পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রেণবণ হাসি শোনে আর মনে মনে ভাবে কতটুকু তার অশোভন । কোন কথাটির অস্তরালে কিসের ইঙ্গিত বা চোখের উজ্জল দৃষ্টিতে কতটুকু মালিন্তের থাদ মিশানো । ছেলেটি দোরগোড়ায় টুলে বসিয়া গল্প করে—এখনও তাহাকে বাড়ীর মধ্যে পূর্ণভাবে অভ্যর্থনা করিবার সাহস হেমাঙ্গিনীর হয় নাই— আর হেমাঙ্গিনী ঐ ক্ষুদ্র ঘরের তক্তপোষের উপর গুইয়া শুইয়া উহাদের কথা শোনে, মাঝে মাঝে থোলা জানাল দিয়া আড়চোখে চাহিয়া ভাবভঙ্গী লক্ষ্য করে ।-- আশ্চর্য্যের বিষয় ছেলেটি যখন আসে তখন শস্তু থাকে না এবং শঙ্কু থাকিলে ছেলেটিরও আসিবার সময় হয় না, অথচ সালের ঝুড়ি নামাইয়া শঙ্কু যে গল্প ফাদে তাঙ্গ ঐ ছেলেটিকেই কেন্দ্র করিয়া ! যেন সে কতই পরিচিত—*ছুর সঙ্গে আলাপ তার নিবিড় । দুবেল-দেখা লোকের কথা লইয়া ও এমন ঘনিষ্ঠভাবে আলাপ-আলোচনা কেহ করিতে পারে না । গরুটা তার পরমাষ্ট্রীয় সন্দেহ মাই, কেননা অদূর ভবিষ্ণুতে সে সম্পত্তি স্বর্ণ প্রসবই করিবে--আর ছেলেটি তার চেয়েও পরমাষ্ট্ৰীয় । শুধু গৌরীর প্রসাধনের জিনিসগুলি দিয়াই সে ক্ষাস্ত হয় নাই—হেমাঙ্গিনীর চওড়া লাল-পাড় শাড়ী, পদুকাটা সেমিঞ্জ, শঙুর উড়ানী, মাগর: জুতা...কল্পতরুমলে দাড়াইয়া শঙ্কু দি স্বপ্ন না দেখিবে ত কে দেপিবে ? ছেলেটি সেদিমণ্ড দুয়ারে বসিয়া আছে । কাছে বসিয়: গৌরী অনর্গল বকিয় ঘাইতেছে—কত কি অসলংগ্র কথা— তার নিজের কথা, বুধির কথা, গোলদীঘির খেলুড়েদের কথা, এ-বাড়ী ও-বাড়ীর কত তুচ্ছ কথা—আর পাশের ঘরে হেমাঙ্গিন ঠায় শুষ্টয় শুইয়া সে-সব শুনিতেছে । ঘরে ঝাট পড়ে নাই, উঠানে বাসনের গাদ, বিছানা এলোমেলে!— হেমাঙ্গিনীর সে-সব গ্রাহ মাহ । এমন সময় সদর দরজায় ঝণক মাথায় স্তুর আবির্ভাব । একটু অপ্রতিভ হইয় বলিল, কে তুমি ? এই গিয়ে—আপনি কে ? ছেলেটি হাসিল, তোমারই নাম শম্ভু বুঝি ? ঝণকা নামাইয়া স্তুও হাসিল, আজ্ঞে ই । ত দোরগোড়ায় বসে কেন, সুর ত রয়েছে । বলি— চাংকারের উপক্রম করিতেই ছেলেটি বলিল, বেশ ত ফাক জায়গায় হাওয়ায় বসে গেীরীর সঙ্গে গল্প করছি । শতু কতfণ হহয়! বলিল, গেীরীর সঙ্গে গল্প করছেন ? ওর.জানেন ত গৌরী আমার মেয়ে । ভারী সুন্দরী মেয়ে, বেশ গল্প করে ও -- বলিয়া মস্ত একটা রসিকত: করিয়াছে ভাবিয়া টানিয়া টানিয়ু হাসিতে লাগিল । হাসিটা হেমাঙ্গিনীর ভাল লাগিল না । ধড়মড় করিয়া উঠিয় দোর গোড়ায় আসিয়া বলিতে লাগিল, সে উনি জানেন । তোমার মেয়ে যে সুন্দরী সে কেবল আমরাই বলি, ওরা ত বস্তির মধ্যে পড়ে থাকে না--তোমার মেয়ের চেয়ে লাখ লাখ সুন্দরী মেয়ে ওদের বাড়ীতে আছে। Głr--- N o গলি, গরু ও গৌরী (YQ電 of i শম্ভু নাথা নাড়িয়া প্রতিবাদ করিল, আছে ? কক্ষনে না। গয়না গায়ে দিলে সোন্দর হয় ? গাড়ী চড়লেই বুঝি সোন্দর হয় ? বড় বাড়ীতে থাকলেই বুঝি— হেমাঙ্গিনী ধমক দিল, মিছে বক্‌ বক্‌ ক’রে না, যাও হাত পা ধুয়ে ঠাণ্ডা হও । শস্তু ধমক পাইয়া উদ্দীপ্ত হইয়া উঠিল, তাহার মনে হুইল, ছেলেটি ভাবিবে ঐ রোগা মেয়েটাই বুঝি এ বাড়ীর দগুমুণ্ডের কৰ্ত্ত আর শস্তু মানুষ না মানুষ ! পৌরুষ-গৰ্ব্ব লইয়া সে সমান তেজে উত্তর দিল, তুই থাম, বলি তুষ্ট এসব কথার কি বুঝিস ? মেয়েমানুষ-মেয়েমানুষের মত থাক। থাও, দাও, কাজ কর, ব্যস —পরে ছেলেটির পানে ফিরিয়া বলিল, কি বলেন বাৰু, এর মতন সুন্দরী আছে তোমাদের ঘরে ? ছেলেটি মৃদু হাসিয়: উত্তর দিল, না । শম্ভু আনন্দে গলিয়া গিয়া বলিল, শুনলি, হিমি, গুনলি ? হেমাঙ্গিনীর মুখে উল্লাসের চিহ্নমাত্র দেখা গেল না । কষিদ্ধা চাবুক মারিলে মুখের প্রত্যেকটি রেথ যেরূপ বেদনায় স্পষ্ট হইয় উঠে কিন্তু অর্জনাদ করিবার সামর্থ্য থাকে না—হেমাঙ্গিনী তেমনই নিরুপায় অসহায়ার মত চাহিয়া আছে। শস্তু সে মুখের ভাব লক্ষ্য করিয়া বলিল, কথাই ত । আচ্ছ, তোর কি আক্কেল বল্ দেখি, বাবুকে বসিয়ে রেখেছিস এই বাইরের গলিতে ? ঘরে কি জায়গা নেই ? —তোর রস থাকে বসাগে । ঘর : ঘর আর বলিস নে—গোয়াড় বল । হেমাঙ্গিনী মুখ খুলিল । --কি, খোয়াড় ? বলিয়া শম্ভু হুমকি দিয়া উঠিতেই হেমাঙ্গিনী নি:শব্দে সরিয়া গেল । তারপর শস্তু একেবারে বদলাইয়া গেল । ছেলেটির পানে চাহিয় আপ্যায়িতের হাসি হাসিন্ধ; বলিল, একটু তামাক দেব কি ? ছেলেটি তাড়াতাড়ি বলিল, ন তামাক আমি খাই নে । একটু খামিয়া বলিল, তোমাদের সংসার—মানে তোমরা কি করে চালাও । শম্ভু বলিল, আই বাৰু সকাল-বিকাল হাড়ভাঃ মেহমত ক'রে যা উপায়ু করি তাহতেই চলে ।--বলিয়া হাসিল । ছেলেটি আরও অনেক কথা জিজ্ঞাসা করিল--কিন্তু সে-সব কথা নিতাস্তই সময় কাটাহবার জন্ম । সে জিজ্ঞাসীবাধের মধ্যে কৌতুহল ত ছিলই না, উপরন্তু প্রত্যেক প্রশ্নের পর “স্তু যখন অনর্গল বকিয়া যাইতেছিল ছেলেটি গৌরীর হাত লইয়া আঙল-ধরাধরি খেলা করিতেছিল। ছেলেটি বুদ্ধিমান । জানে, কোন ধনী যদি ধরিত্রের ফুটরে বসিয়া সহান্তভূতিহীন প্রশ্নে তার দুঃখ-দুৰ্দ্দশার কাহিনী শুনিতে ১াহে—রুতার্থস্মন্ত দরিদ্র ধনীর প্রশ্নের অন্তরালে নিস্পৃহ মনকে আবিষ্কার করিবার চেষ্টা মাত্র না করিয়া আপন আবেগেই