পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অলখ-ঝোরা . শ্রীশান্ত দেৰী পূৰ্ব্ব পরিচয় [ চন্দ্ৰকাপ্ত মিশ্র নয়ানজোড় গ্রামে স্ত্রী মহামায়, ভগিনী হৈমবতী ও পুত্রকষ্ঠ শিবু ও স্বধাকে লইয়া থাকেন। হুধা শিবু পূজার সময় মহামায়ার সঙ্গে মামার বাড়ী যায়। শালবনের ভিতর দিয়া লখা মাঝির গরুর গাড়ী চড়িয়া এবারেও তাহারা রতনজোড়ে দাদামহাশয় লক্ষ্মণচন্দ্র ও দিদিম৷ ভুবনেশ্বরীর নিকট গিয়াছিল। সেখানে মহামায়ার সহিত তাহার বিধবা দিদি স্বরধুনীর খুব ভাব । সুরধুনী সংসারের কত্রী কিন্তু অন্তরে বিরণি তরুণী । বাপের বর্তীতে মহামায়ার খুব আদর, অনেক আত্মীয়বন্ধু। পূজার পুর্বেই সেখানকার আনন্দ-উৎসবের মাঝখানে সুধার দিদিমা ভুবনেশ্বরীর অকস্মাৎ মৃত্যু হইল। তাহার মৃত্যুতে মহামায় ও স্বরধুনী চক্ষে অন্ধকার দেখিলেন । মহামায়। তথন অন্তঃসত্ত্ব, কিন্তু শোকের ঔদাসীষ্ঠে ও অশোঁচের নিয়ম পালনে তিনি আপনার অবস্থার কথা ভুলিয়াই গিয়াছিলেন। তাহার শরীর অত্যন্ত খারাপ হইয় পড়িল । তিনি আপন গুহে ফিরিয়া আসিলেন । १ ভুবনেশ্বরীর শ্রাদ্ধের পর মহামায় যখন ছেলেমেয়ে লইয়৷ উদাস মনে বাড়ী ফিরিয়া আসিলেন, তখন দরজার কাছে ছুটিয়া আসিয়া হৈমবতী তাহাকে দেখিয়া ত অবাক। মহামায়া মুখ নীচু করিয়া গাড়ী হইতে নামিলেন, মুখ নীচু করিয়াই ঘরে ঢুকিলেন, কাহারও দিকে এই শোককাতর মান দৃষ্টি তুলিয়া ধরিতে তিনি পারিতেছিলেন না। ফেভাষায় তিনি স্বীয় ঘরসংসারের নিকট বিদায় লইয়া গিয়াছিলেন, সেই ভাষা আজ ত মুখ হইতে বাহির হইবে না। হৈমবতী বিনাইয় বিনাইয়া কথা বলিতে পারিতেন না, সোজা গিয়া মহামায়ার হাত ধরিয়া বলিলেন, “এ কি বে, এ কি হয়ে গিয়েছ কি ? এই রকম চেহারা মানুষের হয় ?” মহামায়ার চোখ দিয়া জল ঝরিয়া পড়িল, তিনি কোনও উত্তর দিলেন না । তাহার চোখের জল দেখিয়া বিব্রত হইয়া আপনার দুৰ্ব্বলতাকে চাপা দিবার জন্য আরও শক্ত করিয়া হৈমবতী বলিলেন, “মা ত সকলেরই যায় ; আমাদেরই কি যায় নি ? তাই বলে তোমার মত দশ ত কারুর হতে দেখি নি। এস, এস, ঘরে এসে বসে জিরিয়ে নিয়ে মুখে দুটো দাও, ঘরসংসারের দিকে তাকাও । মা সতীলক্ষ্মী তোমাদের সকলকে রেখে, বাবাকে রেখে, তার কোলে মাথা দিয়ে জয়ডঙ্কা বাজিয়ে চলে গিয়েছেন, তার জন্তে মুখ কালি করে চোখের জল ফেলছ কেন? এর চেয়ে ভাল করে কি কেউ যেতে পারে ? এই দেখ না আমার দশা, ঠোঁট পরে ভাতে ভাত গিলছি ; এই বঁাচ কি বড় মুখের বঁাচ হ’ল ? কত মরণ দেখেছি, কত আরও দেখব, তিনি কিছুই দেখলেন না, তার মত পুণ্যের জোর কার আছে ? যমের মুখের কাছে কলা দেখিয়ে গিয়েছেন।” মহামায়া হৈমবতীকে চিনিতেন, তাহার এই রুক্ষ ভাষাই যে অনেক অশ্রুসজল সাস্তুনার বাণী অপেক্ষ বেশী স্নেহকোমল উৎস হইতে উৎসারিত হইতেছে তাহা তিনি জানিতেন। মনে একবার তবুও খোচা লাগিল, মা যতই ভাগ্যবতীর মত যান, তবু তিনি যে চিরদিনের মত চোখের আড়াল হইয়া গেলেন, মরজগতে র্তাহার কোনও চিহ্ন রহিল ন, ইহা কি কম দুঃখ । হৈমবতী কিন্তু মহামায়াকে সহজ না করিয়া ছাড়িতে চাহেন না। জিনিষপত্রগুলা অৰ্দ্ধেক নিজেই টানিয়া ঘরে তুলিয়া বলিলেন, “নাও, গাড়ীর কাপড়খানা ছাড় দেখি ! যা বলেছিলাম তাই ত ঘটেছে দেখছি । আমার চেখে কিছু এড়ায় না ; এমনি অবস্থায় না খেয়ে না ঘুমিয়ে শরীরের যা হাল করেছ তাতে পেটের কাটাটা বঁাচলে হয়। এত অসাবধান কেন ? টের পাও নি কিছু ?” মহামায় এতক্ষণে কথা বলিলেন, “পেয়েছি, কিন্তু আমন সময় কি মানুষের হুস থাকে ?” হৈমবতী বলিলেন, “হ’স যে পেয়াদায় থাকাবে শেষকালে ? শরীর কেমন আছে বল দেখি সত্যি করে ?” মহামায়া অগত্য বলিলেন, “ভাল আর কই আছে ?