পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাদ্র হবে । তাই বলছি, যেমন আছেন তেমনি আমার সঙ্গে বেরিয়ে আমুন। প্রশ্ন করবার কৌতুহল থাকে, পরে করবেন। তা ছাড়া, র্যাকে দেথতে যাচ্ছেল তাকে দেখলে আপনার প্রশ্ন করবার আবশ্বকও হয়ত আর থাকৃবে না। নিন, এখন দেরি করবেন না, আপনার ষ্টেথিসকোপ এবং দু-একটা শেয সময়ের ইনজেক্সন-এর সরঞ্জাম পকেটে করে আমার সঙ্গে বেরিয়ে আমুন। ডাক্তারী ব্যাগ নিয়ে বেধোবেন না, অন্যান্য আবশ্ব)ক জিনিষ আশা করি সেখানেই পাবেন ।” বলে মেয়েটি অত্যন্ত নিশ্চয়তার ভঙ্গীতে দাড়িয়ে উঠল। নিখিলনাথ আর যেন দ্বিরুত্তি করবার শক্তি সঞ্চয় ক’রে উঠতে পারলেন না। অত্যন্ত বাধ্য ছেলেটির মত দরকারী জিনিষগুলো পকেটস্থ ক'রে মেয়েটির পিছন পিছন বেরিয়ে পড়লেন । দরজার কাছে আসতেই দরোয়ান টুল ছেড়ে দাড়িয়ে উঠল এবং সসম্ভ্রমে মেয়েটিকে অবনত হয়ে সেলাম জানল নিখিলনাথ দরোয়ানের দিকে চেয়ে যেন প্রায় একটা কৈফিয়তের মতই বললেন, “ভগত, সি, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। কেউ আসলে কাল আসতে ব'লে। আর ‘বালাক্তি’ বাবুকে ব'লে ৯টার সময় আমার বদলি' তিনি যেন একটু হাসপাতালে থাকেন ।" কাল পয্যন্ত ভগত সিং এমন অদ্ভুত কথা এই কৰ্ত্তব্যনিষ্ঠ লোকটির মুখে কখনও শোনে নি । মুখে সে বললে, “বহৎ আচ্ছ, হুজুর ।” বলে একটা সেলাম ঠোকবার অবসরে একবার মেয়েটির আপাদমস্তক সন্দিগ্ধচোথে নিরীক্ষণ ক'রে নিলে । এতাবৎ মেয়েটির সঙ্গে বেরিয়ে নিখিলনাথ মনে মনে তার পঠদ্দশার কথা স্মরণ করতে লাগলেন । কেমন ক’রে যেন তার মনে হ'ল যে এর মধ্যে থেকে সেই দূর অতীতের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে । এই মেয়েটির ঋজু দেহ, দৃঢ় পদক্ষেপ, সতেক কণ্ঠ নিখিলমাথের নারীপ্রভাবপরিশুন্য চিত্তে যে একটা মোহ এনেছিল হঠাৎ তাকে একটা রূঢ় আঘাতে ভেঙে দিয়ে মেয়েটি তাকে বললে, “আপনি অমন ক'রে আমার সঙ্গে সঙ্গে চলবেন না । একটু অপরিচিতের মতই থাকবেন পথে । আপনি এথান থেকেই বাসে উঠবেন, দাড়ন ।” তার পর লেশমাত্র ভদ্রতা না ক'রে কিংবা তার আদেশ এই পুরুষমাচুষটি অমান্য করল কিনা সেদিকে কৃপাত মাত্র না করে নি:সংশয়ে সে পরের বাস-ষ্টপের দিকে এগিয়ে চলে গেল । মানুষের মন V &g স্ত্রীজাতির বিনয় বা রূঢ়ত তাকে যে এমন ভাবে বিচলিত করতে পারে, নিখিলনাথের এ অভিজ্ঞতা পূৰ্ব্বে ছিল না। সে যেন হঠাৎ একটা ধাক্কা থেয়ে তার স্বপুলেকি থেকে জেগে উঠল এবং তার আলুখালু মনটাকে সংহত করে নেবার জন্যে বাস্-ষ্টপে দাড়িয়ে পকেট থেকে তার পাইপটা বের ক’রে ধরিয়ে নিলে । হাওড়া ষ্টেশনে মেয়েটি তার পাশ ঘেষে যাবার সময় ব’লে গেল, “শ্রীরামপুর।” পূর্বে এ সমস্ত ব্যাপারে যদিও সে একেবারে অনভ্যস্ত ছিল না, তবু একথা সে মনে না করে থাকতে পারল না, যে, তাদের যুগে তাদের দুঃখকে এমন শ্ৰীমণ্ডিত করবার উপায় তাদের ভাগ্যে ঘটে নি। যাই হোক, একেবারে কলকাতা ছেড়ে যে তাকে বাইরে যেতে হবে একথা সে ভাবে নি । একবার তার মনে হ’ল যে হাসপাতালের লোকের তার খোজ করবে ; এবং বাইরে যাবার যে ক্ষীণ অজুহাৎ সে দরোয়নের কাছে দিয়ে এসেছে এই মেয়েটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে তার রূপটা শ্রোতাদের কাছে বেশ একটু রোমাণ্টিক হয়েই দাড়াবে ; ভেবে সে একটু মুচকে হামলে । শীরামপুৰ ষ্টেশনে নেমে এদিক-ওদিক চেয়ে সে কোথাও মেয়েটিকে দেখতে পেলে না । হঠাৎ তার মনে হ’ল যে কোন চক্রাস্তের কুহকে পড়ে কোন ব্যক্তিগত বিপদের মধ্যে পড়বে না ত! কিন্তু তখনই তার মনে তার ঘরের মধ্যেকার অসহায় ক্লাস্ত অথচ আত্মসমাহিত সেই মেয়েটির ছবি জেগে উঠল। মন থেকে সমস্ত দ্বিধা দূর কবে দিয়ে সে এগিয়ে গেল গেটের দিক । এখানেও মেয়েটির সন্ধানে সে সাবধানে চার দিকে চেয়ে দেখলে, তখন সন্ধ্য প্রায় সমাগত । গেট থেকে শহরের রাস্তায় বেরিয়ে সে কোন দিকে যাবে ঠিক করতে না পেরে সামনেই একটা খাবারের দোকান দেখে সেখানে গিয়ে কিছু খাবার কিনলে । ইচ্ছা এই যে জল খাওয়ার ছলে এথানে অপেক্ষ ক'রে দেখবে ধে মেয়েটির কোন হস্কি বতে পারে কি-না ! নানা চিস্তায় অন্যমনস্ক ভাবে সে এদিক-ওদিক দেখছে । একটা হাংলা কুকুর তার কাছে এসে দঁড়াল , অল্প অল্প খাবার ভেঙে সে তাকে দিচ্ছে আর দেখছে । একটা ছাড়াক গরু শুনে শালপাতার ঠোঙা চিবিয়ে অনিৰ্ব্বচনীয় আনন্দ