পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

مسيراtrين প্রবণসী SN28\こ শম্ভু অসহিষ্ণু কণ্ঠে প্রতিবাদ করিল, ঐ হিংসেতেই তুই মলি ! হেমাঙ্গিনীর চোখ জলিয়া উঠিল, হিংসে ? কিসের হিংসে ? কার হিংসে ? শঙ্কু চড় গলায় বলিল, কার আবার, মেয়ের । ওর রূপ আছে—তোর নেই । হেমাঙ্গিনী তীর গতিতে শঙ্কুর বুকে বাপাইয়া পড়িয়া পাগলিনীর মত তাহাকে কিল চড় মারিতে মারিতে বলিল, বেশ করি হিংসে করি । আমার মেয়ে আমি যদি হিংসে করি, তাতে কার কি ? এমন সময়ে বহিদ্বারে ছেলেটি আসিয়! ডাকিল, গৌরী ! স্তম্ভিতা গৌরী মুহূৰ্ত্তে সচকিত হইয় ছুটিয়া আসিল । ছেলেটি তাহার হাত ধরিয়া হাসিয়া বলিল, চল । 聚 褒 聚 রাত্রিতে গৌরী যখন ফিরিল—তখন তাহার পিছনে প্রকাণ্ড মোট লইয়া একটা মুটেও আপিল । কাপড়, জাম, স্বটকেশ, চায়ের টিন, ষ্ট্রোভ, খাবার ইত্যাদিতে মোটটি বোঝাই হইয়াছিল । ক্ষুদ্র ঘরের তত্ত্বপোষে জিনিষগুলি নামাইয়া রাখিতেই সেখানে আর জায়গা রহিল না। গৌরী হাসিমুখে মাকে ডাকিল। কেহ কোন সাড়া দিল না। শম্ভু যদিও আসিল এবং জিনিষগুলি দেখিয়া জোর করিয়া হাসিলও, তথাপি বেশ বুঝা গেল উৎসাহের তারটি কে যেন জোর করিয়া ছিড়িয়া দিয়াছে। অপরাহ্লের বাহুযুদ্ধ প্রবলতর হইবার মুহূৰ্ত্তে জানালাটা উহার বন্ধ করিয়ু দিয়াছিল, সুতরাং পরিণামফল জানিবার সুযোগ আমাদের হয় নাই । এখন হয়ত বা যুদ্ধবিরতিতে শাস্তি চলিতেছে, কিন্তু আসন্ন মুহূৰ্ত্তগুলির পরে কাহারও তেমন বিশ্বাস নাই । স্তব্ধ আকাশ ; যে-কোন মুহুর্তে ঝড় উঠতে পারে। সে যাহা হউক, জিনিষগুলি নাড়িতে নাড়িতে শতুর উৎসাহ যেন ফিরিয়া আসিতেছিল। ষ্টোভটা হাতে লইয় বলিল, এটা কি হবে রে, গৌরী ? গৌরী বলিল, কেন, চা হবে । এই দেখ না, চায়ের টিন—মেলাই চা আছে এতে । বাবু বললে, তোমরা চা খাও না, কেন ?—আমরা দোকানে বসে কেমন চা খেলাম । তারপর এইটে কিনে দিয়ে বললে, কাল যখন তোমাদের বাড়ী যাব, তখন এতেই করে চা তৈরি করে দিও ত । —বলিয়া গৌরী ষ্টোভটা নাড়িতে লাগিল । দ্বারের ও-পাশে হেমাঙ্গিনীর কণ্ঠস্বর শোনা গেল, ভাতটাত খাবি গোরী, না হেঁসেন্সপাট নিয়ে সারারাত বসে থাকব ? গৌরীকে উদ্দেশ করিয়া কথাটা ঠিক জায়গায় গিয়া পৌছিল । শন্তু বলিল, ই, ভাত বাড়—আমরা যাচ্ছি। গৌরী তাড়াতাড়ি বলিল, আমি কিছু খাব না, মা । বলে পেট ফেটে যাচ্ছে ! —তা জানি । ভাল ভাল খাবার খেয়ে কি মুখে ভাত রোচে ? খাওয়া-দাওয়া চুকিয় গেল, সারারাত্রির মধ্যে কেহ কোন কথাই বলিল না । সকালে উঠিয়া শঙ্কু বাহির হইয়া গেল । হেমাঙ্গিনী ঝুড়িতে কাটা বিচালী লইয়া গরুকে জাবনা দিতে আসিল— পিছনে গৌরী। গামলায় বিচালী ঢালিয়া ‘শানি' মাখিতে যাইতেছে, গৌরী আঁচল ধরিয়া টানিল, মা ?— হেমাঙ্গিনী উত্তর দিল, কি ? গৌরী মিষ্ট গলায় বলিল, তুই নাকি আমার ওপর রাগ করেছিস ? বল না, মা ? হেমাঙ্গিনী গামলার উপর ঝুঁকিয়া পড়িয় অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে কাজ করিতে করিতে অশ্ব টম্বরে কি বলিল । গৌরীর ছলছল চোথ দুটিতে মুক্তার মত বিন্দু ফুটিয়া উঠিল-মায়ের আঁচলের প্রাস্তু টানিয়া লইয়া চোথে দিয়াই সে ফোপাইয়া ফোপাইয়া কাদিতে লাগিল । আঁচলে টান পড়িতেই হেমাঙ্গিনী ফিরিল এবং অনাদৃত কটার গুঢ় অভিমানের হেতু বুঝিয় মাতৃহৃদয়ে তাতার হাহাকার করিয়া উঠিল । পড়িয়া রহিল বিচালী মাথ, ৰুলিয়া গেল সে স্থান-কালের কথা । গৌরীকে সবেগে বুঙ্কে চাপিয়া ধরিয়! হেমাঙ্গিন কঁাদিয়া উঠিল । খানিক ক্ষণ কাদিয় অস্তরের দহন-জলি তাঙ্গার বোধ করি নিবিল । মেয়ের মুখে কয়েকটি সক্ষেই চুম্বন দিয়া গদগদ স্বরে বলিল, আয় গৌরী,-—তেকে ভাল ক’রে সাজিয়ে দিই । —তক্তপোসের উপর বসিয়া হেমাঙ্গিনী মেয়েকে সাজাঙ্গতে লাগিল। পরিপাটি করিয়া চুল বাধিয়া দিল, ঘন পর সমান্তরালবৰ্ত্তী করিয়া তেমনই সুন্দর সঙ্কু টিপ কঁকিল "স্নে' দিয়! মুখখানিকে শিশিরস্বাত প্রভাতপদ্মের মত করিয়! তুলিল, ঠোট-দুখানিতে লাল রঙ মাখাইতে চলিল ন। তারপর সব চেয়ে দামী ব্লাউজ শাস্ত্রীর সঙ্গে মানাহয় মান্দ্রাজী-ধরণে পরাইয়া দিল । কাল রান্ত্রিতে গৌরী যে বেলফুলের মালা গলায় দিয়ু আসিয়াছিল সেই মালাটি জড়াইয়া দিল কবরীতে। প্রসাধন শেষ করিয়া হেমাঙ্গিনী একদুষ্টে গৌরীর পানে চাহিয়া চোখের জল ফেলিতে লাগিল । গৌরী ধর গলায় বলিল, কাদিস কেন মা ? হেমাঙ্গিনী কোন কথা না বলিয়া পাগলিনীর মত তাহাকে বুকে চাপিয়া ধরিয়া উগ্ৰ চুম্বনের দ্বার এমন ভাবে আচ্ছন্ন করিয়ু দিল যে গৌরী ইপিাঙ্গতে ষ্টাপাহঁতে বলিল, উঃ, লাগে যে !