পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՆՊՋ এই অমৃতপ্ত আশ্রয়দাতৃসম্বন্ধে তার আহত চিত্তকে করুণার্ড করবার জন্যে নিজের মনকে বোঝাতে লাগল। কিন্তু সম্প্রতি তার মন তার এই আবেদনকে গ্রাহের মধ্যেই আনলে না। দরোয়ানকে ডেকে বললে, “এই থোকাবাবুকে নিয়ে ঐ বাবুর কাছে দিয়ে এস। বল আমি এখন যেতে পারছি না ।” তার পর খোকাকে কোলে ক'রে বারংবার চুমু দিয়ে সে দরোয়ানের কাছে দিয়ে দিল । নন্দলাল যদিচ আশা করে নি যে পত্র প্রাপি মাত্র জ্যোৎস্ব তার সমস্ত দুর্ব্যবহার বিস্তৃত হয়ে তার কাছে এসে ধরা দেবে ; তবু সে দরোয়ানকে একল থোকাকে নিয়ে ফিরতে দেখে মনে মনে আহত হ’ল । তার অস্তনিহিত চিরন্তন পুরুষ মানুষটি যেন পৌরুষের অভিমানে আঘাত পেয়ে ভিতরে ভিতরে একটু উত্তপ্ত হয়েই উঠল। নিখিলনাথ সম্বন্ধে তার চিত্ত অধিকতর সন্দেহাকুল এবং এমন কি প্রায় ঈর্ষাপরায়ণ হ’য়ে তার মনকে তিক্ততায় ভরে তুললে । অজয়ের হাত ধ’রে সে অকারণেই অত্যন্ত নিষ্ঠুর ভাবে টেনে নিয়ে চলল তাকে । ভয়ে বেচারী একবার মেসোমশায়ের মুখের দিকে অসহায় ভাবে চেয়ে প্রাণপণে তার চলার সঙ্গে তাল রাখবার জন্যে দৌড়তে চেষ্টা ক’রে গেল পড়ে। তার উদাম গতির এই আকস্মিক বাধায় নন্দলাল অত্যন্ত বিরক্ত এবং নিষ্ঠুর হয়ে উঠল। হাত ধরে রূঢ় ভাবে একটা টান দিয়ে সে তাকে টেনে তুলতেই বালক ভয়ে কেঁদে ফেললে । অজয়ের সেই অসহায় কান্নায় নন্দলালের চমক ভাঙল । অজয়কে সে সত্যই ভালবাসত। তা ছাড়া সে কমলের দুলাল, তাকে দুঃখ দিয়ে কমলের বিরূপত অর্জন করতে সে পারে না । কিন্তু আজ বারংবার তার ক্ষতবিক্ষত অবমানিত হৃদয় বঞ্চিত ভিক্ষুকের মত নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছিল ; এবং কোন-একটা প্রতিশোধের ছিদ্রপথে হৃদয়ের পুঞ্জীভূত বাষ্পকে মুক্তি দিতে না পারলে তার চিত্তকে কিছুতেই সে শাস্ত করতে পারছিল না। এই সামান্য ঘটনার ধাক্কায় সে চেতনা লাভ করলে এবং অজয়কে তাড়াতাড়ি কোলে তুলে নিয়ে বারংবার চুমো দিয়ে তাকে শাস্ত করতে লাগল । ૨૭ আবৃত লণ্ঠনের স্বচ্ছতিমিরালোকে জীর্ণ গৃহ-কঙ্কালের প্রবাসী SNSBNS শ্মশানক্ষেত্রে স্তিমিতপ্রায় প্রাণশিখার শেষ বহ্নিজাল উদগী: করে সত্যবান তার জীবনলীলার অচিন্তনীয় অদ্ভূত কণি! বলে গেল। শুনতে শুনতে নিখিলনাথ তার চোগে?! জল সামূলাতে পারে নি। সত্যবানের অসীম ধৈর্য্য, তাং: সঙ্গীদের অদম্য একনিষ্ঠত, সীমার একাগ দেশভক্তি હાર সম্পূর্ণ অভিভূত করে ফেললে । - কথা মোটামুটি শেষ ক'রে সত্যবান বললে, “সব কথা শুনলে তোর মনে হবে সত্যদা তোকে একটা উপন্যাস শোনাচ্ছে । তাছাড়া সব কথা বলবার মত সময়ও বোধ হয় আর হবে না। আজ ক-দিন হ’ল ভিতর থেকে একট কাপুনির মত ধরছে থেকে থেকে । তুষ্ট এসেছিল, শ হয়েছে । ক-টা কথা না ব'লে আমি মরতে পারছি না ।" নিখিল বাধা দিয়ে বললে, “মবার তোমার দেরী আছে সত্যদা ! তোমার কাজ ত ফুরোয় নি এখনই তোমার মুখ থেকে মরার কথা শুনতে আমথ বাঙ্গি নষ্ট । হাতটা একটু দেখি ” এই বলে নিখিল তার চিকিৎসকের কর্তব্যে প্রধক হ'ল । সত্যবান একটু মুছ হাসলে, কিন্তু বাধা দিলে না। বাধা দেবার ক্ষমতাও তার আর বেশ ছিল না । অনেক ক্ষণ ধরে খুব ভাল ক'রে পরীক্ষা ক'রে আশার কোন অবলম্বন কিছু আছে ব’লে নিখিলনাথের মনে হ'ল না । সত্যবানকে একদিন সে নিজে প্রাণ দিয়েই ভাল বেসেছে, গুরুর মত ভক্তি করেছে । দুৰ্জ্জয় জীবনবহির সেক্ট দীপ্তিশিখ আজ স্তিমিতপ্রায় । অজ্ঞাত, অখ্যাত, প্রতাড়িত সত্যবান –তার ঐ কঙ্কালটুকুর মধ্যে কোথাও কি এতটুকু ফুলিঙ্গ জীবিত নেই যাকে তার সমস্ত চিকিৎসাবিদ্যার মন্ত্রশক্তিতে আবার সেই প্রদীপ্ত শিখায় পরিণত ব্যথিত ব্যাকুল চিত্তে সে চুপ ক’রে এখsiওঁ ; করতে পারে ! রইল । নিঃসহায় নিরাশার ম্ৰিয়মান ছায়া সম্ভবত তার মুখে প্রকাশ পেয়ে থাকবে । সত্যবান তার মুথের দিকে চেয়ে হেসে বললে, “আমাকে কি ছেলেমামুষ পেয়েছিস্ রে ? চিকিৎসার জন্যে আজ তোকে আমি ডাকি নি। সহজে আমার কথা বুঝবে এমন লোক আর আমার মনে পড়ল না। তাই তোকে এই বিপদের মধ্যে ডেকে এনেছি—নইলে