পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b>Nరిశ్రీ জীবনের এমন পরিচয় ওদের পাবার দরকার নেই। ওদের কোথাও পাঠিয়ে দাও।” হৈমবতী তাহাই করিলেন । বাড়ীতে করুণার অনেক প্রয়োজন ছিল, তবু তিনি ভাইয়ের কথাই রাখিলেন। সন্ধ্যায় শ্রাস্ত হইয়া ছেলেমেয়েরা যখন ফিরিয়াছে, তখন নানা খেলাধূলার গল্পে মা'র কথা তাহারা ভুলিয়া গিয়াছিল। ভাত খাইয়া দুই ভাইবোনে পাশাপাশি বিছানায় গুইয়া কখন যে ঘুমাইয়া পড়িয়াছে, নিজেরাই জানিতে পারে নাই। অকস্মাৎ অতি পরিচিত কণ্ঠের তীব্র করুণ আৰ্ত্তনাদে স্বধার স্বপ্লমধুর মুখনিদ্রা আছড়িয়া-পড়া কাচের বাসনের মত যেন সরবে চুৰ্ণবিচূর্ণ হইয়া ভাঙিয়া গেল। এ কি হইল ? পৃথিবীতে এমন জিনিষের কল্পনা ত সে কখনও করে নাই । তাহার ক্ষুদ্র জীবনে মা’কেই সে সৰ্ব্বদু:খহারিণী বলিয়া জানিত; মা’ই তছিলেন সকল শোকের সান্থন, সকল বেদনার প্রলেপ ! সেই মা তাহার সকল শক্তি হারাইয়া সকল সংযম ভুলিয়া এমন করিয়া অসহায়ের মত কঁাদিয়া কাদিয়া যন্ত্রণ হইতে মুক্তিভিক্ষা করিতেছেন কাহার কাছে ? কি সে অমানুষিক ব্যথা যাহা তাহার সৰ্ব্বংসহ আনন্দরূপিণী মাকেও কাদাইতে পারে, কে সে এমন শক্তিশালী মানুষ যে এমন বেদন হইতেও মানুষকে মুক্তি দিতে পারে ? সে কি বিধাতার চেয়ে শক্তিমান ? বিস্ময়ে বেদনায় সুধার ফুলের মত পেলব নধর শরীর যেন লোহার মত কঠিন হইয়া উঠিল। সে ক্ষুদ্র দুই মুঠি শক্ত করিয়া চোখ বড় করিয়া বিছানার উপর থাড়া হইয় বসিল। মায়ের যন্ত্রণ যেন তাহার বুকে তীক্ষ বিষ-বাণের মত আসিয়া বিধিল । সুধা আর সহ করিতে পারে না। মৃত্যুবেদনাত মা’কে এমন পাগল করে নাই! শিশুকাল হইতে চোখের জল পরের নিকট হইতে লুকাইয়া রাখা তাহার অভ্যাস। কিন্তু আজ সে সে-কথা ভুলিয়া আকুল হইয়া কাদিয়া উঠিল। পিসিমা কোমরে কাপড় বাধিয়া সিপাহীর মত শক্ত হইয়া কঠিন মুখে কি কাজে ব্যস্ত ছিলেন, স্বধার ব্যাকুল কান্নার স্বরে এ ঘরে ছুটিয়া আসিলেন। দুই ঘরের মাঝের দরজাটা একটু ফাক হইয়া গেল। ওঘরের অতি উজ্জল আলো এত রাত্রে পল্লীগ্রামের অন্ধকার ঘরে প্রৰণসী SNごBNご শাণিত চুরির ফলার মত চোখের সম্মুখে কলকিয়া উঠিল। পরদ ও দরজার ফাক দিয়া অপরিচিত মানুষদের জুতা-পর পায়ের ব্যস্ত চলাচল দেখা যাইতেছে। সুধা বুঝিল এক জোড়া পুরুষের পা, এক জোড়া স্ত্রীলোকের। পুরুষটি ত ডাক্তার, কিন্তু স্ত্রীলোকটি কে ? এত জনে মিলিয়া মা’কে কি কাটাকুটি করিতেছে ? মা তাহার বাচিবেন ত ? সুধার ভাবনাকে বাধা দিয়া হৈমবতী গঞ্জীবকুরে বলিলেন, “সুধা, এত রাত্রে কান্নাকাটি করছ কেন ? মায়ের অসুখ, তুমি তার মধ্যে কেঁদে মা’কে ব্যস্ত করছ ! ছিঃ, এত বড় মেয়ে, তোমার লজ্জা করে না ?” স্বধা চুপ হইয়া গেল। হৈমবতী মাঝের দরজা বন্ধ করিয়া দিয়া অস্তহিত হইয়া গেলেন। আর কিছুই দেথা গেল না। কেবল থাকিয়া থাকিয়া মায়ের গলার একটা গোঙানির শক এখনও কানে আসিয়া সুধার বুকে একটা অস্বাভাবিক দোলা দিতে লাগিল । দু:স্বপ্নময় নিদ্রা ও অস্বস্তিকর জাগরণের মধ্য দিয়া রাত্রি কাটিয়া গেল । ভোরবেল কিন্তু সুধা নিশ্চিস্ত আরামে ঘুমাইয়। পড়িয়াছিল। সকালের রৌত্র যখন বিছানার চাদরের উপর পর্য্যস্ত আসিয়া পড়িয়াছে, তখন করুণা আসিয়া সুধাকে ডাকিয়া জাগাইল । ঘুম ভাঙিতেই কি একটা বেদনার স্মৃতি বুকের ভিতর ভারের মত চাপিয়া ধরিল, কিন্তু তাহ ঠিক যে কি সুধা মনে আনিতে পারিল না। শিবু পাশে নাই, অনেকক্ষণ উঠিয়া গিয়াছে, বাবার বিছানায় কেহ গুইয়াছিল বলিয়াই মনে হইতেছে না । সুধা বিম্মিত দৃষ্টিতে চারিদিকে তাকাইল। করুণা হাসিয়া বলিল, “ওঠ ওঠ সুধা দিদি, ছোট খোকাকে দেখবে চল ।” ছোট থোকা ? মৃধা বিস্ময়ে চোখ আরও বড় করিয়া করুণার দিকে তাকাইল । করুণা বলিল, “তোমার ভাই হয়েছে জান না ?” সত্য ? তবে ত করুণার কথাই সত্য। স্বধার কাল রাত্রের সমস্ত কথা মনে পড়িয়া গেল । মায়ের কথা মনে পড়িয়া ভাইকে তাহার আর দেখিতে ইচ্ছা করিল না । কিন্তু করুণা তাহাকে প্রায় টানিয়াই লইয়া গেল । মা খাটের উপর সাদা চাদর ঢাকা দিয়া শুইয়া আছেন । সমস্ত ঘর ঔষধের তীব্র ঝাজালো গদ্ধে ভরপুর। গন্ধ শুধু নয়, ঘরের ব্যবস্থা, জিনিষপত্র, সবই যেন কেমন নূতন ও