পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Œግ\. করিয়া তোলে। তিমিরবরণের কাছেও ব্যাপারটা তেমনই দাড়াইয় গেল। ইহা অপেক্ষ সুরেশ্বরবাবুর মন্তব্য সহজে সহ করা চলে । এ যেন কিছুতেই সে সহিতে পারিতেছিল না । অনস্তবাবুর তৃতীয় পুত্র স্বমস্ত তাহার ছাত্র। স্বমস্ত আসিয়া যথাস্থানে বই খুলিয়া বসিল । তাহার বই খুলিয়। বসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাহার মা মায়ু দেবী আসিয়া তাহাঁদের কাছে দাড়াইলেন । তিমিরবরণের মনের অবস্থা তখন ভীষণ । ন-জানি মায় দেবী কি কথা বলিতে কি কথা বলিয়া বিপদ ঘনাইয়! তোলেন । মায় দেবী বলিলেন—বাবা তিমির, তোমার কি কোন অস্থ-বিমুখ করেছিল ? দিনকাল যা পড়েছে—তাই বড় ভবন হয়। আজ না এলে কালই হয়ত স্বমস্তকে তোমার মেসে পাঠাতে হত । বড়ই ভাবনার কথা—যা দিন-কাল পড়েছে! একটু সাবধানে চলাফের করে বাবা— আর শরীর যদি তোমার ভাল না থাকে ত পড়াতে এসে কাজ নেই—সবার আগে শরীরের যত্ন । তা আজকালকার ছেলে তোমরা, তোমরা কি কারও কথা শুনবে । এখন ভাবনা তাই যত আমাদের । মায়া দেবী থামিলে তিমিরবরণ নিতাস্ত অপরাধীর মত যেন বলিল—না মসীমা, অমুখ-বিমুখ ত আমার হয় নি কিছু । আমার এক বিশেষ বন্ধুর বোনের পরশু বিয়ে গেছে, তাই এ দু-দিন তারা আমাকে আসতে দেয় নি কিছুতেই । মায়ু দেবী তখন বলিলেন—তবে আজ বাব না এলেই ত ভাল করতে। এ দু-দিন সেখানে খাট-খাটনি গেছে ত— মানুষের শরীরে কত আর দেয় বাবা! আজকের দিনটাও বিশ্রাম নিলেই ত ভাল করতে । তিমিরবরণ নীরব হুইয়াই রহিল । মায়া দেবী ব:উীর ভিতরে চলিয়া গেলেন। তিমিরবরণ একটা নিশ্বাস ফেলিয়া বঁচিল । মানুষের সহানুভূতি, দরদ, দয়াদাক্ষিণ্য, মায়া. এ-সব আর তাহার ভাল লাগে না মাতুষের দুঃখবোধকে ইহার যেন আরও প্রথর করিয়া তোলে, বেদনাকে আরও বড় করিয়া চোথের সম্মুখে তুলিয়া ধরে যেন। মায় দেবীর স্নেহাপুত সহানুভূতির করুশ স্পর্শে স্বরেশ্বর বাবুর ব্যবহারের রূঢ় অপমান আরও উগ্র দুঃসহ হইয়া উঠে। ছাত্র-পড়ানো সকালের মত শেষ করিয়া তিমিরবরণ হোটেলে ফিরিয়া আসে। পথে সে মীনার কথাই ভাবিতে থাকে। এ দুই দিন সে মীনার কথা ভাবিবার অবসরই যেন পায় নাই বলিয়া তাহার মনে হয় । কিন্তু আসলে মীনার কথা এত গভীরভাবে তাহার জীবনকে এ দুই দিনে দোলা প্রৰণসী Nరి 8Nరి দিয়াছে যে সে-ভাবনার আর শেষ নাই জানিয়াই ভাবিতে সে চেষ্টা পায় নাই । মীনা তাহার বন্ধু স্বত্রতর বোন এই মীনারই বিবাহ উপলক্ষে এ দুই দিন তাহার সমস্ত কাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়াছে। এই মীনাকে তিমিরবরণ গভীর ভাবে ভালবাসিয়াছিল এবং এ-কথা সে উপলব্ধি করিয়াছিল সেই দিন যেদিন মীনার বিবাহের কথা পাকাপাকি রকমে ঠিক হইয়া গিয়াছিল। অবশু, তাহার পূৰ্ব্বে উপলব্ধি করিলেও মীনাকে জীবনে পাওয়ার কোন যোগ্যতাই তাহার ছিল না। মীনাও যে তাহাকে ভালবাসিয়াছিল তাহাও সে মীনার বহু দিনের আচরণের ভিতর দিয়া যেন বুঝিতে পারিয়াছিল। কিন্তু তাহাদের হৃদয়ের ভাব অপরের নিকট প্রকাশ হইয়া পড়িলেও কেহ তাহার মূল্য দেয় নাই । মা দিবার কারণও যথেষ্ট বর্তমান ছিল । মীনা মধ্যবিত্ত গৃহস্তের কন্য, স্বপ্রতিষ্ঠিত গৃহের বধু হইবার মত যোগ্যতা তাহার অাছে, কাজেক্ট তিমিরবরণের যে কোন দাবি মীনার উপর থাকিতে পারে তাহ কেহ ভাবিয়া দেথা কোনদিন প্রয়োজন মনে করে নাই । তিমিরবরণ নিজেকে ভাল করিয়াই চিনিত—সে যে গৃহহীন, জীবনে অপ্রতিষ্ঠিত তাহ। সে ভাল করিয়াই জানে। কাজেই অস্তরের ভীরু দাবি সে প্রকাশের যোগ্য বলিয়া মনে করে নাই, নীরব হইয়াত ছিল । তিমিরবরণের যা-কিছু সামান্ত প্রতিষ্ঠা সে শুধু লেখক-হিসাবে। মীন ছিল তাহার গল্পের প্রধান পাঠিক এবং মগ্রশংসা ও বিদ্রুপের ভিতর দিয়া চিরদিন সে তিমিরবরণের লেখায় উৎসাহ জোগাইয়া আসিয়াছে । তিমিরবরণ কিন্তু তাহার মনের কথাটা ধরিতে পারিয়াছিল । আজ তাই তিমিরবরণের কেন জানি মনে হয়, মীনার প্রতি সে অবিচার করিয়াছে এবং দুনিয়া অবিচার করিয়াছে তাহার প্রতি । জীবনে মীনার সাক্ষাং ন ঘটিলে হয়ত লেখক-হিসাবে প্রতিষ্ঠা অর্জনের জন্ত কোন আগ্রহই তাহার মধ্যে দেখা দিত না। কারণ, অজ্ঞাত অপরিচিত পাঠক-পাঠিকার জন্য তাহার হৃদয়ে কোন অস্তৃতি ছিল না বলিলেই হয় । মীনার প্রেরণায় সে অজ্ঞাত পাঠক-পাঠিকার কাছে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করিয়া লইয়াছে, কিন্তু মীমার প্রেরণার অবর্তমানেও তাহাদের চোখে তাহাকে প্রতিষ্ঠিত থাকিতে হইবে। তিমিরবরণ হোটেলে ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, তাহারই পাশের ঘরে স্বত্রত অনাদি বীর সঙ্গে গল্প জুড়িয়া দিয়াছে । সুব্রত যে তাহারই কাছে আসিয়া ওখানে অপেক্ষা করিতেছে তাহা তিমিরবরণ সহজেই বুঝিল । নিজের ঘরের দরজা খুলিয়া স্বত্রতকে সেখানে আনিয়া বসাইয়া বলিল—কি রে, কলেজ যাবি না আজ ? স্বত্রত বলিল-না, শরীরটা জাজ ভাল না। ক'দিন