পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

億8* যখন ভোজনে রত তখন তিনি স্থক হাতে করিয়া নানারূপ গল্প জুড়িয়া দিলেন। একটি সংস্কৃত শ্লোক আওড়াইয়া নিমন্ত্রণে ভোজনের বিষয়ে বলিলেন, জন্ম বার বার হইতে পারে, কিন্তু নিমন্ত্রণ সকল সময় ঘটিয় উঠে না ; সেজন্ত, নিমন্ত্রিত ব্যক্তিদিগের উচিত, ভোজনের সময় লজ্জা পরিত্যাগ করিয়া উচিতমতই ভোজন করা, ইত্যাদি । বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এইরূপ মিষ্ট গল্পের সঙ্গে আমরা মিষ্ট ব্যঞ্জনাদি দ্বারা রসনারও তৃপ্তি সাধন করিতে লাগিলাম । এইরূপে আমাদের ভোজন শেষ হইয়া গেল । আমরা উপরতলায় গেলাম । বৰ্ত্তমান সময়ের উপযোগী রূপেই তাহার গৃহটি সাজান দেখিলাম। চারি দিকে পুস্তকের আলমারি—চকুচকে গ্রন্থাদিতে পূর্ণ। সে-সময় বিদ্যাসাগর মহাশয় ব্যতীত চাদমোহন মৈত্র মহাশয় ও আমি ছিলাম। গৃহস্বামী আমাদিগের সহিত বসিয়া কথা কহিতে আরম্ভ করিলেন । কিন্তু আমি কাচে আবৃত শেলফের পুস্তকগুলির প্রতি বার-বার তাকাইতে লাগিলাম । বিদ্যাসাগর মহাশয় আমার অভিপ্রায় বুঝিতে পারিয়া, বলিলেন, “এস বই দেথাই,” এই বলিয় এক-একটি শেলক খুলিয়া বই দেখাইজে লাগিলেন। ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন সম্বন্ধীয় পুস্তকাদি বিশেষ বিশেষ বিভাগে সজ্জিত করা হইয়াছে। এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন। সমস্ত পুস্তক একই রকমের বাধান । বিদ্যাসাগর মহাশয় বলিলেন, বিলাতের পুস্তক-বিক্রেতাদিগের নিকট এইরূপ বলা আছে যে, নুতন ভাল পুস্তক বাহির হইলে, তাহারা একরূপ বাধাই করিয়া, আমার এখানে পাঠাইবেল। দেখিলাম, আরভিঙের স্কেচ-বুক, এই সামান্ত দরের পুস্তকথানিও অন্যান্য দামী পুস্তকের মত বাধান হইয়াছে। বইখানি কিনিতে যে খরচ পড়িয়াছে তাহা অপেক্ষ বাধাইয়ের মূল্য অধিক । এই সকল উংকৃষ্ট গ্রন্থরাজির মধ্যে বসিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় তাহার সময় যাপন করিতেন । এত বড় সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতের পাশ্চাত্য সাহিত্য, ইতিহাস ও দর্শনের প্রতি কি প্রবল অনুরাগই র্তাহার প্রকাণ্ড লাইব্রেরী প্রকাশ করিতেছে, তখন এই কথাই মনে আসিতে লাগিল । বইগুলি তাহার এতই অঙ্গরাগের ও ভালবাসার সামগ্রী ছিল যে, কোন ব্যক্তি ঐ লাইব্রেরীর বই পড়িতে চাহিলে তিনি তাহা কখনই প্রবণসী Sෂෂිෂ দিতেন না ; এই কথা বলিতেন, উহা দিলে তাহার প্রাণে লাগে। উহা না-দিয়া তিনি সে পুস্তক একখানি কিনিয়া দিতেও প্রস্তত হইতেন ! এই দিনই বিদ্যাসাগর মহাশয় কথাপ্রসঙ্গে বলিলেন, আমাদের দেশ গ্রীষ্মপ্রধান, এখানে দরিদ্র ব্যক্তির শীতকালে অনেকেই বস্ত্রাভাবে কষ্ট পায় বটে, কিন্তু বিলাতে কি নিদারুণ শীত, সেখানে শীতকালে দরিদ্র কৃষক প্রকৃতি কত কষ্টষ্ট না ভোগ করিয়া থাকে ইত্যাদি । এইরূপ কথা বলিবার সময়, লেখকের যত দূর স্মরণ হয়, দয়ার সাগর বিদ্যাসাগরের দুইটি চক্ষু যেন অশ্রুসিক্ত হইয়া পড়িল । চাদমোহন মৈত্র মহাশয় ও আমি তাহার মুখের দিকে তাকাইয়া রহিলাম । তাই আজ মনে হইতেছে, পণ্ডিতেরা তাহার সংস্কৃতে বিশেষ ব্যুৎপত্তি দর্শনে তাহাকে যে “বিদ্যাসাগর” উপাধি প্রদান করিয়াছিলেন, তাহ উপযুক্ত পাত্রেই প্রদত্ত হইয়াছিল বটে, কিন্তু বাংলার অগণ্য জনসাধারণ তাহাকে যে “দয়ার সাগর” নামে অভিহিত করিয়াছিল, ইহা যেন তাহার জীবনের পক্ষে যোগ্যতর উজ্জ্বলতর উপাধি । আর একদিন চামমোহন মৈত্র মহাশয়ের সঙ্গে বিদ্যাসাগরভবনে গমন করি । মৈত্র মহাশয়কে সঙ্গে কfরস্থ লইয়: যাইবার সময় ঠিক সহজ পথে না গিয়া একটু ঘুরিয়া যাই । সেদিনও তিনি আমাদিগকে বেশ প্রীতির সঠিতষ্ট অভ্যর্থন করিলেন । কিন্তু মৈত্র মহাশয় আমার দিকে ইঙ্গিত কবিয় বিদ্যাসাগর মহাশয়কে বলিলেন, “ইনি আমাকে বড় ঘুরিয়ে এনেছেন ।” বিদ্যাসাগর বুদ্ধের এই কথা শুনিয়া অামায়ু বলিলেন, “সে কি গে, তুমি এই বুড়ে মাতুষকে এত ঘুরিয়ে আনলে ?” বলিয়াই আমাকে জিজ্ঞাস করিলেন, “ইr। গ বাপু ! তুমি কি কর " চাদমোহন মৈত্র মহাশয় তত্ত্বত্তরে বলিলেন, “তনি সধারণ ব্রাহ্মসমাজের এক জন প্রচারক।” শুনিয়াই বিদ্যাসাগর বলিলেন, “বাপু ! এ সংসারে পথেষ্ঠ যদি মাহুষকে এইরূপে ঘুরাইয়া অনি ে পার, তাহলে ধৰ্ম্মেয় পথে মানুষকে কত যে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াবে, ত৷ কে জানে ?” ইত্যাদি । পরে ধৰ্ম্ম বিষয়ে দুষ্ট একটা কথ। এই প্রসঙ্গে উত্থাপন করিলেন । বলিলেন, “ধৰ্ম্ম বড় জটিল জিনিষ, আমি এ-বিষয়ে বড় কিছু বুঝিতে পারি না ।" পরে আত্মার কথা তুলিয়া বলিলেন, “ধৰ্ম্মশাস্ত্রাদিতে 'আত্ম। কি ?