পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উদ্ভিদের উপর উদ্ভিদের প্রভাব শ্ৰীগোবিন্দপ্রসাদ মিত্র, এম-এসসি অনেক দিন হইতে জানা গিয়াছে যে এক জাতির বৃক্ষ অন্ত জাতির বা শ্রেণীর বৃক্ষের নিকট জন্মিলে পরস্পরের উপর অপকারী বা হিতকর প্রভাব বিস্তার করে । সাধারণতঃ দেখা যায় যে কতকগুলি বিশেষ শস্ত একসঙ্গে একই ক্ষেত্রে পাশাপাশি চাষ করিলে, উক্ত শস্যগুলিকে পৃথকভাবে চাষ করার অপেক্ষ অনেক বেশী ফসল পাওয়া যায়। এলম্ ( Elm ) বৃক্ষের নিকট প্রাক্ষালতা রোপণ করিলে প্রাক্ষালতাটি প্রচুর ফল দান করে ও বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়। উক্ত উদাহরণগুলি অত্যস্ত সাধারণ, কিন্তু সম্ভবতঃ অনেকের চক্ষে পড়ে না। ডানডেনে নামে এক জন বৈজ্ঞানিক ১৯০৮ সালে স্কোয়াশ-জাতীয় গাছের সহিত কয়েক রকম শস্তোর চারা রোপণ করেন এবং তাহাতে যে শস্ত পাওয়া যায় তাহ, পৃথকভাবে রোপণে প্রাপ্ত শস্য অপেক্ষা অনেক বেশী। ইহাতে আমরা দেখিতে পাই যে এক জাতির বৃক্ষের উপর অন্ত জাতির বৃক্ষের খুব প্রভাব আছে। জাবিজ নামক এক জন জাৰ্ম্মানও যব, গম, মটর ইত্যাদি শস্ত পৃথকভাবে ও একই ক্ষেত্রে মিশাইয়া রোপণ করিয়া ফসলের এইরূপ পার্থক্যই দেখিতে পান। প্রায় পনর বৎসর যাবৎ নানা জায়গায় পরীক্ষা করিয়া জানা গিয়াছে যে, প্রতি একর জমিতে যদি চব্বিশ সের যব ও সতর সের জই রোপণ করা যায় তাহা হইলে যব ও জষ্ট সৰ্ব্বাপেক্ষ অধিক ফসল প্রদান করে । একই জমিতে প্রতি বৎসর একই শস্য জন্মাইলে উক্ত জমির ফলোৎপাদনের ক্ষমতা কমিয়া যায়, কিন্তু যদি নানা প্রকারের শস্য উক্ত জমিতে পর-পর বৎসর জন্মান যায় তাহা হইলে উক্ত জমির উৎপাদনশক্তি হ্রাস হয় না বরং অনেক সময় বুদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। মটর-জাতীয় উদ্ভিদের অর্থাৎ ছোলা, মটর, প্রভৃতির শিকড়ে এক প্রকার জীবাণু বাসা বাধিয়া থাকে। এই সকল জীবাণু ঐ সকল উদ্ভিদকে বাতাস হইতে নাইট্রোজেন গ্যাস লইয়া প্রোটিন তৈয়ারী করিতে সাহায্য করে এবং উহা বৃক্ষের শরীরে খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কোন একটি শস্তের পর, বা উহার সহিত, মটরজাতীয় উদ্ভিদ রোপণ করিয়া উহার কেবল ফসল লইয়া, ডালপালা ইত্যাদি মাটির সঠিত মিশিতে দিলে, উক্ত জমি ঐ সকল উদ্ভিদ হইতে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন গ্রহণ করিয়া পরবর্তী শস্যের সহায়তা করিতে পারে। আমেরিক ও অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশের কৃষকগণ এই প্রণালীতে চাষ করিয়া বিশেষ উপকৃত হইতেছেন। আমাদের দেশেও অনেক স্থানে এইরূপ প্রণালীতে চাষ হইতেছে । এই ত গেল উপকারী প্রভাবের কথা। এক উদ্ভিদ অপর উদ্ভিদের উপর অপকারী প্রভাবও বিস্তার করিয়া থাকে । পিকারিং, বেডফোর্ড ও পিকারিং এক উদ্ভিদের উপর আর এক উদ্ভিদের অপকারিতা সম্বন্ধে অনেকগুলি পরীক্ষা করেন । তাহারা একটি পাত্রে দুইটি বৃক্ষ এরূপভাবে রোপণ করেন যে উপরের বৃক্ষটির জন্স নীচের বৃক্ষটির মাটিতে পড়িতে থাকে। ইহাতে দেখা যায় যে নীচের বৃক্ষটির বৃদ্ধির পরিমাণ হ্রাস হইয়াছে । তাহারা ডালিম, নাসপাতি, আপেল, ফুল, সরিষা, তামাক, টমাটো, যব ৪ অনেক প্রকারের তৃণ-জাতীয় উদ্ভিদ লইয়া পরীক্ষা করেন এবং প্রত্যেক বারেই দেখেন যে এক শ্রেণীর উদ্ভিদ অপর শ্রেণীর উপর অপকারী প্রভাব বিস্তার করে । প্রায়ই দেখা যায় যে ফলের গাছের নিকট কোন তৃণ-জাতীয় উদ্ভিদ জন্মাইলে, উক্ত বৃক্ষের ফলোৎপাদনের শক্তি ক্ষয় হয় এবং ঐ বৃক্ষের ছালের রং, পাতার রং এবং এমন কি ফলের রং পৰ্য্যস্ত পরিবর্তিত হইতে দেখা যায়। এই সব ফলের আকার, রং ইত্যাrি এরূপ পরিবর্তিত হয় যে বিচক্ষণ ফলোৎপাদনকারী অনেক সময় উক্ত ফলগুলিকে একেবারে নূতন জাতির ফল বলিয়া ভুল করেন। এইরূপ অনেক পরীক্ষার দ্বারা জানা গিয়াছে, যে, একীি উদ্ভিদের উপর আর একটি উদ্ভিদের উপকারী ও অপকার" দুইরূপ প্রভাবই হইয় থাকে। এখন এরূপ প্রভাবের কারণ বিবেচনা করিয়া দেখা যাক ।