পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভণত্র মায়ের মুখের দিকে চাহিয়া কোনও প্রশ্ন করিতে সাহস হইল না । চন্দ্রকান্ত লিথিয়াছেন, “মাকেই বিশেষ করে দেখতে গিয়েছিলে, মা ত তোমাদের ফেলে চলে গেলেন। ওখানে তোমাদের মন টিকছে না জানি। তবে বাবার আর দিদির মুখ চেয়ে কয়েকটা দিন থাকতেই হবে। তার পর তোমরা চ'লে এস । “মায়ের সঙ্গে নাড়ীর প্রথম বন্ধন , তার মৃত্যুতে পৃথিবী যে অন্ধকার লাগবে, জীবনটা অর্থহীন পরিহাস মনে হবে, এ ত বলাই বাহুল্য। কাছ থেকে মৃত্যুকে অনেক দিন দেখনি, কিন্তু জান ত, প্রত্যেক মুহুর্ভেই মানুষ দলে দলে যমযাত্র করছে। অনাত্মীয়ের মৃত্যুর মধ্যে মৃত্যুর সৰ্ব্বনাশ রূপকে প্রত্যক্ষ ক'রে দেখতে হলে যতখানি মমতা নিয়ে দেখা দরকার, ততখানি ত আমাদের নেই। পরের শোক দুঃখ দেখবার সময় আমাদের চোথের উপর এমন একটা আবরণ টান! থাকে যে তার সমগ্র. রূপটা আমরা কিছুতেই দেখতে পাই না। আঞ্জ যখন শিয়রের কাছে মৃত্যু হানা দিয়ে বলছে—যেতে হবে, এমনই ক'রে এই মায়া-মমতা-ভরা সংসার, শিশুর মধুর হাসি, প্রিয়জনের গভীর একাত্মতার বন্ধন, সমস্ত ফেলে চলে যেতে হবে, তখন বুঝতে পারি, একটি মাত্র প্রাণ চলে যায় কত মানুষের অসংখ্য দিনের কত ছোট-বড় সংসার-রচনাকে একদিনে ধূলিসাৎ করে দিয়ে। দীর্ঘদিন ধ'রে শৈশব যৌবন কৈশোরের কত ঘটনা, কত চিন্তা, কত কার্ষ্যের মধ্যে দিয়ে পলে পলে আপনাকে এবং পারিপাশ্বিক জগৎকে যে গড়ে তুলছি শকমিত্ৰ সকলের অন্তরে মে আপনাকে প্রতিনি স্বাক্ট ক'রে চলছি, আবার আপনার মাঝখানে জগৎকে যে প্রতিদিন নানারূপে গ্রহণ ক'রে সঞ্চয় ক'রে করে চলেছি, পার্থিব জগতের সঙ্গে এই আমার স্ববিস্তীর্ণ সম্পর্ক কালের একটি ফুৎকারে শেষ হয়ে যাবে। “তোমাকে বেশী কথা বলব না, আজ তুমি আমার চেয়ে বেশী স্পষ্ট করে সত্য ক'রে পার্থিব জীবনের মূল্য বুঝতে পারছ । জগতের বিরাট প্রাণ-প্রবাহের কত ছোট ছোট এক-একটি প্রাণ-স্পন্দন মাত্র যে আমরা, তা ত সমগ্র মন দিয়ে আজ অনুভব করছ। যে মা আজ নেই, তিনি যেন و سیاس۹ سb অলখ-বেণরণ 4ა? কোনও দিনই ছিলেন না, পৃথিবীর নিয়মে অচিরে সেইটাই বড় সত্য হয়ে উঠবে। এর চেয়ে বড় দুঃখ সস্তানের পক্ষে কি আছে ?” এবার পূজায় বাপের বাড়ী যাইবার সময় হইতেই মহামায়ার শরীরটা বিশেষ ভাল ছিল না । ননদ হৈমবতী বলিয়াইছিলেন, “বোঁ, এবার তোমার ওখানে গিয়ে কাজ নেই। শরীরটার ভাবগতিক দিন কতক বুঝে নাও, তার পর এক সময় গেলেই হবে।” কিন্তু মহামায়ার কেমন মনের ভিতরটা ছট্‌ফট্‌ করিতেছিল, তিনি না গিয়া থাকিতে পারিলেন না। যাইবার সময় হৈমবতী তাহার স্বাভাবিক ভারী গলায় বলিয়া দিলেন, “বোঁ, তুমি ছেলেপুলের মা, তোমাকে ত সাত কথা বলে বোঝাবার দরকার নেই ? নিজের অবস্থা আন্দাজ ত করেছ খানিকট, সাবধানে চলাফেরা করবে। যেন একটা কিছু বাধিয়ে বসে Fil " কিন্তু খুব সাবধানে চলাফেরা করা সম্ভব হইল না। মায়ের এরকম আকস্মিক মৃত্যুতে সংসার হঠাৎ যেন লগুভও হইয়া গেল। একে বহুকালের নিয়মে বাধা সংসার, এবং তদুপরি দিন আসিলে দিন যাইতেই বাধ্য হয়, কাজেই একরকম করিয়া দিন কাটিতেছিল। কিন্তু সংসার-তরণীর হাল ধরিয়া ছিলেন ভুবনেশ্বরী এবং দাড় ছিল স্বরধুনীর হাতে। ভুবনেশ্বরী ত চলিয়াই গেলেন, স্বরধুনীর দৃষ্টিও এই আকস্মিক কঠিন আঘাতে তুচ্ছ বর্তমান হইতে সরিয়া মৃদুর অতীত ও অনাগত ভবিষ্যতে প্রসারিত হইয়া গেল। কৰ্ম্মের জগৎ হইতে এক নিমেষে চিস্তার জগতে তিনি চলিয়া যাওয়াতে সংসার কেবলই টাল খাইয়া চলিতে লাগিল। তাহার উপর অশোঁচের নিয়ম পালন । মহামায়া ও স্বরধুনী বিবাহিত কস্তা। তাহদের নিয়মভঙ্গ চার দিনেই করা যায়, কিন্তু স্বরধুনী বলিলেন, “এক বাড়ীতে বসে ভাইয়ের এক রকম, বোনের এক রকম চলবে না। মা কি আমাদের কম মা ছিলেন ? আমাদের সব নিয়ম একসঙ্গেই ভঙ্গ হবে ।” চার দিনের দিন মৃণালিনী বলিলেন, “ছোট ঠাকুরঝি, তুমি এয়োস্ত্রী মানুষ, আজ দুটো মাছডাত মুখে দিতে হয়।”