পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գog ছিল না, ভাগ্যসংগ্রামে যোগ দিয়ে জয়ী হবার চেষ্টা করার সামর্থ তার দুর্বল দেহে ছিল না। অদৃষ্ট তাকে যে আঘাত দিলে, নিদ্বন্দ্বে সে তাতেই ভেঙে পড়ল, তার রুগ্ন শরীরে শুধু প্রাণটা কেন মতে টিকে রইল। তার যত রাগ ক্ষোভ পড়ল গিয়ে বৃদ্ধ মাতামহুর উপর, মণিমালার যত বিরক্তি অতৃপ্তি সব তারই উপর প্রকাশ পেত। তিনি তার অবু ছেলেমনধিতে রাগ করতে পারতেন না, গভীর স্নেহ তাকে নিবিড় ব্যথায় ভরিয়ে দিত । বৃদ্ধ আস্তে আস্তে বললেন, “দিদি, এবার একটু সাবু খাও।” মণিমালা ঝাজের সঙ্গে বললে, “না। তুমি জালাতন ক’রে না ।” “ওষুধটা একবার থেয়ে নাও, লক্ষ্মী দিদি ” মণিমালা ঝঙ্কার দিয়ে প্রায় কেঁদে ফেললে, “তুমি কি আমায় স্বস্তিতে মরতেও দেবে না ?’ দুৰ্ব্বল শরীরে সামান্য উত্তেজনাতেই সে একেবারে হুঁপিয়ে পড়ল । বৃদ্ধ উদ্বিগ্ন হয়ে মাথায় বতাস করতে লাগলেন । তার পর বললেন, “লক্ষ্মী দিদি, যদি ওধুটি থেয়ে নাও, একট। জিনিষ এনেছি তোমার জন্তে দেব তাহলে ।” মণিমালার চোখট একটু উজ্জল হয়ে উঠল, তবু সে নিরুৎসাহে বললে, “কই কি এনেছ দেখি ।” বৃদ্ধ আজ অনেক দ্বারে ঘুরে অনেক অপমান বাকাজাল সয়ে অনেক কষ্টে কয়েকটি টকা ধার করে এ কাপড়খানি কিনে এনেছেন । দুর্বল কম্পিত হস্তে মোড়কটা খুলে ফেলে বহু দুঃখে কেন কাপড়খানা নাতনীর হাতে তুলে দিলেন । বাড়ীর স্নান আলোয় শাড়ীট একবার দেখে নিয়েই মণিমালা চাংকার করে উঠল, “এই পচ কাপড় এনেছ আমার জন্যে । এই আমার পূজোর কাপড় !” কাপড়খানা ছুড়ে ফেলে দিয়ে সে বালিসে মাথা ঠুকুতে লাগল, “আমি চাই না, চাই না, কিছু আমায় দিতে হবে না, ওই কাপড়, ও ত ঝি-চাকরকে আমি দিয়েছি, ও আজকাল মেথরাণীতেওঁ পরে না, ওই কিনা আমার জন্মে আন—“রোযে ক্ষোভে তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে গেল । আহত বিমূঢ় বৃদ্ধ তাকে শাস্ত করার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলেন, “ছি ছি দিহ, চুপ কর, অমন করলে এখুনি অর্থ বাড়বে । আমি পরে তোমায় ভাল কাপড় এনে দেব—” মণিমালার কান্না দ্বিগুণ বেড়ে গেল । সে চীৎকার ক’রে বলতে লাগল, “সব তোমার মিথ্যে কথা । কেবল তুমি মিছে কথা বলে ভোলাও আমায় । তোমার একটি কথাও আমি আর বিশ্বাস করি না।" উত্তেজনায় দুর্বলতায় সে মূৰ্ছিত হয়ে পড়ল। . প্রবাসী ゞいこ8へ○ •••দমক হওয়ায় আলোকশিখা চমকে উঠল, ভাং ! জানাল আওয়াজ করে উঠল, দেওয়ালের কালে ঝুলগুলো ; ফুলতে লাগল। পাশের গলি হতে পূজোর বাজনা নিস্তব্ধ ঘরে রূঢ় কর্কশ শোনাতে লাগল । জলে-ভেজা কলতলায় বসে একটি রমণী বাসন মাজছে । i রান্নাঘর হতে কুণ্ডলীকৃত ধোয় বেরিয়ে অপরিসর অঙ্গলে ; জমাট হয়ে রয়েছে। ক্ষুদ্র বারান্দায় একরাশ ময়লা কাপড় ঝুলছে দড়িতে, একখানা মাদুর, খান-দুই পিড়ে, একটা ঘটি, জলের বালতি চারি দিকে ছড়িয়ে আছে । তার মাঝে নানা বয়সের একপলি ছেলেমেয়ে চেচামেচি মারামারি ক’রে কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে তুলেছে । দরজার কড়া নড়তেই, “ওই রে: বাবা এসেছে” ব'লে ছেলের দঙ্গল হঠাৎ চুপ হয়ে গেল । দশ-বার বছরের একটি মেয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলে । গৃহকৰ্ত্ত ভিতরে এসে কাপড়ের মোড়কটা ধরে রাখলে । অতি ক্ষুদ্র ধর, তন্ত্রণপোষে স্তুপীকৃত বিছনা, বক্স, পুটলি, বোতল, আয়ন, ভাঙা পুতুল, ছেড়া বই, দেবদেবীর ছবি, সংস্র রকম জিনিযু ঠেসে আছে । গরাদ-দেওয়া একটুখানি জনিল দিয়ে পাশের বা ভূীর ইট-বের-করা দেওয়াল আর খানিকট। দুৰ্গন্ধ মদম দেখা संग्रे ! মেয়েটি মোড়কের দিকে আড়১োথে চেয়ে জিজ্ঞেস করলে, “আমাদের পূজোর কাপড় এনেছ ?” লোকটি বিরক্ত হয়ে বললে, “ধ ধা, বরক্ত করিস নে । তোর মা কোণা ?” “ম বাসন মঞ্জিছে । ঝি আসে নি।” “ঝিটাকে নিয়ে আর পারা গেল না । রোজ কামাই ।” মেয়েটি পাকাবুড়ীর মত বললে, “ঝি বলেছে ভারি ত তিন টাকা মাঙ্গনে দেবে, তাও তিন মাস বাকী থাকবে, সে আর আসবে না ।” “ঘ তোর মাকে ডেকে দে ৰুচি ” বুচি চলে গেল। লোকটি ক্লাস্তভাবে তক্তাপোষের উপর বসে পড়ল । আজীবন ক্লাস্তি, এ ক্লাষ্টির যেন শেষ নেই । সকালে উঠে কোনমতে কতকগুলো ভাত গিলে সেই সনাতন কলম পিষতে ছোট।--দিনের আলো শেষ হয়ে এলে বাড়ীর অনন্ত অভাব-অনটনের মাঝে ফিরে আসা । পিনের পর দিন সেই একঘেয়ে জীবনের পুনরাবৃত্তি,—পরিশ্রমের ক্লাস্তি এ নয়, এ হ'ল আশাহীনতার ক্লাস্তি, আনন্দঃীনতার ক্লাস্তি, বৈচিত্র্যহীনতার ক্লাস্তি, এ ক্লাস্তি মানুষের জীবনরসকে প্রতিমুহুর্তে শুষে নেয়, মাতুষকে –সমস্ত জাতিকে নিরানন্দ, নিজীব ক’রে তোলে । বুচির মা বাসন ছেড়ে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এল । কালে রঙের ঐহীন চেহারা, দেহে শুধু হাড় কখানা বাকী