পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন অচেনা বলিয়া বোধ হয়। একটা নতন বিছানায়ু মা’র ডানদিকে ছোট ছোট বালিশের মধ্যে ছোট লেপ গায়ে দিয়া হাড় মাথা পুতুলের মত ছোট একটি মাহম দুই মুঠ বন্ধ করিয়া ভ্ৰ কুঁচকাষ্টয়া ঘুমাইতেছে। যে-কৰ্ম্মময়ী মাকে চিরদিন ভোর হইতে গৃহকার্য্যে ব্যস্ত দেগা অভ্যাস, দিনের আলোয় যাহাকে সে কোনও দিন শুইতে দেখে নাই, বিছানায় এমন ভাবে তাহাকে পড়িয়া থাকিতে দেখাও ত নৃতন। স্বধা শিশুর দিকে তাকাইবে না মনে করিয়াছিল ; কিন্তু অতটুকু মাত্ষ ইতিপূর্সে সে কখনও দেখে নাই। তাহার কেমন যেন কৌতুহল হইল। মাও হাসিয়া বলিলেন, “অায় না রে, দেখ, কেমন ভাই হয়েছে।” সুধা মায়ের হাসি দেগিবে আশা করে নাই । মায়ের মূখ একদিনে শণ ও সাদা হইয়া গিয়াছে। কিন্তু তবু তাঙ্গতে কি মিষ্ট হাসি । যে এত যন্ত্রণ মা’কে দিয়াছে তাঙ্গর উপর মা’র ত কোনও রাগ নাত। মা পরম স্নেহভরে ঙ্গসিয়া ছোট লেপথাম একটু সবাঙ্গয় দিলেন। মুখে আলো ও গায়ে ঠাণ্ড হাওয়া লাগিতেই চোখ মুগ্ধ আরও সঙ্কচিত করিয়৷ শিশুটি কুণ্ডলী পাকাচয় গেল। দেখিলেক্ট সমস্ত মনটা আনন্দে ও মমতায় উচ্ছসিত হইয় উঠে। স্বধ ছুটিয়া গিয়া দুই হাতে তাহার দুইটি স্বচ্ছ নরম কচি রাঙা মুঠ ধরিয়া ফেলিল। মা বলিলেন, “থাক্, থাক্, অত জোরে নয়, লাগবে যে ওর ” মা সুধার হাত দুইটা সরাইয় দিলেন । সুধার কেমন একটা অভিমান হইল, মাগে ম, এরই মধ্যে ওর উপর মা’র এত টান ! আমি যে মা’র এতকালের মেয়ে, সারা রাত্ৰি একল! শুয়ে কাদলাম, তার খোজ ত মা কষ্ট একবারও করলেন না ; আর রাক্ষুসে ছেলেটাকে একটু ছুয়েছি ব'লেই এত সাবধানতা ! মহামায়া সুধার অভিমান বুঝিতে পারিলেন, বলিলেন, “তুই আমার কাছে আয় এদিকে ; শিবু কোথায় গেল? কাল থেকে তোদের দুটিকে দেখি নি, বনে বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াস্ নে। পিসির কথা শুনে চলবি, বাবার কাছে গুবি ।" সুধা চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিল। মহামায়া বুঝিলেন, বলিলেন, “মাও যা বাবাওঁ তাই ; ছোট ভাই মা'র কাছে থাকল, তোমরা না-হয় বাবার কাছে রইলে।” স্বধা মুখে وفساس ہ ھ অলখ-বেণরণ مربع میوه কিছু বলিল না, কিন্তু দুই হাত কঠিন করিয়া মায়ের বাহু চাপিয়া ধরিল, যেন নীরবে মাকে ভৎসনা করিতেছে, “তুমি আমাদের ভালবাস না, তাই মিথ্যে বোঝাচ্ছ ” স্বধার দুই চোখে জল আসিয়া পড়িল । দরজার পরদাটা ঠেলিয়া শিবু ঘরে ঢুকিয় একেবারে এক লাফে মায়ের খাটে উঠিয়া পড়িল। মহামায়া “কি করিস্, কি করিসূ” বলিতে না বলিতে সে খোকাকে ঠেলিয়া দুই হাতে মা’র গলা জড়াইয়া চুম্বনে মুখ ভরিয়া দিয়া বলিল, “তুমি ত আমার মা।” মহামায়া হাসিয়া বলিলেন, “সত্যিই ত।” শিবু বলিল, “ও পিসিমার কাছে শোবে। ওকে নামিয়ে দাও থাটি থেকে ৷” br শীতের দিনে একটা বেতের দোলার ভিতর অয়েল ক্লথ ও কাথা পাতিয়া নূতন খোকাকে বারাণ্ডার রৌদ্রে বাহির করিয়া দেওয়া হইয়াছে । সকালবেলা বারাণ্ডার থামের মাঝে মাঝে খিলানের ভিতর দিয়া কিউবিষ্ট চিত্রকরের ছবির মত বাক বাকা রোদের টুকরা আসিয়া পড়িয়াছে। একটা টুকরাতে থোকার দোল, আর একটা টুকরাতে দড়ির থাটিয়ায় মহামায়া শুইয়া, পাশে একটা ছোট বেতের মোড়া লইয়। চন্দ্রকান্ত বসিয়া আছেন। হৈমবতী কাছে নাই দেখিয়া মহামায়া স্বামীর একথানা হাত নিজের হাতের ভিতর টানিয়া লইয়া বলিলেন, “পাচ মাস ত কবে হয়ে গেল, আমি কি আর উঠব না ? তোমার ডাক্তারের কথা কই ফল ?” চন্দ্রকান্ত স্ত্রীর শীর্ণ হাতের উপর হাত বুলাইয়া বলিলেন, “সব সময় কি মানুষের কথা মত শরীর চলে ? এবার তোমার শরীর দুর্বল ছিল, তাই সারতে দেরি হচ্ছে। কিন্তু তার জন্যে অকারণ দুর্ভাবনা না করে মনে করছি একজন বড় ডাক্তারকে একবার এখানে নিয়ে আসব।” মহামায়া ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “না, না, অমন করে টাকার শ্রাদ্ধ করতে হবে না । একটা ডাক্তারকে এখানে আনতে যা খরচ হবে তাতে আমাদের সকলের কলকাতা যাওয়া হয়ে যাবে। অনেক ভাল চিকিৎসাও হতে পারবে ।” চন্দ্রকান্ত হাসিয়া বলিলেন, “কলকাতা গেলে টাকার সাশ্রয় কিছু হবে না, বাড়ীভাড়া চাকর-বাকর সবই বেণী