পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

جاسbbا প্রবাসী 為○ー ご একটানা ঝড়ের মত বহিয়৷ চলে—যেখানে আলগা বালু বাতাসের বেগে ঘূণীর সৃষ্টি করে—নদীজলের কুলুধ্বনিতে কান যেখানে পীড়িত হইয়া উঠে। ঝোপে ঝোপে যখন জোনাকি জলিয়া নিবিয়া যায়, কিংবা শ্মশান-শকুন গভীর রাত্রিতে প্রেতশিশুর মত ককাইতে থাকে, অথবা মড়ার মাথার ভিতর দিয়া বায়ু প্রবাহিত হইয়া গোঙানির স্বষ্টি করে—তখন নিবন্ত চিতার পাশে বসিয়া অনতিদূরবর্তী অন্ধকারমাথা নদী ও মাথার উপর পাংশু আকাশের পানে চাহিয়া কোন দেশের কথা মনে জাগে ? চিতাধূম কুণ্ডলী পাকাইয় উৰ্দ্ধস্তরে উঠিবার সঙ্গে সঙ্গে মনও তার সাথী হয় এবং তারার দেশের ওপারে যে অজানা জগৎ তারই সীমানায় লুব্ধ মধুকরের মত গুঞ্জরণ করিয়া ঘুরিয়া মরে । সেই অমৃতলোকে অমৃতসিন্ধুর তীরে মিলনের সেতু রচনায় তার ব্যস্ততা দেখা যায়। পার্থিব ক্ষণিক মিলনকে যুগব্যাপী ধ্বংসহীন আনন্দের মুখে তুলিয়া দিয়াই সে পরম তৃপ্ত। তাই তার স্বৰ্গ রচনার প্রয়াস-পরলোকের বাৰ্ত্ত চয়ন করিয়া প্রিয়বিরহ নিবারণে তাই সে এত উৎসুক। শ্মশান-বৈরাগ্য ক্ষণিকের তরে আত্মবিলোপের যে ভাবটি মনে তীব্রতর ভাবে ফুটাইয়া তুলে উপরের ঐ নক্ষত্রজগৎ সামান্য স্নিগ্ধতর আলোকে ধীরে ধীরে সে ভাবটি বিলুপ্ত করিয়া মানুষের কানে স্বদুর মিলনের আশ্বাসবাণী শুনাইতে থাকে । মাচুর্য ভস্মীভূত দেহের পানে চাহিয়া উঠিয় দাড়ায় ও নদীতে ডুব দিয়া আত্মহত্যা করে না--ধীরে ধীরে লোকালয়ে ফিরিয়া চলে । এত ক্ষণে চিতা জলিয়া উঠিল । চন্দনকাঠ ও গাওয়া ঘিয়ের স্বগন্ধে বাতাস ভারাক্রান্ত হইয়াছে । ভাঙা কলসী, ছেড়া কঁথা বালিশ ও বঁশি দড়ির টুকুরার পাশে জমিদারবাড়ীর বহুমূল্য খাট, বিছানা, বালিশ, ফুল ও পরিধেয় স্তুপীকৃত রহিয়াছে। বাবলা গাছে কাক আছে—রত্রি বলিয়া সে নীরব, বহু লোকের কোলাহলে কুকুরের দল আত্মগোপন করিয়াছে । বনঝাউয়ের গর্তে লোভর্তি চোখগুলি জলিবার ফুরস২ পায় নাই--যে তীব্র আলো ! উপরের আকাশও সময় বুঝিয়া পরিষ্কার নীলের থালায় নক্ষত্রের মণিমাণিক সাজাইয়া ধরিয়ছে, এখানকার নদী পর্য্যস্ত স্নানের ঘাটের উৰ্ম্মিবাহুবিক্ষেপভরা কিশোরী নদীর মতই চপল । শ্মশানের ভয় ও গাম্ভীৰ্য্য মেশানো মহিমায় যেন অপমৃত্যু ঘটিয়াছে ! হায় রে মৃত্যু! তোমারই রাজত্বে আসিয়া এতগুলি মানুষ আজ তোমাকেই হত্যা করিয়া চলিল । চারি দিকে গল্পের মিশ্রধ্বনি । যে যে-গল্পের রসিক বহুধা বিভক্ত হইয়া বালুতটে বৃত্তাকারে বসিয়া সেই কাহিনীর চিত্রে বর্ণ সম্পাত করিতেছে। চিতায় নিশ্চল তমু অগ্নির বর্ণে বর্ণ মিলাইয় অঙ্গার হই যাইতেছে—fচতার পাশে পার্থিব ভোগবিলাসের খোলস পরিত্যাগ করিয়া সে অগ্নিস্নাত হইতেছে, সে-দিকে কষ্ট, কেই ত ভাল করিয়া চাহিয়া দেখিতেছে না ? নিশ্চিন্তু মনে মন্দীভূত তেজে ইন্ধন ঠেলিয়া দিয়। ঐ লোকগুলি পৰ্য্যস্ত হাত মুখ নাড়িয়া এত কিসের গল্প করিতেছে ? জীবন–জীবন- চারি দিকে অফুরন্ত জীবনস্রোত । সের জীবনের কোলাহলে মৃত্যুও বুঝি তুচ্ছ হইয় গেল । কলিকাতার পথে দড়ির পাটে চাপয় জনস্রোতের মধ্য দিয়! যে-শব মুহূর্তের তবে চলিয়া যায়—ক্ষুদ্র এক মুহূৰ্ত্তকণায়ও সে তার যাত্রাপথের অতৃভূতি জগাইয়া মনকে দোল দেয় না। ঝড়ে নৌকাডুবি হইলে ঢেউয়ে ঢেউয়ে পাগল নদ মগ্নস্থানটিকে অতি ক্ষিপ্রতায় নিশ্চিহ্ন করিয়া দেয় । জীবনের স্রোত যেখানে প্রবল, মরণের তৃণপও সেখানে মুহূৰ্ত্তে শতধ বিভক্ত হহয় এই ভাবেই বুঝি মিশিয়া य६ ।। আঞ্জ যদি জমিদারের পরিবর্তে ভূপতির দিদি এখানে আসিত ? তাহা হইলে বাশের থাটিয়া বহিবার জন্য অতি কষ্টে চারি জন লোককে একত্র করিতে হইত। দীর্ঘ পথ হঠত দীর্ঘতর। বন ঝোপের অন্ধকার, মাথার উপর রাত্রির প্রচণ্ড ভার ও বৃষ্টির ভয়াবহতা মনকে সৰ্ব্বক্ষণই বিমুখ করিয়া দিত। নদীর পটভূমিতে ঐ ঝাউয়ের বন-বাবলার সারি-ছেড়া কাথা মাদুর বঁাশ দড়ি ও ভাঙা কলসীর মাঝখানে মড়ার হাড় ও মাথার খুলি ডিঙাইয়া ক্ষণপুধের নির্বাপিত চিতার পাশে থাটিয়া নামাইয়া চাপা গলায় সকলে একবার ‘হরিধ্বনি দিয়া উঠিত। সেই হরিনাম মনকে আরও ভয়ত্ৰস্ত করিয়া তুলিত । ওদিকে হাড় চিবাইতে চিবাহঁতে কুকুরগুলা ক্ষণিকের তরে এধারে চাহিত, ঝোপের মধ্যে