ঘাড় ঘুরাইয়া লতাকুঞ্জে নৃত্যে মাতিয়াছে । প্রথম রাত্রেই দিদিম সুধা ও শিবুকে বলিলেন, “আমার কাছে শুবি তোরা ?” শিবু মাকে ছাড়িয় শুষ্টতে একেবারেই রাজি নয়। মুধা যদিও কাহারও সঙ্গে শোওয়া মোটেই পছন্দ করিত না, তবু দিদিম! পাছে দু:খিত হন বলিয়া বলিল, “ইjা দিদিমা, আমি শোব।” পাট জুড়িয়া দিদিমার চারিধারে অর্থাৎ মাথার সিথানে, পায়ের নীচে, দুই পাশে তের-চোদটি ছোট ছেলেমেয়ে তাহদের পাড় বসানো কথা ও ছোট ছোট বালিশ লইয়। কুণ্ডলী পাকাইয়া ঘুমায়। কাহারও বা দুই পাশে দুইটা করিয়া পাশবালিশ । দিদিমা যেন ঠিক মা-যর্চ কি কাঠাল গাছ, আষ্টেপুষ্ঠে ফল ঝুলিতেছে। ছেলেমেয়েগুলির বয়স সবই কাছাকাছি, কিন্তু