পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীবিভূতিভূষ y হাৰুল মফস্বল কলেজ হইতে বি-এ পাস করিয়৷ কলিকাতায় এম-এ পড়িতে আসিতেছে । জোড়াসাকোয় তাহার কাকার বাড়ী, কয়েক দিন থেকে সেখানে একটু সাড়া পড়িয়া গিয়াছে। বউয়ে-ঝিয়ে, ছেলেমেয়েয় পরিবারটি একটু বড়, সতর্কত। সত্ত্বেও একটু অপরিচ্ছন্নতা আসিয়াই পড়ে গৃহিণী বলিতেছেন, “আমি উদয়াস্ত খিটু খিট্‌ ক’রে হার মানলাম, এইবার তোমরা জব হবে –সে তেমন-শুচিবেয়ে-ছেলে নয়, একটু কোথাও ময়লা দেখলে হুলস্থল কাণ্ড বাধাবে!--” বধু, নিজের দুরন্থ ছেলেমেয়ে দুটি আর ছোট দেওর ননদগুলিকে খেলায়খুলায়, সাজেগোজে পরিচ্ছন্নতায় অভ্যস্ত করিতেছে ; একটু এদিক-ওদিক হইলেই শাসাইতেছে, “ঐ:, গাউীর শব্দ ; দেখ, ত র্য,–বোধ হয় হাবুল ঠাকুরপে এল ..” শিশুমহলে একট। আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় বেশ সুফল ও পাওয়া যাইতেছে । স্কুলগামী ছেলেমেয়ে পাচটি । তাহারা পড়ার ঘরদুয়ার ঝাড়িয়া-ঝুড়িয়া, বইয়ে শাদ কাগজের মলাট দিয়া, এক প্রকার সশঙ্ক আগ্রহের সহিত হাবুলের প্রতীক্ষা করিতেছে ; ওদিকে তাহদের স্কুলে পৰ্য্যস্ত হাবুলদাদার অলৌকিক পরিচ্ছন্নতার সংবাদ প্রচার করিয়া সেখানেও একটু বিস্ময়ের গুঞ্জন তুলিয়াছে। বড় মেয়েটি আবার একটু বেশী কল্পনাপ্রবণ,–চোখমুখ ফুঞ্চিত করিয়া সহপাঠিনীদের বলিতেছে, “এতোটুকু ধুলো কি বালি একটু দেখুক দিকিল হাবুলদাদা তোমার গায়ে,--এই একরত্তি...হু মশাই !.”—পরিণামটুকু তাহাঁদের কল্পনার উপর ছাড়িয়া দিয়া আরও ভয়ঙ্কর করিয়া তুলিতেছে । ঠিক এতটা না হইলেও ছেলেটি এ-বিষয়ে একটু বাতিক গ্রস্ত বটে। আসিল,—দিব্য ফিটুফাট ; ট্রেনে, জাহাজে যে এই বারোটি ঘণ্টা কাটাইয়া আসিল চেহারায় তাহার চিহ্ন খুবই কম, পরিচ্ছদে নাই বলিলেও চলে, জুতা জোড়াটি ংরা ণ মুখোপাধ্যায় পৰ্য্যস্ত কখন এরই মধ্যে কেমন করিয়া ঝাড়িয়া ঝকঝকে করিয়া লইয়াছে । ব্যাগটা রাখিয়া, কাকীমাকে প্রণাম করিতে কুকিয়া হঠাৎ একটু পাশে সরিয়া গেল । বলিল, “একটু সরে এস এদিকে কাকীম, একটু যেন নোংরা ওখানটা ।” ছেলেমেয়ের সসন্ত্রম কৌতুহলে এক স্থানে ভিড় করিয়া দাড়াইয়াছিল, বড় মেয়েটি আগাইয়া গিয়া চারিটি আণ্ডল দিয়া জায়গাট মুছিয়া দেখিল—একটু জলের সঙ্গে সামান্য একটু যেন ময়লা । সরিয়া আসিয়া, চোখ বড় করিয়া আর সবাইকে দেখাইয়া—সেটুকু কাগজে মুড়িয়া রাখিতে গেল, সহপাঠিনীদের দেখাইবে-হাবুলদার প্রমাণ ! হাবুল প্রশ্ন করিল, “বোঁদি কোথায় কাকীমা ? সেই দাদার বিয়ের সময় দেখেছিলাম। সামনে আসতে লজ্জা হচ্ছে না কি তার ?” বৌদিদি সেভাবের উৎকট রকম লাজুক নয়। রান্নাঘর থেকে হাত মুখ মুছিয়া আসিতেই ছিল, মাঝপথে ননদের সপ্রমাণু রিপোর্ট পাইয়া, ফিরিয়া গিয়া একবার আরশিট দেখিয়া লইতেছিল । একটু দেরি যে হইয় গেল তাহার কারণ সুন্দরী স্ত্রীলোকের আরশির সামনে দtডাইলে একটু দেরি হইয়া যায়ই । শাশুড়ীর ডাকে আসিয়া হাজির হইল। একটি মিষ্ট হাসি দিয়া দেবরকে অভ্যর্থনা করিয়া বলিল, “এস ভাই, ভাল আছ ত ?” “মন নয়”—বলিয়া হাবুল পায়ের ধুলা লইল, এবং সত্যই ধুলা লাগিয়াছে কিনা একবার ত্বরিতে দেখিয়া লইয়া, হাতটা কপালে ঠেকাইয়ু হাসিয়া বলিল, “ভাগিাস কাকীমা ডেকে দিলেন, নইলে মোটে আছি কিনা সেখোজই নিতে বড়.অন্যায় ব’ললাম কাকীম ?” কাকীমা হাসিয়া বলিলেন, “ঐ, আরম্ভ করলি । ত এসেছিলেনই বাপু ।” বৌদিদি বলিল, “না ভাই, আমি এক টেরেয় ওদিকে উনি