পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

و این ابیا রস সম্ভোগ করছে। যেসব লোক যাতায়াত করছে তার অধিকাংশই ওড়িয়া কুলি । নিখিলনাথ ভাবলে, উ, এরা কি সমস্ত বাংলা দেশ ছেয়ে ফেলেছে ! সাহেবের পোষাক-পরা একটা লোক এমন ক’রে রাস্তায় দাড়িয়ে খাবার খাচ্ছে দেখে তারা মাঝে মাঝে তাদের কুতুহলী দৃষ্টি তার দিকে নিক্ষেপ করছে । একটি নিম্নজাতীয় মেয়ে চলেছে, হাতে একটা ময়লা গামছার পুট্‌লী, বয়স হয়েছে, তবু পাড়াগায়ের সাবলীলতা তার চলনে । নিখিলনাথ তার দিকে একবার চেয়ে মনে মনে শহরের কলেজের মেয়েদের সঙ্গে তুলনা করে বিরক্ত হয়ে ভাবলে, ওরাই আবার দেশের মা হবে। আবার কুকুরটাকে খানিকট খাবার দিয়ে শালপাতাট গরুটার দিকে ফেলে দিলে । পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মোছবার সময় অনিচ্ছ সত্বেও তার দৃষ্টি মেয়েটির দিকে আপন থেকেই ফিরল। মেয়েটি তখন একটু দূরে গিয়েছে। এমন সময় ঘাড় ফিরিয়ে মেয়েটি তার দিকে একবার চেয়ে আবার আপন মনে চলুতে লাগল। এক মুহূর্বে নিখিলনাথের চমক ভেঙে গেল । তার স্পষ্ট মনে হ’ল, মেয়েটি সে-ই । মেয়েটির এই আশ্চৰ্য্য পরিবর্তনে সে একেবারে অবাকৃ হয়ে গেল এবং মনে মনে তারিফ না করে থাকতে পারল না । সাবধানে মেয়েটির উপর নজর রেখে সে ধীরেস্থস্থে জল খেয়ে খাবারের দাম চুকিয়ে দিয়ে মেয়েটির অনুসরণ করলে । পথ তখন মোড় ফিরেছে, মেয়েটিকে আর দেখা যায় না, তবু সে প্রায় নিশ্চিস্ত হয়েই চলতে লাগল। অনেক দূরে গিয়ে পথট দু-ভাগে চলে গিয়েছে । তার একটা কাচা রাস্তা । কোন পথে যাবে যখন ভাবছে তখন দূরে সেই র্কাচ রাস্ত পার হয়ে মেয়েটিকে সে একটা আমবাগানের মধ্যে ঢুকুতে দেখল। এমনি ক'রে নানা রাস্ত ঘুরে, আম বাগানের মধ্যে দিয়ে, এদে পুকুরের পাড় ভেঙে ঘণ্টাথানেক পরে মেয়েটির সঙ্গে একটা প্রকাণ্ড বাগানের মধ্যে একটা পোড়ো বাড়ীতে গিয়ে উঠল। চারদিকে বড় বড় আমগাছ যেন প্রেতলোকের প্রহরী। দু-তিনটা ঘর পার হয়ে একটা বড় হল-ঘর । তার এক কোণে একটা মাছুরের উপর কে এক জন শুয়ে । মেয়েটি এসেই একটা লণ্ঠন ধরালে । নিখিলনাথ দেখলে প্রবণসী w: ১৩৪ যে ঘরে কেন আসবাব নেই। কেবল রোগীর বিছানা পাশে একটা মাটির কলসী, গেলাস আর একটা মালস । মেয়েটি রোগীর পাশে গিয়ে বসে আস্তে আস্তে তার কপালে হাত দিলে। “কে, সীমা ?” বলে রোগী একটা কাতর ধ্বনি করলে । “হঁ্য, দেখুন কে এসেছেন।” নিখিলনাথ এগিয়ে এল। সীমা লণ্ঠনটা তুলে ধরলে ! আলোছায়ায় মিশিয়ে মুম্যুর মুখটা ভীষণ দেখাচ্ছে। চোখ দুটো কোটরে বসে গেছে ; নাকট খাড হয়ে উঠেছে ; একট ক্ষুধাৰ্ত্ত শকুনি যেন ! নিখিলনাথ ষ্টেসিকোপট বের করে ডাক্তারের কৰ্ত্তব্যসাধনের উদেখে মাদুরের কাছে গিয়ে উবু হয়ে বসল। উঃ, কি ভয়ানক চোখ লোকটার-কালো কাগজের জমির উপর যেন ভূতের চোখ অঁকা ; তেমনি পাকানো, তেমনি নিৰ্ম্মম। লোকটা একটা হাত বের করে ডাক্তারের হাত ধরলে । শিরদাড়াট। বেয়ে যেন একটা বরফের বিদ্যুৎ চম্কে গেল। মৃত্যুর অন্ধকার-কবরের ভিতর থেকে বাড়ানো সেই হাত । অনেক দিন পর্য্যস্ত নিখিলনাথ সে স্পর্শ ভোলে নি। রোগী যেন স্পষ্ট তার নাম ধরে ডাকলে, “মিপিল !" নিখিল অবাক হয়ে গেল। এই ব্যক্তি কি তার পরিচিত ? এ কে ? এ মুখ সে কখনও দেখেছে বলে ত মনে করতে পারে না । আকাশ-পাতল নাম চিন্তা করতে করতে সে রোগীর নাড়ী দেখতে লাগল। এই বার রোগী আবার স্বম্পষ্টস্বরে বললে, “চিনতে পারছিস না, নিখিল ? আমার এই হাতখানা দেখলে কি কারুর ষ্টীমারঘাটে গোরা ঠাঙাবর কথা মনে পড়বে ?” এক মুহূর্কে নিপিলের চোখের উপর থেকে অতীতের বিরাট কালে পর্দাটা উঠে গেল— সে চেচিয়ে উঠল, “সত্যদা ।” “চুপ, চেচাস নে ভাই। তুই ডাক্তার হয়েছিস নিধিল, বেশী যন্ত্রণা আর না পেতে হয় এমন একটা ব্যবস্থা কর । বঁচবার আর ক্ষমতা নেই, ভাই । সাধ নেই তা বলচ্চিনে । অনেক সাধষ্ট বাকী রয়ে গেল। পাগ লাটা বোঝে না তাই ডাক্তার ডাক্তার ক’রে আমায় অস্থির করে । তোর কাছে পাঠিয়েছিলুম ; বঁচাবার জন্যে নয়, ওকে তোর জিন্মায় দিয়ে যাব বলে। তুষ্ট নিজে যদি কোন দিন ওর পরিচয় পাস্, ত দেখ বি এমন রত্ব জগতে বেশী নেই।”