পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন ভিক্ষুর বউ চলিতে লাগিল। অভিভূতের স্থায় একান্ত ভাবে পথ চলিতে লাগিল। ক্ষেতের অালের উপর ঘাসগুলি সমস্ত জলিয়া ছারখার হইয়া গিয়াছে। এক পাশে যেখানে কাদাজলের উপর নলখাগড়াগুলি হাওয়ায় তুলিত, সেখানটি একেবারে বদলাইয়া গিয়াছে। কাচা খাগড়াগুলি রোদে পুড়িয়া লাল হইয়া গিয়াছে। কাটা ধানের শুকনা গোড়াগুলি ক্ষেতের উপর উচু হইয়া রহিয়াছে। কাহারা আবার তাহাতে আগুন ধরাইয় দিয়া গিয়াছে। মাঠ দিয়া বিত্ৰ গন্ধ বাহির করিয়া বিসৰ্পিল ধোয় উঠতেছে। ভিক্ষুর বউয়ের মনে হইল মেয়েটা থাকিতে পরিবে ত! অতটুকু মেয়ে অতবড় রুগী সামলাইবার কথা নয় । হয়ত জরের ঝোকে ভিক্ষু চীৎকার করিয়া উঠিবে— জল চাহিয়া বসিবে! মেয়েটি ভয়ে কাদিয়া ফেলিবে। কিন্তু, কি করিবে, কোন উপায় নাই। আজ যেমন করিয়াই হউক তাহাকে জল আনিতে হইবে। পথে চলিতে চলিতে নবদেব ব্যাপারীর সহিত দেখা । নবদেব তাহাকে দেখিয়াই জিজ্ঞাসা করিল—কি গো ভিক্ষে কেমন আছে ? বউ সবিস্তারে তাহাকে সমস্ত ঘটনা খুলিয়া বলিল । শুনিয়া সে বলিল—বলিস নি আর বলিস নি বউ, গেরামে থেকে লাভ ত ভারী ! গত সনের ত এক পহাও আদায় লেই—এ সনহালটেই যে কিছু হবে তা ত মনে হয় না। গেরামে জল লেই, ডাক্তারখানা লেই। হাসপাতাল লেই। কি লিয়ে থাকবে ? কিন্তু দেখ, ত ঐ পাশে ইছেনপুর গ্রামটে? ইস্কুল, হাসপাতাল, নলকূপ কোনটে লেই ? নবদেব ব্যাপার কোন রকমে কথা কয়টি শেষ করিয়া আবার হন হন করিয়া চলিতে লাগিল। রোঁত্রে দাড়াইয় কথা বলিবার অবকাশ থাকিলেও সহগুণ কোথায় ? ভিক্ষুর বউ চলিতে লাগিল। না না, গ্রাম তাকে ছাড়িতেই হইবে। এ গ্রামে থাকিয়া আর কোন লাভ নাই। বহুদিন ধরিয়াই এমনি জলকষ্ট চলিতেছে। মাঝে দু-দিন বেশ জোরে একবার করিয়া বৃষ্টি হইয়া গিয়াছিল তাহাতে গ্রামের সকলের ভারি সুবিধা হইয়া গিয়াছিল। জলাতঙ্ক সংগ্ৰহ করিয়া রাখে, প্রথম এক পশলা বৃষ্টি হইয় গেলে টিনের চালাগুলি হইতে যে জল গড়াইয় পড়ে সবাই তাহা একটি কাপড়ে ছাৰ্কিয়া সেই জল পানীয় হিসাবে চলে। এমনি করিয়া সারা গ্রামে জল সংগ্রহ হয়। ভিক্ষুর বউয়ের একটা কথা বড়ই মনে ধরিল—সবঙ্গেব ব্যাপারীর কথাটা। আচ্ছা সত্যই যদি তাহারা ইছেনপুর গ্রামে চলিয়া যায় ? সেখানে ত সব রকম সুবিধা আছে যদি ভিক্ষু একটু সারিয় উঠে তাহা হইলে তাহারা সেখানে চলিয়া যাইবে । সে স্থখনের মা'র কাছে গুনিয়াছে সে ওখানকার চটকলে কাজ করে। যদি তাহাকে বলিয়া-কহিয়া একটা কাজ জোগাড় করিতে পারে ত তাঁহাদের বেশ চলিয়া যাইবে । সুখনের মা পাচ টাকা মাইনে পায় । সে কি কম কথা ? হয়ত ভিক্ষু প্রথমে বউকে কলে কাজ করিতে পাঠাইবে না, আপত্তি করিবে। মিলের আবহাওয়া নাকি বড় খারাপ। কিন্তু তার বিশ্বাস আছে সে তাকে কোন রকমে বলিয়া-কহিয়া রাজী করাইবে। সে যে চিরকালই কলে কাজ করিতে চায়—ত নয়। মাত্র কিছু দিন কাজ করিবে। তার পর ভিক্ষু সারিয়া উঠিলে সে কাজ ছাড়িয়া দিবে। তা ছাড়া শুনিয়াছে কলে কাজ করিলে অনেক সময় থাকিবার স্থানও পাওয়া যায়। তাই যদি হয় ? গ্রামে থাকিয়া ত আর কোন লাভ নাই। সকল চাষীর মুখেই এক কথা—চাষ করে আর কারুর পড়তা পোষায় না। এই সুবিশাল, দিগন্তপ্রসারী জমিগুলিতে যদি দিনের পর দিন অজস্র শ্রম এবং অর্থব্যয় করিয়া কিছুই উস্থল না-হয় ত কি হইবে ?. হঠাৎ ভিক্ষুর বউয়ের পায়ে কি একটা ফুটিয়া গেল। বাবলা-কাটা না কি ? সে আবার মুখ বিকৃত করিয়া সেটি পা হইতে টানিয়া ফেলিয়া দিয়া চলিতে লাগিল । ছেলেবেলাকার কথা তার মনে পড়িল । কত ছোট তখন তার বিবাহ হইয়াছিল। তার বাবা ছিল কৰ্ম্মকার । সে তার বাবার কামারশালায় বসিয়া থাকিত। তার বাপ জলন্ত অঙ্গার হইতে লোহা বাহির করিয়া পিটিত আর তার সহিত গল্প করিত। তাদের কামারশালা কত লোক আসিত যাইত। এক দিন হঠাৎ তার বাবা এক পুরাতন বন্ধু কোথা হইতে এক সম্বন্ধ জানিয়া হাজির